টেলিভিশন রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

টেলিভিশন রচনা

টেলিভিশন রচনা

ভূমিকা ঃ ‘টেলিভিশন' শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো— দূরদর্শন। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে টেলিভিশন একটি বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার যে যান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে দূরের কোনো দৃশ্যকে দেখার সাথে সাথে কথা শুনা যায় তাকে টেলিভিশন বলে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে টেলিভিশন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাকে ছাড়া জীবন রসহীন, তথ্যহীন এবং বর্ণহীন হয়ে পড়ে।

আবিষ্কার ও সম্প্রচার ঃ প্রখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী পল নেপকো (Paul Napkow) উনিশ শতকে সর্বপ্রথম টেলিভিশন যন্ত্রের উদ্ভাবন সম্পর্কে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন। তাঁর অভিমতের ওপর নির্ভর করে ১৯৫৪ সালে ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী জন বেয়ার্ড টেলিভিশন আবিষ্কার করতে সমর্থ হন। এরপর বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্রমে ক্রমে উন্নতি লাভ করে যন্ত্রটি ১৮৫৪ সালে পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে। সর্বপ্রথম লন্ডনের ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (BBC) ব্যবসায়িক ভিত্তিকে টেলিভিশন সম্প্রচার কার্যক্রম চালু করে। আমাদের দেশে টেলিভিশনের ব্যবহার শুরু হয় সত্তরের দশক থেকে ।

দৈনন্দিন জীবনে টেলিভিশন ঃ আজকের দিনে টেলিভিশন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ইলেকট্রনিক যন্ত্রটি এখন মানুষের নির্দেশক, পরামর্শক, পরামর্শক, ক্লান্তি হরণকারী এবং প্রশান্তিদানকারী হিসেবে প্রতিটি গৃহে স্থান করে নিয়েছে। বিশেষ করে নাগরিক জীবনে টেলিভিশনবিহীন জীবন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় টেলিভিশন ছিল বিলাশ ও আভিজাত্য নির্দেশক উপকরণ কিন্তু আজ এটি সর্বস্তরের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থলি উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেলিভিশন শহরের যান্ত্রিক জীবনে একটুখানি বিনোদনের স্বস্তি এনে দেয়, অবসরকে করে তোলে উপভোগ্য। টেলিভিশনের কারণে বিষণ্ণ, বিপন্ন ও নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলোতে মানুষ অনেকের সাহচর্যের প্রশান্তি পায়। সকালবেলায় টেলিভিশনের ঘোষণায় জানিয়ে দেওয়া হয় সারাদিনের হালচাল, আবহাওয়ার গতিবিধি, সরকারি সিদ্ধান্ত। 

রাতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ঘটে যাওয়া বিশ্বপরিস্থিতি এমনকি ট্রেন-বাসের সময়সূচি সরাসরি ভেসে ওঠে টিভি পর্দায়। মুদ্রা ও শেয়ার বাজারের সূচক প্রতিমুহূর্তে টিভিতে দেখা যায় । বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব ক্রীড়া আসর সম্প্রসারিত হয় সরাসরি। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে সারাদিনের স্বদেশ ও বিশ্বকে মুহূর্তেই জানার মধ্যে আনা যায় এ টেলিভিশনের সাহায্যেই। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, জ্ঞানের উৎস, তথ্য প্রবাহের মাধ্যম ও বিনোদনের উপকরণ হিসেবে টেলিভিশন আজ এক অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেলিভিশন ছাড়া জীবন যেন একেবারেই অকল্পনীয়।

শিক্ষার মাধ্যমরূপে টেলিভিশন ঃ আধুনিককালে অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে ও টেলিভিশনের সহজলভ্যতার সুবাদে এটি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমরূপে কাজ করতে পারে। শিক্ষার্থীদের দিক-নির্দেশনা, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি, ভাষা শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে টেলিভিশন পালন করতে পারে শিক্ষকের ভূমিকা। দেশের আপামর জনগোষ্ঠীকে গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনার ক্ষেত্রে টেলিভিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত। তা ছাড়া দূর শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারকে সর্বজনীন করে তোলার ক্ষেত্রে টেলিভিশনের ভূমিকা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। উন্নত দেশের শিক্ষাবিষয় স্বতন্ত্র চ্যানেল পরিচালিত হয় এবং উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে সহায়তা হবে। National Geographic Channel, Discovery Channel, Animal Planet, History Channel-সহ আরও কিছু পরিবেশ ও শিক্ষামূলক চ্যানেল রয়েছে, যা জ্ঞানসন্ধানীদের জন্য যথেষ্ঠ উপকারী।

বাংলাদেশে টেলিভিশন ঃ গত শতাব্দীর শেষ দশকে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট চ্যানেলসমূহের সম্প্রচার শুরু হয় এবং ডিশ এন্টেনার জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে গ্রামে-গঞ্জে প্রায় প্রতিটি ঘরেই টেলিভিশন ঢুকে পড়েছে। শহরগুলোতে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সংযোগ সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংযোগ সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে টেলিভিশনের ৩ চ্যানেল ছাড়াও দেশের ২২টি বাংলা চ্যানেল সম্প্রচারিত হচ্ছে। সেই সাথে অসংখ্য বিদেশি চ্যানেল প্রচার হচ্ছে। এদের অনেকগুলো অবাধ যৌনতা ও পাশ্চাত্য জীবনপন্থি। এগুলো আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

টেলিভিশনের অপকারিতা ঃ টেলিভিশন বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হলেও অনেক ক্ষেত্রে মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেলিভিশন থেকে যে গামারশ্মি ছড়ায় তা মানুষের দৃষ্টিশক্তিকে নষ্ট করে। বর্তমানে টেলিভিশনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। টেলিভিশনের অনেক অশালীন অনুষ্ঠান যুবসমাজের নৈতিক মূল্যবোধ নষ্ট করে ফেলে। শুধু তাই নয়, টেলিভিশন ম্যানিয়া বর্তমানে মানুষের কর্মঘণ্টাও নষ্ট করছে।

তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর আবিষ্কার হলেও টেলিভিশন মানুষের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে অতিমাত্রায় টেলিভিশন দেখে এমন ছেলেমেয়েরা তুলনামূলকভাবে কম সৃজনশীলতার অধিকারী। তারা কৌতূহলশূন্য ও জীবন-জগৎ সম্পর্কে স্বকীয় ভাবনাচিন্তার অধিকারী নয়।

উপসংহার ঃ টেলিভিশন একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। দেশ গঠন ও শিক্ষার উন্নয়নে টেলিভিশনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে বিদেশি চ্যানেলগুলোর অবাধ সম্প্রচার আমাদের সনাতন সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশার কথা, সম্প্রতি সরকার টেলিভিশন ও বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার প্রসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করেছে।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url