ফরজ গোসল কখন করতে হয় - ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া

ফরজ গোসল কখন করতে হয়? ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া জানতে চান তাহলে আপনাক আর্টিকেলেটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন। কেননা আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা ফরজ গোসলের নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

ফরজ গোসল কখন করতে হয়

পেজ সূচিপত্র: ফরজ গোসল কখন করতে হয় - ফরজ গোসলের নিয়ম

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আজকের পাঠে আমরা ফরজ গোসল সম্পর্কে জানব।আপনি কি জানেন? কখন একজন মুমিন মুসলমানের উপর ফরজ গোসল করা হয়? ফরজ গোসল মানে স্ত্রী -সঙ্গম ,স্বপ্নদোষ , ঋতুস্রাব  ,প্রসব এবং প্রস্রাবের সময় গায়ে প্রস্রাব লাগা ইত্যাদির কারণে আমাদের শরীর নাপাক হয়। এই নাপাকি দূর করার জন্য আমাদের উপর গোসল ফরজ হয় এটিই হচ্ছে আমাদের জন্য ফরজ গোসল। অর্থাৎ মনে মনে এই চিন্তা করবেন যে নাপাকি দূর করার জন্য গোসল করেছি। এরপর আপনার লজ্জাস্থানে লেগে থাকা নাপাকি প্রথমে দূয়ে নিবেন। তারপর দুইহাত কব্জি দূয়বেন।

ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া

ইসলামের পরিভাষায় , ফরজ নিয়ম হল সমস্ত দেহ ধৌত করার মাধ্যমে পূর্ণ পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। ইসলামের বিভিন্ন ইবাদতের ক্ষেত্রে পূর্বশর্ত হচ্ছে ফরজ গোসল। সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষ যৌনসঙ্গম , বীর্যপাত , স্বপ্নদোষ , ঋতুস্রাব , প্রসব এবং প্রস্রাবের সময় অসাবধানতা , সন্তান প্রসবের সময় এবং মৃত্যুর পর ফরজ গোসল করা ফরজ।

▶▶ আরো পড়ুন: ১২ মাসের নামাজের পূর্নাঙ্গ সময়সূচি ২০২৪

প্রিয় পাঠক এছাড়াও আর অনেক ক্ষেত্র আছে যেগুলোতে গোসল করা ফরজ।  সেগুলো হল শুক্রবার জুমার নামাজের পূর্বে , ঈদের নামাজের পূর্বে , হজ্জের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পূর্বে , অজ্ঞান হওয়ার পর সচেতন হলে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে গোসল করা মোস্তাহাব। 

ইসলামের দৃষ্টিতে গোসলের পানি

  • বৃষ্টির পানি
  • কূয়ার পানি
  • ঝর্ণা, সাগর বা নদীর পানি
  • বরফ গলা পানি
  • বড় পুকুর বা টেঙ্কের পানি

যেসব পানি দিয়ে গোসল করা জায়েজ না

  • অপরিচ্ছন্ন বা অপবিত্র পানি
  • ফল বা গাছ নিসৃতঃ পানি
  • পানির মধ্যে কোন কিছু মিশানোর কারণে যে বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ       এবং গারত্ব পরিবর্তিত হয়েছে।
  • পানির পরিমাণ অল্প : যাতে অপবিত্র জিনিস মিশে গেছে (যেমনঃ মূত্র, রক্ত, মল বা মদ)।
  • অযু বা গোসলের পানি
  • অপবিত্র তথা হারাম প্রাণী, যেমনঃ শূকর, কুকুর ও আন্যান্য হিংস্র প্রাণীর পানকৃত আবশিষ্ট পানি।

ফরজ গোসলের নিয়ম

নিম্নে ফরজ গোসলের নিয়ম দেওয়া হলো –

* গোসলের দোয়া পড়া

(أنا أستحم للتخلص من الجنابة.)

উচ্চারণঃ নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি। অর্থঃ আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।

▶▶ আরো পড়ুন: আওয়াবিন নামাজের নিয়ত, নিয়ম এবং সময়সূচী সম্পর্কে বিস্তারিত

* গোসলের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ, বলে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধৌত করা।

* এরপর শরীরের কোন জায়গায় অপবিত্র বস্তু থাকলে পরিষ্কার করা।

* অজু করা। গড়গড়া কুলি করা, রোজাদার হলে গড়গড়া করা যাবে না। তিনবার কুলি করা সুন্নত

* তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা।

* অজুর করার পর মাথায় এমনভাবে পানি ঢালা যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়।

* ডান কাঁধে পরে বাম কাঁধে পানি ঢেলে সমস্ত শরীর ধৌত করা, যেন শরীরের কোন অংশ শুকনো না থাকা।

* সর্বশেষে পা ধুয়া।

* অতঃপর সারা শরীর কোন কাপড় বা গামছা দিয়ে মুছে শুকনো কাপড় পড়া।

পবিত্রতা তথা গোসল সম্পর্কে আল কোরআন

إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা : ২২২)

فِیۡهِ رجَالٌ یُّحِبُّوۡنَ اَنۡ یَّتَطَهَّرُوۡا وَ اللّهُ یُحِبُّ الۡمُطَّهِّرِیۡن 

‘সেথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (আল কুরআন ৯:১০৮)।

ফরজ গোসল সম্পর্কে হাদিস

আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং যারা পবিত্র থাকে, তাদের আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)। ‘সেথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ১০৮)। ইসলামি শরিয়াহমতে, তিনটি আমল সম্পাদনের জন্য পবিত্রতা ফরজ বা পূর্বশর্ত—নামাজ পড়া, কোরআন স্পর্শ করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করা।

▶▶ আরো পড়ুন: রমজানের সময় সূচি 2024 - রমজান মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪

শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের তিনটি পদ্ধতি হচ্ছে অজু, গোসল ও তায়াম্মুম। গোসল হলো সর্ববৃহৎ ও পরিপূর্ণ পবিত্রতা; যেটি এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি দেহ-মনে বিশেষ প্রশান্তি লাভ হয়, শরীরের শ্রান্তি–ক্লান্তি দূর হয়, মন প্রফুল্ল ও চিত্ত প্রসন্ন হয়, সঙ্গী ফেরেশতারা স্বস্তি লাভ করে, শয়তান ও শয়তানি ওয়াসওয়াসা বিদূরিত হয়, রুহ শান্তি পায় এবং নফস কলুষমুক্ত হয়। সর্বোপরি সব পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত হয়, ইবাদতে আগ্রহ ও মনোনিবেশ বৃদ্ধি হয়।

পরিভাষায় আপাদমস্তক পুরো শরীর ধৌত করাকে গোসল বলা হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে।’ (সুরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৬)। গোসলের ফরজ তিনটি—ভালোভাবে কুলি করা, নাকের ভেতর পানি দেওয়া, পুরো শরীর ধৌত করা (ফাতাওয়া শামি)। যে ব্যক্তি পবিত্রতার উদ্দেশ্যে গোসল করে, তার পাপগুলো ঝরে যায় এবং ঝরে পড়া প্রতিটি পানির ফোঁটা ও কণা একেকটি নেকি রুপে গণ্য হয়।(আল হাদিস )

ফরজ গোসল কয় প্রকার

প্রিয় পাঠক এখন আমরা জানব ফরজ গোসল কয় প্রকার সেই সম্পর্কে। ইসলামের দৃষ্টিতে গোসল হচ্ছে দুই প্রকার। যথা- ফরয ও সুন্নাত গোসল।ক. ফরয গোসল বলা হয় ঐ গোসলকে, যা বড় নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য করতে হয়। আর এটা অবশ্য করণীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, " “তোমরা যখন বড় নাপাক হও তখন গোসল করে পবিত্র হও।” (সূরা ৫; মায়িদা ৬)।খ. সুন্নাত গোসল হলো ঐ গোসল, যা করলে সাওয়াব হয়, কিন্তু না করলে গোনাহ হয় না। এ প্রকার গোসলকে মুস্তাহাব গোসলও বলা হয় ।

ফরজ গোসল কখন করতে হয়

সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য প্রতিদিনই গোসল করতে হয়। আবার হজ-ওমরার ইহরামের আগে এবং জুমার দিন গোসল করা আবশ্যক। তাছাড়া কেউ ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হতে চাইলেও গোসল করতে হয়। হাদিসে পাকে এসব কাজের আগে গোসল করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন তিনটি কারণ রয়েছে; যেসব অবস্থায় গোসল করা ফরজ। একে ‘ফরজ গোসল’ বলে অভিহিত করা হয়। সেসব অবস্থায় গোসল না করলে পবিত্র হওয়া যায় না। ওই কারণগুলো কী কী? কীভাবে এ গোসল করতে হয়?

▶▶ আরো পড়ুন: আকিদা বলতে কি বুঝায় - ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য জানুন

গোসল ফরজ হয় যেসব কারণে

অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক যে গোসল করতে হয় তাই ফরজ গোসল। তিনটি অবস্থায় এ গোসল ফরজ হয়। এ অবস্থায় গোসল না করলে অপবিত্র থাকতে হয়। তা হলো-

১. স্বপ্নদোষ হলে

ঘুম কিংবা জেগে থাকা অবস্থায় শারীরিক উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হলে ওই ব্যক্তির ওপর গোসল করা ফরজ। গোসল না করা পর্যন্ত সে অপবিত্র থাকবে।

তবে ঘুমে থাকা অবস্থায় উত্তেজনা অনুভব না হলেও গোসল ফরজ। কারণ অনেক সময় ঘুমে স্বপ্নদোষ হলে টের পাওয়া যায় না। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর যদি কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখা যায় আর সেক্ষেত্রে স্বপ্ন দোষের কথা স্মরণ থাকুক আর না থাকুক এ অবস্থায়ও গোসল করা ফরজ। (হেদায়া)

২. স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করলে

সহবাস করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর গোসল করা ফরজ। স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর গোপনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে। তাতে বীর্যপাত হোক আর না হোক; উভয়কে গোসল করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সঙ্গত হলে (সহবাস করলে), তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারি)

৩. হায়েজ-নেফাস থেকে মুক্ত হলে

নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়েজ) বন্ধ হলে এবং সন্তান প্রসব করার পর রক্ত (নেফাস) বন্ধ হলে পবিত্রতার নিয়তে গোসল করা ফরজ। যতদিন রক্ত বন্ধ না হবে ততদিন ওই নারী অপবিত্র থাকবে।

▶▶ আরো পড়ুন: দুবাই কিসের জন্য বিখ্যাত - দুবাইয়ের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাম কি জানুন

মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে নারী-পুরুষের যৌনমিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাতের মাধ্যমে কিংবা হাফেজ-নেফাসের কারণে অপবিত্র হলে তাকে পবিত্রতা হওয়ার নির্দেশ দেন এভাবে-

‎وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ

‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)

গোসল করে পবিত্র হওয়ার নিয়ম

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা পুরো শরীর ধোয়াকে ‘গোসল’ বলা হয়। আর ৩টি কাজ করার মাধ্যমে এ ফরজ গোসল করতে হয়। যথাযথভাবে এ ৩ কাজ আদায় না করলে গোসলের ফরজ আদায় হবে না। কাজ তিনটি হলো-

ক.. কুলি করা । (বুখারি, ইবনে মাজাহ)

খ..নাকে পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)

গ..সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)

তবে ফরজ গোসল শুরু করার সর্বোত্তম নিয়ম হলো___

ক..বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم) বলে গোসল শুরু করা। তবে গোসলখানা ও টয়লেট একসঙ্গে থাকলে ‘বিসমিল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করে বলা যাবে না।

খ..হাত ধোয়া। অর্থাৎ উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।

গ..লজ্জাস্থান ধোয়া। বাম হাতে পানি দ্বারা লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা। সম্ভব হলে ইস্তিঞ্জা তথা প্রস্রাব করে নেওয়া। এতে নাকাপি সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে।

৪. নাপাকি ধোয়া

কাপড়ে বা শরীরের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া।

▶▶ আরো পড়ুন: যাকাত কাকে বলে? যাকাত কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত জানুন

৫. ওজু করা

পা ধোয়া ছাড়া নামাজের ওজুর মতো ওজু করে নেওয়া।

৬. এরপর ফরজ গোসলের তিন কাজ

> কুলি করা,

> নাকে পানি দেওয়া এবং

> পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে।

৭. পা ধোয়া

সবশেষে গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ গোসল করার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখার এবং যথাযথভাবে গোসল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ফরজ গোসল না করার শাস্তি

ইসলামে পবিত্রতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। এখানে পবিত্রতা বলতে জাহেরী ও বাতেনী উভয় প্রকার নাপাকী হতে পবিত্র হওয়াকে বুঝানো হয়েছে।

বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জনের জন্য ইসলামের কিছু সুনির্দিষ্ট পন্থা রয়েছে। যেমন— গোসল, অজু, খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, দাঁত পরিষ্কার রাখতে মেসওয়াক করা, শরীরে ময়লা লাগলে ধুয়ে ফেলা ইত্যাদি। শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, সামাজিক জীবনেও পবিত্রতা অর্জনের দিকে লক্ষ্য রাখতে ইসলাম নির্দেশ দেয়। রাতে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে ভোরে ফজরের নামাযের আগে আগেই এবং দিনে সহবাস করলে পরবর্তী নামাজের পূর্বেই স্বামী-স্ত্রী দুজনে গোসল করে নেয়া আবশ্যক। 

এ গোসলকে জানাবতের গোসল বলে এবং গোসল না করা পর্যন্ত নাপাকী অবস্থায় থাকাকে জানাবতের অবস্থা বা জুনুবী হওয়া বলা হয়। জানাবত তথা ফরজ গোসলে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। স্বামী-স্ত্রী দুজনই যৌনাঙ্গের পবিত্রতার ব্যাপারে খুবই যত্নবান হতে হবে। স্বামী তার অঙ্গকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিবে যেনো চামড়ার মধ্যে বীর্য আটকে থাকতে না পারে।

▶▶ আরো পড়ুন: 

অনুরূপভাবে স্ত্রীও নিজের গোপন অঙ্গকে ভালোভাবে ধুয়ে নিবে। জানাবাত হতে পবিত্র হওয়ার পদ্ধতিকে বলে ফরজ গোসল। ফরজ গোসল ওই গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হলে অর্থাৎ কারো স্বপ্নদোষ হলে বা স্বামী-স্ত্রীর মিলনে গোসল ফরজ হয়। আর তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের তাগীদ দিয়ে আল্লাহ বলেন: যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর। [সূরা মায়েদাহ: ৬]।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি আমার এক প্রতিবেশীর জানাযাতে যোগদান করি। তার লাশ কবরে নামানোর সময় বিড়ালের ন্যায় একটি অদ্ভুত জানোয়ার কবরের ভিতরে বাইরে লম্বঝম্প করে লাশ কবরে নামাতে বাধার সৃষ্টি করতে লাগল।

সেটিকে তাড়াবার জন্য সকলে মিলে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন প্রকারই দুর করা গেল না। ব্যর্থ হয়ে অন্যত্র গিয়ে কবর খনন করা হল। সেখানে গিয়ে জন্তুটি ভয়ানক উৎপাত করতে লাগল। সেটিকে মারতে গিয়েও সর্ব প্রকার চেষ্টা ব্যর্থ হল।

যেসব শর্তে জামিন পেলেন কিং খানপুত্র আরিয়ান

অগত্য বাধ্য, হয়ে অন্যত্র গিয়ে তৃতীয় কবর খনন করা হল। সেখানে গিয়েও জন্তুটি আরও বেশী উপদ্রব শুরু করল। অনন্যোপায় হয়ে আমরা তাড়াতাড়ি তৃতীয় কবরেই তাকে দাফন করে সভয়ে দ্রুতপদে সেখানে হতে প্রস্থান করলাম। দফনান্তে কবর হতে বজ্রবৎ ভীষণ এক আওয়াজ বের হয়েছিল। আমি জানার জন্য তার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তার স্ত্রী উত্তর দিল, সহবাসের পর তিনি ফরয গোসল অবহেলা করতেন।

এতে তার ফজরের নামাজ কাযা হয়ে যেত। এছাড়া তার অন্য কোন পাপ আমি কখনো দেখি নাই।

ফরজ গোসল না করতে পারলে করণীয়

ফরয গোসল করতে সক্ষম না হলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবেন। এক্ষেত্রে অযু করার প্রয়োজন নেই। কেননা এক্ষেত্রে এই তায়াম্মুমই গোসল এবং অযুর জন্য যথেষ্ট। আর এই তায়াম্মুম দ্বারা তিলাওয়াত, নামায ইত্যাদি পড়তে পারবেন। অবশ্য এরপর অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অযু করতে হবে। আর পরবর্তীতে যখন গোসল করার সামর্থ্য হবে তখন গোসল করে নিতে হবে।

▶▶ আরো পড়ুন: 

-কিতাবুল আস্ল ১/১০৭; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া খানিয়া ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৯; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২। সূত্র: আল কাউসার।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা ফরজ গোসল কখন করতে হয় এবং ফরজ গোসলের নিয়ম ও দোয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে আপনার মনে ফরজ গোসল নিয়ে আর কোনো দ্বিধা থাকবে না বলে আমি মনে করি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করে দিবেন এবং এই রকম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইটে। আল্লাহ হাফেজ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url