সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস জেনে নিন
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আবারো নতুন একটি আর্টিকেল নিয়ে চলে আসলাম আপনাদের মাঝে। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে Chapter #3 তে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে। তাহলে, চলুন আর সময় নষ্ট না করে মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করি,
বর্তমান সময়ের আলোচিত ও সমালোচিত একটি বিষয় হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব সফল ফ্রিল্যান্সার কিভাবে হবেন এই বিষয়ে। আশাকরি আজকের আর্টিকেলটি আপনি যদি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনি দ্রুতই সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার টিপস গুলো আয়ত্ব করতে পারবেন।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে করণীয় কি? এটিই নবাগত ফ্রিল্যান্সারদের মনে তৈরি হওয়া কমন একটি প্রশ্ন। আসুন জেনে নেই, বাস্তব জীবনে আমরা সরকারি বা বেসরকারি যেকোন চাকরি করতে গেলে কর্তৃপক্ষকে আমাদের দীর্ঘদিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির ঐ সেক্টরে পূর্ব
অভিজ্ঞতা, শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সক্ষমতার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়ে থাকি। তবেই আমরা ঐ চাকরির উপযুক্ত হিসেবে গণ্য হই। ঠিক তেমনি আপনি যখন ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্তপেশাকে আপনার উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিবেন, তখন আপনাকে নির্দিষ্ট কোন সেক্টরে নূন্যতম দু'য়েক বছর প্রশিক্ষণ, প্র্যাকটিস এবং রিসার্চ অবশ্যই করতে হবে।
সেই সাথে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে হবে। আপনি যে সেক্টরে কাজ করবেন সে সেক্টর নিয়ে যদি আপনি রিসার্চ না করেন কিংবা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে না পারেন, তবে এটা জেনে রাখুন যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কখনোই সফল হতে পারবেন না।
বর্তমান ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলো অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে যে কতটুকু প্রতিযোগিতামূলক তা আপনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করে মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করলেই বুঝতে পারবেন। তবে আপনি যদি এ সেক্টরে দু'য়েক বছর ধৈর্য্যসহকারে সময় দিতে পারেন এবং যে সেক্টরে কাজ করবেন ঐ সেক্টরে একদম প্রফেশনাল হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে আপনার আশাকেও ছাপিয়ে যেতে পারবেন।
তার কারন, অন্য সবাই ফ্রিল্যান্সিং এর সুযোগ সুবিধা আর অর্থ চিন্তা মাথায় এনে হুমড়ি খেয়ে ফ্রিল্যান্সিং আসে ঠিকই কিন্তু কাজে অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা আর তাদের ক্লায়েন্টকে কথায় কাজে সন্তুষ্ট করতে না পারার কারনে আস্তে আস্তে এ সেক্টর থেকে ঝরে পড়ে। তাই আপনি যদি সত্যিকার অর্থে একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চান, তবে আপনাকে বেশ কিছু কার্যকরী দিক নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। আশা করি, আপনি সেই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করবেন।
প্রথমে আপনি কোন সেক্টরে কাজ করবেন, তা স্থির করুন। যদিও কম বেশি সব ক্যাটাগরিতে তুলনামূলক প্রতিযোগিতা আছে । নিজেকে প্রশ্ন করুন, কোন সেক্টরে আপনার আগ্রহ বেশি বা কোন সেক্টরে আপনি আপনার সেরাটা দিতে পারবেন? যেমন ধরুন, Web Design & Development, Programming & Tech, Video & Animation, Digital Marketing, Writing & Translation, Music & Audio, Graphic Design, Data Entry. এগুলোর যে কোনটিতে আপনি চাইলে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। তবে আপনাকে সাজেস্ট করব Web design & development.
কারন অনলাইনে যতগুলো কাজ পাওয়া যায় তার প্রায় ৭০ থেকে ৮০% কাজ এ সেক্টরের। এ সেক্টরে বিভিন্ন সুবিধাও রয়েছে। যেমন অন্যান্য সেক্টর থেকে এ সেক্টরে প্রতিযোগিতা কম, সহজে কাজ পাওয়া যায়, অর্থও বেশি । প্রতি মাসে কম করে হলেও ৭০০ থেকে ১০০০ ডলার অনায়াসে উপার্জন করা যায়। তবে একটা কথা জেনে রাখা ভাল, এ সেক্টরে কাজ করতে হলে সৃজনশীলতা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গাণিতিক সমস্যা এবং ফাংশনাল টার্মসের সমাধান করতে হয়।
সেক্ষেত্রে যদি আপনি এ বিষয়ে পিছিয়ে থাকেন তবে আপনাকে অন্য একটি সেক্টরে চেষ্টা করাই ভাল। বৃথা চেষ্টা করে সময় নষ্ট না করাই শ্রেয়। মূলকথা, যে সেক্টরে প্রতিযোগিতা কম, চাহিদা বেশি- ঐ সেক্টরটাই নির্বাচন করবেন। নিজেকে বিচার করে কাজের সেক্টর নির্বাচন করার মধ্যেও সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়াটা অনেকাংশে নির্ভর করে । বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছে মানসম্মত প্রফেশনাল মানের কাজ শিখুন । কারন বায়ার বা ক্লায়েন্ট আপনার কাজের কোয়ালিটি দেখে আপনাকে বিচার করবে।
সেটা আপনি অনলাইন কিংবা অফলাইন যেকোনো ভাবে শিখতে পারেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন কাজ শিখার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। কেউ আপনাকে শতভাগ কাজ শেখাবে না । তাই ক্লাসের পাশাপাশি আপনি ইউটিউব কিংবা অন্যান্য সোশ্যাল প্লাটফর্মেও কাজ সম্পর্কে রিসার্চ করবেন। এতে আপনার অভিজ্ঞতা ও বাড়বে। কোর্স শেষ হলে আপনি ভালোভাবে কোর্সটি দুয়েক বার রিভিশন দিবেন ।
এতে করে আপনার দক্ষতা বাড়বে। প্রতিদিন কমপক্ষে চার ঘণ্টা আপনার কাজের পিছনে সময় দিবেন। দুই ঘণ্টা ক্লাশ করেন, বাকি দুই ঘণ্টা আপনি নিজে প্র্যাকটিস করেন। বাকি সময়টুকু আপনার অন্যান্য কাজে ব্যয় করুন। সময়কে কাজে লাগাতে শিখুন । কোর্স শেষ, রিভিশন দেওয়াও শেষ। এখন কি আপনি মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করবেন? একদম না। আপনি যেটা করবেন, আপনার কোন সিনিয়রের সাথে সহযোগী হিসেবে কমপক্ষে দশ পনেরটা প্রজেক্টে কাজ করুন।
যেটা মার্কেটপ্লেসের টপ রেটেড সেলার বা লেভেল টু সেলাররা প্রতিনিয়িত করে থাকে। তাদের একদিনে অর্ডার আসল বিশ পঁচিশটা। এখন এতগুলো অর্ডার তো একজনের পক্ষে কমপ্লিট করা সম্ভব না। তাই তারা বিভিন্ন গ্রুপ হয়ে কাজ করে। খোঁজ নিয়ে এদের সাথে যুক্ত হউন। যদি আপনি সিনিয়র কারো সাথে অথবা কোন গ্রুপে রিয়েল প্রজেক্টে কাজ করার জন্য যুক্ত হতে না পারেন সেক্ষেত্রে আপনি আগে লোকাল কাজ করতে পারেন।
মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করার আগে এরকম রিয়েল প্রজেক্টে কাজ করলে কাজ এবং মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে আপনার ভালো আইডিয়া হবে। আপনার কাজের কোয়ালিটি ভালো হবে, খুব সহজেই আপনি বায়ার ও অর্ডার ধরে রাখতে পারবেন। রিয়েল প্রজেক্টে কাজ করার পর আপনি মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করতে পারেন। সব কাজের নির্দিষ্ট কিছু ধারা আছে। যা ধাপে ধাপে সঠিকভাবে পালন করতে পারলে কাজটা সুন্দর হয়, ঐ কাজে সফলতা আসে।
ফ্রিল্যান্সারদের যোগ্যতা এবং উপকরণ
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হতে সর্ব প্রথম যা প্রয়োজন তা হচ্ছে তার মধ্যে কাজ করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। কারণ আপনি এ সেক্টরে যদি সফল হওয়ার মত ইচ্ছা বা আগ্রহ সৃষ্টি করতে না পারেন, তবে আপনার ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকে ফ্রিল্যান্সিং এর সুযোগ সুবিধা আর অর্থ আয়ের কথা মাথায় এনে এখানে আসলেও যথেষ্ট ধৈর্য, সময়, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে মাত্র দু'য়েক বছরের মধ্যে ঝরে পড়ে। এজন্যে, একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি ।
এরপরে সফল একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম হল ইংরেজিতে দক্ষ হওয়া । অনেক বায়ার আছে যারা স্পষ্ট কাজের দিক নির্দেশনা দেওয়ার পরেও সেলার ইংরেজি ভালোভাবে না বুঝার ফলে বায়ার এবং সেলারের মাঝে মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং শুরু হয়ে যায়। ফলস্বরুপ অর্ডার ক্যান্সেল, নেগেটিভ ফিডব্যাক । তাই চেষ্টা করবেন, ইংরেজিতে ভালো করার জন্যে । কাজই মানুষের যোগ্যতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
তাই কাজের উপর খুবই দক্ষ হতে হবে। আপনি যেহেতু প্রতিনিয়ত অনলাইনে কাজ করবেন, তাই আপনার প্রয়োজন হবে আনলিমিটেড ইন্টারনেট কানেকশনের। কেননা লিমিটেড ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে আপনি কিছু শিখতে পারবেন না। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে রিয়েল আইপিসহ একটি ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিয়ে নিবেন। তবে যদি আপনার এলাকায় এরকম কোন সার্ভিস না থাকে, তাহলে আপনি মডেম অথবা মোবাইল দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। কাজে গতি আনতে এবং স্মুথলি কাজ করতে ভালো একটি ডিভাইস খুবই জরুরি। যেটা আপনার সাধ্য অনুযায়ী হলেও চলবে।
শুরুতে যোগ্যতা, দক্ষতা এবং বিভিন্ন উপকরণে ঘাটতি থাকতে পারে। এটা স্বাভাবিক । অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং সাহসিকতা নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই সফল একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া সম্ভব।
শেষ কথা:
প্রিয় পাঠকগণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার যায় সেই বিষয়ে। আপনি যদি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে, আপনি এই বিষয়ে অবগত হয়েছেন। পরবর্তী আর্টিকেলে পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি,। সবা ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ।
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url