ফ্রিল্যান্সিং কি ? কিভাবে কাজ শুরু করবেন

আপনি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আগ্রহী.? আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলটি এর মধ্যে আমরা ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে কাজ শুরু করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

ফ্রিল্যান্সিং কি

ফ্রিল্যান্সিং..! এই নামটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই একটু হলেও পরিচিত। ফ্রিল্যান্সিং শব্দের অর্থ হচ্ছে মুক্ত পেশা। এক কথায় নিজের ইচ্ছে মত কাজ করাকেই ফ্রিল্যান্সিং বলে। 

ফ্রিল্যান্সিং কি

ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং, আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগে মানুষের জীবনে প্রথম বিজ্ঞান চেতনার আলোক শিখা জ্বলে উঠেছিল। সে সময় থেকে মানুষের কৌতূহল, জানার আগ্রহ এবং গড়ে তোলার অদম্য ইচ্ছাই বিজ্ঞানকে একটু একটু বদলে দিয়ে আজকের আধুনিক সভ্যতার সৃষ্টি করেছে। আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে । মানুষের জীবন এখন পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর। 

জন্ম থেকে শুরু করে চাকরি জীবন পেরিয়ে অবসর জীবন পর্যন্ত পুরো অবদানটাই এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। জীবনের সব পর্যায়ে এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া। চাকরির ক্ষেত্রে মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কায়িক শ্রমের পরিবর্তে বুদ্ধি ভিত্তিক শ্রম দিয়ে অনেক সাবলীলভাবে বহুগুণে আয় উপার্জন করছে। যার অন্যতম একটি উদাহরণ হল ফ্রিল্যান্সিং । বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে শিক্ষিত বেকার এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে আশার আলো ফ্রিল্যান্সিং । 

সময়, চাহিদা, সুযোগ সুবিধা ও কাজের স্বাধীনতার কারনে বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশের অধিকাংশ তরুণ প্রজন্ম দিন দিন ফ্রিল্যান্সিংয়ে ঝুঁকে পড়ছে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিশদ এবং সঠিক ধারণা রাখা খুবই জরুরি। 

ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর অর্থ হল স্বাধীন বা মুক্তপেশা। অর্থাৎ কেউ যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ অথবা বিদেশের কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে অস্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থের বিনিময়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের কোন কাজ করে, তবে তাকে ফিল্যান্সিং বলে। 

এ ধরনের পেশাজীবীকে স্বাধীন পেশাজীবী বলে। এরা স্বনির্ভর (Self-employed)। ফ্রিল্যান্সাররা হল আমাদের দেশের অর্থনীতির নীরব সৈনিক। এরা কাজের উপর খুব বেশি দক্ষ এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। এরা নির্দিষ্ট শর্ত বা চুক্তির উপর নির্ভর করে ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিয়ে থাকে। 

ফ্রিল্যান্সারদের মাসিক আয় নির্দিষ্ট নয়। কাজ পাওয়া কিংবা না পাওয়ার উপর নির্ভর করে এদের মাসিক আয় কম বেশি হয়ে থাকে। 

ফ্রিল্যান্সিং এ বাংলাদেশ

তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে বৈশ্বিক ডিজিটালাইজেশন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুবাদে দেশ দ্রুত এগিয়ে গেলেও চাকরির বাজারের অবস্থা বেশ শোচনীয়। দেশের প্রায় ৫৭ শতাংশ উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকার। চাকরির অপর্যাপ্ততা; বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাব সহ নানা কারণে দেশে বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। 

এক্ষেত্রে দেশে বেকারত্ব দূরীকরণসহ বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ডিজিটাল আউটসোর্সিংয়ে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠছে এখন বাংলাদেশ। বৈশ্বিক এ খাতে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন এবং বছরে ৫০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আনছেন। 

২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতের আয় ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আইটি সেক্টর মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বছরে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছে। ২০১১ সালে দেশে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। ২০১৩ সালে তা বেড়ে ৩০ হাজারে দাঁড়ায়।

ডিজিটালাইজেশন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে ২০১৭ সালে তা ৫ লাখে দাঁড়ায়। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী অনলাইন শ্রমিক সরবরাহে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভারত। বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সার শ্রমিকের ২৪ শতাংশই ভারতের, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার বিশ্বের ১৬ শতাংশ। 

তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সার ১২ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বের টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সারদের ৬৪ শতাংশই বাংলাদেশের। একেক দেশ একেক ধরনের আউটসোর্সিং কাজে গুরুত্ব দিচ্ছে। যেমন ভারতের ফ্রিল্যান্সাররা প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে বেশি কাজ করছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ সেবায় এগিয়ে 

আউটসোর্সিং

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন তাদের কাজগুলো দেশ বা বিদেশের বিশেষ কোন দক্ষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ তৃতীয় কোনো পক্ষের মাধ্যমে করিয়ে নেয় তখন তাকে আউটসোর্সিং (Outsourcing) বলে। 

Outsourcing শব্দটি ইংরেজি Out Resourcing শব্দ থেকে এসেছে। Out বাইরের, Sourcing উৎস । উদাহরণস্বরূপ, ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি তাদের কোম্পানির প্রচারের জন্য একটি ওয়েবসাইট, ওয়েবসাইট এসইও, একটি ইউনিক লগো, ফ্লায়ার, বিজনেস কার্ড, রোল-আপ ব্যানার কিংবা প্রোডাক্ট মার্কেটিং ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ল । 

এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বা সদস্যদের এসব কাজে সময় স্বল্পতা, কাজে অনভিজ্ঞতা কিংবা আদৌও না জানার ফলে তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্য বা সাপোর্ট আবশ্যক হয়ে পড়ে। কারণ এসব কাজ অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও প্রফেশনাল মানের হওয়া চাই। 

সেক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দেশ বা বিদেশের বিশেষ কোন দক্ষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট চুক্তি ও অর্থের বিনিময়ে কাজগুলো করিয়ে নেয়। এটাই হলো আউটসোর্সিং। মূল কথা হল, যারা কাজ করিয়ে নেয় তারা হল ক্লাইন্ট বা বায়ার, আর যারা কাজ করে দেয় তারা হল ফ্রিল্যান্সার। 

অনলাইন ইনকাম

আমরা প্রায়ই একটা বিষয় ঘোলাটে করে ফেলি। সেটা হল কোনটা ফ্রিল্যান্সিং, কোনটা আউটসোর্সিং আর কোনটা অনলাইন ইনকাম সেটা ঠিক মত বুঝি না। যেমন ধরুন আপনার অনেক বন্ধু ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা ইনস্টাগ্রামের মত সোশ্যাল মিডিয়াতে কাজ করে ইনকাম করে, তখন সেটা শুধু অনলাইন ইনকাম। সেটা ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আউটসোর্সিং কোনটাতে পড়ে না । 

শেষ কথা

ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে কাজ শুরু করবেন এই নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী আর্টিকেলে আমরা ফ্রিল্যান্সিং এর আরো একটি নতুন পার্ট নিয়ে আলোচনা করব। পরবর্তী আর্টিকেলে পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url