সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত? সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ গাইড

সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত বা সাজেক উপত্যকা কোথায় অবস্থিত আপনি কি তা জানতে চান তাহলে, আমাদের আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন। আজকের পোস্টে আমরা আপনাদের জানাব সাজেক ভ্যালি বা উপত্যকা কোন জেলায় অবস্থিত এবং সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিস্তারিত তথ্য সহ।

সাজেক ভ্যালি

সাজেক যাওয়ার পথে, আপনি সম্পূর্ণ ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে করতে যেতে পারবেন। পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য, আঁকা-বাঁকা রাস্তা, পাশের সবুজ গাছপালার সৌন্দর্য আপনার মন কেড়ে নেবে। তাহলে, চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত এবং সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কেমন হবে সেই বিষয়ে।

পোস্ট সূচিপত্র:

সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হচ্ছে সাজেক ভ্যালি। সাজেক ভ্যালি রাঙামাটির ছাদ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের পাহাড় প্রেমি পর্যটকদের তালিকায় সাজেক থাকবে সবার উপরে। এখানকার পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। আপনি যদি সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত এবং সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ টিপস জানতে চান তাহলে সম্পুর্ন পোস্টটি মনযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

সাজেক একটি ইউনিয়ন। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত এই ইউনিয়ন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। সাজেক ভ্যালি সাজেক ইউনিয়নের সর্ব উত্তরে অবস্থিত। এমনকি এই জায়গায়টি সমগ্র রাঙ্গামাটি জেলারই সবচেয়ে উত্তরের স্থান। সাজেক ভ্যালিতে রয়েছে দুটি গ্রাম একটি হচ্ছে রুইলুই পাড়া এবং অন্যটি হচ্ছে কংলাক পাড়া। রুইলুই পাড়া সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

এই গ্রামটি ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সাজেক ভ্যালির আরেক পাড়া কংলাক যেটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা জাতি বসবাস করে। সাজেক নামটি এসেছে একটি নদীর নাম থেকে। মূলত কর্ণফুলীর একটি উপনদী সাজেক থেকে এই নামটি এসেছে। মেঘ, পাহাড় ও সবুজের এক অপূর্ব মিশ্রণ হচ্ছে সাজেক ভ্যালি। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখানে অসাধারণ সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়।

সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত

প্রিয় পাঠক, এখন আমরা জানব সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত এই বিষয়ে। সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার উত্তরে মিজোরাম সিমান্তে অবস্থিত। মূলত কর্ণফুলী থেকে উৎপন্ন সাজেক উপনদীর নামানুসারে এই সাজেক ভ্যালির নামকরণ করা হয়েছে। সাজেক রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন, যা বাংলাদেশের মধ্যে বৃহত্তম ইউনিয়ন এবং এর মোট আয়তন হচ্ছে ৭০০ বর্গ মাইল।

সাজেকের পশ্চিম দিকে রয়েছে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা, দক্ষিণ দিকে রাঙামাটি জেলার লংগাডু উপজেলা, পূর্ব দিকে ত্রিপুরা এবং উত্তর দিকে ভারতের মিজোরাম অবস্থিত। খাগড়াছড়ি সদর থেকে সাজেক উপত্যকার দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার, দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার এবং বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সাজেক ভ্যালি মূলত মেঘ, পাহাড়, আঁকা-বাঁকা রাস্তা, পথে সবুজ গাছপালা ও ছোট ছোট জঙ্গল এই গুলোর জন্যই এত বিখ্যাত। বর্তমান সময়ে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

সাজেক যাওয়ার পথে যেসব চোখে পড়বে

সাজেক ভ্যালি দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত হলেও প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসে এখানে। পাহাড় ও মেঘের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে উঠে পর্যটকরা। সাজেক উপত্যকা সবার কাছে পাহাড়ের রাণী ও রাঙামাটির ছাদ নামে পরিচিত। মূলত খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক যেতে হয়। সাজেক ভ্রমণের সময় দশম বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প চোখে পড়বে।

মূলত এই আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়েই সাজেক উপত্যকায় যেতে হয়। তারপর আরো কিছুদূর গেলেই দেখবেন টাইগার টিলা আর্মি ক্যাম্প ও মাচালং বাজার। মাচালং বাজার পার হতেই দেখতে পাবেন সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া, যার অবস্থান সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৭২০ ফুট উচ্চতায়। এই গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে। রুইলুই গ্রামের প্রধান জনগোষ্ঠী হচ্ছে লুসাই,

এছাড়াও এখানে পাঙ্কুয়া, ত্রিপুরা ও চাকমাদের বসবাস রয়েছে। রুইলুই পাড়ার প্রধান হচ্ছে লাল থাঙ্গা লুসাই। রুইলুই পাড়া থেকে সাজেক উপত্যকা খুব কাছে। সাজেক বিজিবি আর্মি ক্যাম্প হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্যাম্প। মূলত সাজেক ভ্রমণের সময় এই ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হয়। এছাড়াও সাজেক উপত্যকায় রয়েছে হেলিপ্যাড।

সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য


সাজেক-ভ্যালির-সৌন্দর্য
সাজেক-ভ্যালির-সৌন্দর্য
সাজেক-ভ্যালির-সৌন্দর্য
সাজেক-ভ্যালির-সৌন্দর্য
সাজেক-ভ্যালির-সৌন্দর্য
সাজেক-ভ্যালির-সৌন্দর্য
সাজেক-ভ্যালির-সৌন্দর্য

সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ

প্রিয় পাঠক, এখন আমরা জানব সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণের তালিকায় সাজেক রয়েছে সবার উপরে। কেন সাজেক সবার এত প্রিয়, কি এমন আছে সাজেকে, যার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তাহলে, চলুন শুরু করা যাক...

সাজেক ভ্যালি হচ্ছে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন যা আমরা ইতিমধ্যে আপনাদের জানিয়েছি। দূ্র্গম এই পাহাড়ি এলাকাটি লোকমুখে খুবই জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তা অর্জন করার পিছনে রয়েছে সাজেকের পাঁচটি দর্শনীয় স্থান। এই পাঁচটি দর্শনীয় স্থান আপনার ভ্রমণের আনন্দকে আরো দ্বিগুন করে তুলবে। আপনি যদি সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে যেতে চান তাহলে এই পাঁচটি দর্শনীয় স্থান অবশ্যই অবশ্যই ঘুরে আসবেন। না হলে আপনি সম্পূর্ণ ভ্রমণের আনন্দটাই মিস করে যাবেন।

সাজেক ভ্যালির পাঁচটি দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, কংলাক পাহাড়। কংলাক পাহাড়কে অনেকেই সাজেকের পিক পয়েন্ট ও বলে থাকে। সাজেকের সবচেয়ে উঁচু স্থান হচ্ছে এই কংলাক পাহাড়। আপনি যদি ভ্রমণের আনন্দটা উপভোগ করতে চান

তাহলে, অবশ্যই আপনাকে এই কংলাক পাহাড়ে উঠতেই হবে। এই পাহাড়ে উঠার বিশেষ কারণ হচ্ছে এই পাহাড় উঠলে আপনি খুব কাজ থেকে মেঘ দেখার আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন এবং এই পাহাড় থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত খুব সুন্দর করেই দেখা যায় যেটা আপনার ভ্রমণের আনন্দকে আরো মজাদার করে তুলবে।

সাজেক উপত্যকার দ্বিতীয় দর্শনীয় স্থান হচ্ছে কংলাক পাড়া, যেখানে গিয়ে আপনারা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। তৃতীয় দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে রয়েছে হটিকালচার পার্ক, যেটা কিনা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে অবস্থিত। এই পার্কটি ঘুরে দেখেও আপনারা সাজেক ভ্রমণের আনন্দ নিতে পারবেন।

সাজেক ভ্যালির চতুর্থ দর্শনীয় স্থান হচ্ছে, ঝুলন্ত ব্রীজ। এই ঝুলন্ত ব্রীজটি হচ্ছে সাজেক ভ্যালির একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সাজেক ভ্রমণের সময় অবশ্যই এই ঝুলন্ত ব্রীজে একবার হলেও ঘুরে আসবেন এবং সেখানে গিয়ে আপনি ভ্রমণের এক অন্যরকম অনুভুতি অনুভব করতে পারবেন। সাজেকের পঞ্চম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে, আলুটিলা পর্যটন পার্ক। আলুটিলা পার্ক থেকে আপনারা পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য খুব সহজেই উপভোগ করতে পারবেন।

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টে শেয়ার করা এই পাঁচটি দর্শনীয় স্থান অবশ্যই অবশ্যই ঘুরে আসবেন, না হলে আপনি ভ্রমণের সম্পূর্ণ আনন্দটা কিন্তু মিস করে যাবেন।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ গাইড

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করার চিন্তা করে থাকেন তাহলে আপনাকে এইগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে না হলে আপনি বিপাকে পড়তে পারেন।

১. সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই কল করে কিংবা অনলাইনে হোটেল বুকিং করে রাখবেন। কেননা অতিরিক্ত পর্যটন এর কারণে অনেক সময় হোটেল পাওয়া যায় না।

২. ছুটির দিনে সাজেক ভ্যালিতে প্রচন্ড ভীড় হয়, তাই যদি কেউ নির্জনতা পছন্দ করেন তাহলে, ছুটির দিনে না যাওয়ায় ভাল।

৩. সাজেক যাওয়ার সময় বিজিবি ( বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) থেকে অনুমতি নিতে হবে।

৪. সাজেক একটি দূর্গম পাহাড়ী এলাকা এবং সেখানে কোনো বিদ্যুৎ নেই। তাই সাজেক ভ্রমণের সময় নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অবশ্যই সাথে করে নিয়ে যাবেন যেমন, ওষুধপত্র, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদি।

৫. সাজেক ভ্যালির পথগুলো অনেক আঁকাবাঁকা এবং খাড়া। তাই, যদি কেউ বাইক নিয়ে ট্যুরে যেতে চান তাহলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে বাইক রাইড করবেন।

৬. যাওয়ার পথে কিছু হালকা নাস্তা বা Snacks নিয়ে যাবেন। তাছাড়া সাথে করে পানির বোতল অবশ্যই নিবেন। কেননা সাজেক দূর্গম পাহাড়ী এলাকা হওয়ায় সেখানে পানির তীব্র সংকট রয়েছে।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের পোস্টে আমরা আপনাদের জানিয়েছি সাজেক ভ্যালি কোন জেলায় অবস্থিত এবং সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য সম্পর্কে। এছাড়াও আপনাদের সাথে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের কিছু গাইডলাইন শেয়ার করেছি। আজকের পোস্টটি আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আপনি সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য ও সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

আজকের পোস্টটি আপনার কাছে কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের বা বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। পরবর্তী পোস্ট পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের পোস্টটি এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর, নতুন নতুন তথ্য ও ভ্রমণ গাইডলাইন পেতে আমাদের ওয়েব সাইট ভিজিট করবেন ধন্যবাদ ❤️।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url