আওয়াবিন নামাজের নিয়ত, নিয়ম এবং সময়সূচী সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রিয় পাঠক, আপনি কি আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত ও সময়সূচী জানতে আগ্রহী? যদি আপনার উত্তর হ্যাঁ হয়ে থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা আওয়াবিন নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও সময়সূচী এই তিনটি বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছি।

আওয়াবিন নামাজের নিয়ত

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এখনো আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানে না। তাঁরা চাইলে আমাদের আজকের এই পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারেন। আমরা এই বিষয়ে আমাদের পোস্টে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছি।

পেজ সূচিপত্র: আওয়াবিন নামাজের নিয়ত, নিয়ম এবং সময়সূচী

আওয়াবিন নামাজের সময়সূচি

প্রিয় পাঠক আপনি যদি আওয়াবিন নামাজ পড়তে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই নামাজের সময়সূচী সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে যা আপনি আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে পেয়ে যাবেন। কারণ প্রতিটি নামাজের একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে যেই সময়ের মধ্যে এই নামাজ আদায় করতে হয়। ঠিক তেমনি আওয়াবিন নামাজেরও কিছু নির্ধারিত সময় রয়েছে।

কিছু ওলামায়ে কেরামের মতে , ফজরের পরেই শুরু হয় আওয়াবিনের নামাজের সময়। সুতরাং, দুই রাকাত সুন্নতসহ সর্বমোট ছয় রাকাত পড়ার মাধ্যমে আপনি আওয়াবিন পড়ার সোয়াব পেয়ে যাবেন। তবে, দুই রাকাত সুন্নতের পর ছয় রাকাত আওয়াবিন নামাজ পড়াই উত্তম বলে মনে করেন অনেকেই। মোহাম্মদ ইবনে মুনকাদির রহঃ থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, যেটা নবী করিম সাঃ বলেছেন, মাগরিব ও এশারের মধ্যবর্তী সময়ে 

ব্যাক্তি যে নামাজটি আদায় করে থাকে সালাতুল আওয়াবিন বলে।(জামে সগিরঃ ২/৪২৭). এছাড়াও হজরত আম্মার ইবনে থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ সাঃ ইরশাদ বলেছেন, “মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যাক্তি ছয় রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে তাঁর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়” (মাজমাউজ জাওয়াইদঃ ৩৩৮০)।

আওয়াবিন নামাজের জন্য নির্ধারিত সময় হচ্ছে মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজ আদায় করার পর থেকে আওয়াবিন নামাজের সময় শুরু হয়। এবং এশার নামাজ আদায় করার আগ পর্যন্ত।আওয়াবিন নামাজ হচ্ছে সব থেকে বেশি ফজিলত পূর্ণ নফল ইবাদত। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আওয়াবিন নামাজের সময় হচ্ছে মাগরিবের পর ও এশারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।

আওয়াবিন নামাজ কত রাকাত

আওয়াবিন নামাজ ২ রাকাআত করে ২০ রাকাআত পর্যন্ত আদায় করা যায়। এর থেকে ভালো হচ্ছে ২ রাকাআত করে মোট ৬ রাকাআত আদায় করা উত্তম। মাগরিবের নামাজ আদায় করার পর থেকে নফল নামাজ আদায় করাটা হচ্ছে আওয়াবিন নামাজ। 

আওয়াবিন নামাজের ফজিলত

প্রিয় পাঠক, এবার আমরা আপনাদের জানাব আওয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কে। মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আওয়াবিন নামাজ আদায় করা উত্তম। যত ধরনের নফল ইবাদত আছে সেগুলোর মধ্যে আওয়াবিন নামাজ হচ্ছে সব থেকে উত্তম। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজি ব্যক্তি যে নামাজ আদায় করে তাই হচ্ছে সালাতুল আওয়াবিন 

(অর্থাৎ আল্লাহমুখি বান্দাদের নামাজ)’ (জামেউস সাগির : ২/৪২৭)। হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়বে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (মাজমাউজজাওয়াইদ : ৩৩৮০)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এ নামাজ পড়বে তার মর্যাদা জান্নাতের উঁচু স্থানে হবে।’ (ইতহাফুস সাদাহ : ৩/৩৭১)।

আওয়াবিন নামাজের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আরও বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নফল আদায় করে, মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কথা না বলে, তার জন্য সেটা ১২ বছরের ইবাদতের সমান গণ্য হবে।’ (তিরমিজি : ১/৫৫৯)।

আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়বে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।’
(তিরমিজি : ১/৯৮)

আওয়াবিন নামাজ সুন্নত না নফল

আওয়াবিন নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত। যত ধরনের নফল ইবাদত আছে সেগুলোর মধ্যে আওয়াবিন নামাজ হচ্ছে সব থেকে ফজিলত পূর্ণ ও উত্তম নামাজ। আতএব, আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে আওয়াবিন নামাজ হচ্ছে একটি নফল ইবাদত।

আওয়বিন নামাজ পড়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে। আপনিও যদি আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলের এই অংশটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আমরা সকলেই জানি, ইসলামের রুকম গুলোর মধ্যে নামাজ অন্যতম। আর, এই নামাজ আদায় না করলে কোন মুসলি মৃত্যুর পরে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে না।

হাদিস শরীফে ফরজ নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে নিয়ম থাকলেও কিন্তু নফল নামাজ আদায়ের জন্য কোনো নিয়ম নেই। আর এই কারণে আমরা যদি নফল নামাজ আদায় না করি তাহলে কোন ধরনের গুনাহ হবে না। কিন্তু হ্যাঁ আপনি যদি এই নফল নামাজ গুলো সঠিকভাবে আদায় করতে পারেন তাহলে এগুলো আপনার ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করবে। এই কারণে হাদিস শরীফে নফল নামাজের কথা বলা হয়েছে।

নাফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নামাজ হচ্ছে আওয়াবিন নামাজ। আওয়াবিন নামাজ আদায় করতে হয় মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে। আমরা প্রতিদিন যেরকম ফরজ নামাজ আদায় করি ঠিক একইভাবে আওয়াবিন নামাজ আদায় করতে হয়। আওয়াবিন নামাজের জন্য কোনো নিয়ম নাই। এটি ২ রাকাত করে আদায় করতে হয়। 

আওয়াবিন নামাজের নিয়ত

আওয়াবিন নামাজ হচ্ছে একটি নফল নামাজ এটা আমরা কম বেশি সকলেই জানি। আল্লাহ তালার কাছে নফল ইবাদত গুলোর মধ্যে নফল নামাজ সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়। সেহেতু আমরা বলতে পারি আওয়াবিন নামাজ হচ্ছে সকল নফল নামাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি নামাজ। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষা অনুযায়ী মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর যে নফল নামাজ আদায় করা হয় তাই মূলত আওয়াবিন নামাজ।

হাদীস শরীফে এই নামাজকে সালাতুল আওয়াবিন নামাজ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা এখনো আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ত সম্পর্কে জানেন না। তাই, তাদের জন্য আজকের পোস্টের এই অংশটি। আওয়াবিন নামাজ পড়ার সময় হচ্ছে মাগরিবের পর থেকে এশারের আগ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে আপনি যত ইচ্ছে আওয়াবিন নামাজ আদায় করতে পারবেন। 

তবে শুধু মনে রাখতে হবে এটি যেন ২০ রাকাতের উপরে না যায়। আমরা প্রতিদিন যেরকম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। যেরকম নামাজের নিয়ত করি ঠিক একই পদ্ধতিতে আওয়াবিন নামাজের ও নিয়ত। শুধুমাত্র একটা শব্দ বেশি বলতে হয় তা হচ্ছে ‘ছালাতিল আওয়াবিন’। কথা হচ্ছে একটাই প্রতি নিয়তের মত কিন্তু এইক্ষেত্রে এই শব্দটি বেশি উচ্চারণ করব।

এখন আসুন আমরা একনজরে আওয়াবিন নামাজের নিয়তটি পড়ে নেই।

আওয়াবিন নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকায়াতাই ছালাতিল আওয়াবিনা সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহ আকবার।

এটির অনুবাদ হচ্ছে: সালাতুল আওয়াবিন দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামূখী হয়ে নিয়ত করলাম। আল্লাহ আকবর।

আওয়াবিন নামাজের জন্য সূরা

আওয়াবিন নামাজে কোন সূরাটি পড়তে হবে তা আমরা অনেকেই জানি না। এই বিষয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকে। তাই আজকের পোস্টে আমরা আওয়াবিন নামাজের সূরাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আপনি যদি আজকের আর্টিকেলের এই অংশটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আমার মতে আওয়াবিন নামাজের সূরা নিয়ে আপনার মনে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।

আল বাহরুর রায়েক নামক কিতাবে উল্লেখিত রয়েছে সালাতুল আওয়াবিন হলো দুই মাগরিব ও এশারের মধ্যবর্তী সময়ে তিন সালামে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ। (আল বাহরুর রায়েক, দারুল মারিফ, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৪৯) এছাড়াও আবুল বাকা বলেন, সালাতুল আওয়াবিন নিয়তে যে ছয় রাকাত পড়া হয় তাঁর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা কাফিরুন এবং তিনবার সূরা এখলাস পড়তে হবে।

আমাদের জন্য প্রতিদিন যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। তেমনি এই নামাজ গুলো আদায় করাও আমাদের জন্য ফরজ। কোন নামাজে কোন সূরাটি পড়তে হবে তা আল্লাহ ও নবী সাঃ এর কোন হাদিস বা দলিল নেই। সুতরাং, এইকথা বলা যায় যে আওয়াবিন নামাজের জন্যও নির্দিষ্ট করে কোন সূরা নেই। আপনি যে কোন সূরা মিলিয়ে এই আওয়াবিন নামাজটি আদায় করতে পারবেন।

লেখকের শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত এবং সময়সূচী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও আরো আলোচনা করেছি আওয়াবিন নামাজের ফজিলত সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। এই রকম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েব সাইটে। ধন্যবাদ সবাইকে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url