পরীক্ষায় দুর্নীতি ও তার প্রতিকার | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
পরীক্ষায় দুর্নীতি ও তার প্রতিকার রচনা
ভূমিকা ঃ দীর্ঘকাল ধরে আমাদের দেশে ‘পরীক্ষামুখীন শিক্ষা' চলে আসছে। তা যে সব সময় প্রকৃত শিক্ষার সহায়ক এমন নয়। পরীক্ষামুখীন শিক্ষার ফলে সাধারণত ছাত্ররা পরীক্ষা পাস বা সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য উতলা হয়ে ওঠে। তারই প্রক্রিয়ায় ছাত্রদের মাঝে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্নমুখী দুর্নীতির প্রবণতা। পরীক্ষা হয়ে পড়ে গণটোকাটুকি বা নকলের স্বর্গরাজ্য।
সংকটের স্বরূপ ঃ যেকোনো উপায়ে সার্টিফিকেট অর্জন বা পরীক্ষা পাশের উদগ্র বাসনা ছাত্রদের ঠেলে দেয় নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ডের দিকে। এভাবে শিক্ষা পরিণত হয় প্রহসনে। অবস্থা এতই অভাবনীয় পর্যায়ে যে, নকলবাজ ও তাদের সহযোগীর হীন স্বার্থে কর্তব্যরত শিক্ষা, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট এমনকি পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককেও ঠেঙাতে দ্বিধা করে না। পরীক্ষায় নকল প্রবণতার নেতিবাচক ফলও ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। নকল করে যারা পাস করছে উচ্চ শিক্ষা ও চাকরিতে তাদের ঠাঁই হচ্ছে না। বিদেশে বাংলাদেশের ডিগ্রি মর্যাদা পাচ্ছে না। দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে জরুরিভাবে আজ এই পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার বা বাতিল করতে হবে। অধিক নম্বরের পরিবর্তে অধিক জ্ঞানার্জনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাপদ্ধতি প্রচলন এখন সময়ের দাবি।
সমাধানের পথ ঃ পরীক্ষায় নকল বন্ধে পাবলিক পরীক্ষাগুলোর প্রচলিত ধারায় আমূল পরিবর্তন দরকার। এক্ষেত্রে প্রধানত চারটি বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া উচিত : ক. নতুন ধারা পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা। খ. পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও সনদ প্রদানের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা গঠন করা। গ. শিক্ষা বোর্ডগুলোর কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করার জন্য বিভাগীয় পরিদর্শন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ঘ. তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষাসমূহে দুর্নীতি প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার ঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কোর্স সমাপ্ত করার পর ছাত্রছাত্রীদের সবাইকে পাবলিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক না করে ঐচ্ছিক করা যেতে পারে। তাহলে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা অনেক কমে যাবে। কেবল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করা যেতে পারে। পরীক্ষার্থী কমে যাবে বলে কেন্দ্রে সংখ্যাও হবে সীমিত ও সুনির্দিষ্ট। কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাও সহজতর হবে। পরিদর্শক হিসেবে উৎসাহী, সৎ, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রশ্নের ধারাতেও আনতে হবে পরিবর্তন। প্রশ্নপত্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে পরীক্ষার্থী নকলের সুযোগ নিয়েও যেন সুবিধা করতে না পারে। উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য বোর্ডের অধীনে সতর্কতা ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
জনসচেতনতা ঃ বেতার, টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে নকলের বিরুদ্ধে প্রচারকার্য চালিয়ে জনমত সৃষ্টি করা হলে নকলমুক্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব। কোনো ছাত্র সংগঠনের ছাত্র নামধারী নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের জিম্মি করে নকলের সুযোগ নিয়ে থাকে। এটাও কঠোর হাতে দমন করা দরকার। সচেতন অভিভাবক ও সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্ব এগিয়ে এলে পরীক্ষায় দুর্নীতি দমন সহজ হবে। শুধু তাই
নয়, দেশের বেসরকারি স্কুলগুলোতে দেশের সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে বিধায় দুর্নীতিমুক্ত পরীক্ষার জন্য অবশ্যই এ সমস্ত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্থনৈতিক দুর্ভাবনা ও টানাপোড়েন থেকে মুক্ত করা দরকার। দুর্নীতিমুক্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য সর্বপ্রথম বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের আর্থিক দায়ভার অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে।
উপসংহার ঃ সার্টিফিকেটমুখী শিক্ষা বর্তমানে মেধা বিকাশের এবং প্রকৃতি জ্ঞান ও শিক্ষা অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতি কর্মমুখী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্যও তেমন সহায়ক হচ্ছে না। অথচ জাতীয় উন্নয়নের জন্য জনসংখ্যাকে জনসম্পদ ও জনশক্তিতে পরিবর্তন করতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। নকল প্রবণতা এক্ষেত্রে অন্তরায়। তাই নৈতিকতা ও দেশপ্রেম বিকাশে সহায়ক শিক্ষা ও পরীক্ষাব্যবস্থা চালু করা এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে যত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায় ততই মঙ্গল।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url