সবার জন্য শিক্ষা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
সবার জন্য শিক্ষা রচনা
ভূমিকা ঃ জাতীয় অগ্রগতি ও জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে চাই সবার জন্য শিক্ষা । ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করার জন্যও চাই উপযুক্ত শিক্ষা। সবার জন্য জাতীয় জীবনে শিক্ষা মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের একটি স্লোগান ও কর্মসূচি। শিক্ষিত, মর্যাদাসম্পন্ন, আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের লক্ষ্যে প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হচ্ছে সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন।
পটভূমি ঃ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে থাইল্যান্ডে বিশ্ব শিক্ষা সম্মেলন থেকে ‘সবার জন্য শিক্ষা' স্লোগান ঘোষিত হয়। বাংলাদেশ এই ঘোষণায় অন্যতম স্বাক্ষরদাতা। এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশে ১৯৯০-এর পর থেকে 'সবার জন্য শিক্ষা' আন্দোলনের প্রসার ঘটে। ২০০০ সাল নাগাদ এই লক্ষ্য অর্জনের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এই লক্ষ্য কার্যকর করার জন্য ১৯৯০-এ বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন পাস করা হয়। ১৯৯১-এ উপনাষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
▶▶ আরো পড়ুন ঃ
▶▶ আরো পড়ুন ঃ
▶▶ আরো পড়ুন ঃ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব ঃ সবার জন্য শিক্ষা বা প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষিত জাতি ও শ্রমশক্তি গড়ে তোলার ভিত। দারিদ্র্য, অস্বাস্থ্য, অশিক্ষা ও পশ্চাৎপদতার হাত থেকে জাতির উত্তরণ ঘটাতে হলে চাই সবার জন্য শিক্ষা। দেশের প্রত্যেকের পক্ষে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করা সম্ভব না। হলেও সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের অন্তর্নিহিত সৃজনীশক্তি অঙ্কুরোদগম হয়। তারা ভাষিক, সাহিত্যিক ও গাণিতিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি শৃঙ্খলা, সততা, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা ইত্যাদির শিক্ষা পায়; নিজেদের নম্র, মার্জিত, বিনয়ী, পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলার প্রেরণা পায়। একই সঙ্গে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা ও সমাজ উন্নয়ন কাজকর্মের ধারণা পায়। তাই জাতীয় বিকাশ ও উন্নয়নের স্বার্থে শিক্ষা-পরিকল্পনায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার দিকটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের উদ্যোগ ঃ ১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে সারা দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয় এবং ২০০০ সালের মধ্যে দেশের ৬৮ হাজার গ্রামের ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নির্ধারিত হয়। এই কর্মসূচি সফল করার জন্য কিছু কৌশলগত পদক্ষেপও গৃহীত হয়। যেমন বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য বিতরণ ইত্যাদি। কিন্তু ২০০০ সালের শেষে দেখা যায় শিক্ষার আলোকে থেকে বঞ্চিত লোকের সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। ফলে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের পথে বিরাট সমস্যা থেকেই যায় । সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার পথে বাধা : সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব ছাড়াও কিছু বাস্তব বাধা রয়েছে। প্রধান প্রধান বাধাগুলো হলো ঃ
১. চরম দারিদ্র্যের কারণে বিপুল সংখ্যক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর চেয়ে ক্ষেতে-খামারে বা শহরাঞ্চলে কাজে লাগানোই শ্রেয় মনে করেন।
২. আধুনিক ও ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে অনেক লোকেরই ধর্মীয় কুসংস্কার। এদের ভ্রান্ত ধারণা : আধুনিক শিক্ষা পেলে এদের সন্তান ধর্মকর্ম ও মাতাপিতাকে অবজ্ঞা করবে।
৩. ব্যাপক সংখ্যক অভিভাবকের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণার অভাব ।
৪. প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠক্রম বহুলাংশে দরিদ্র ও নিম্নবর্ণের জনগণের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় ।
৫. সাধারণভাবে বাস্তব জীবনের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের তেমন যোগসূত্র নেই ।
৬. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সবার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই। তারা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাঙ্গনের দিকে আকৃষ্ট করে রাখতে পারছেন না।
সার্বজনীন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের উপায় ঃ সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন নির্ভর করছে সরকার, শিক্ষক, প্রশাসন ও অভিভাবকসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর। এক্ষেত্রে গ্রহণীয় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদক্ষেপ হচ্ছে ঃ
১. গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব কার্যক্রমের ব্যাপক প্রচার।
২. গরিব পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার জন্য খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচির বাস্তবায়ন। ৩. গরিব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে বইপত্র ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ।
৪. দেশের শিক্ষিত বেকারদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ইত্যাদি ।
উপসংহার ঃ সবার জন্য শিক্ষা বা সার্বজনীন শিক্ষা প্রসার সহজ কাজ নয়। এজন্য চাই জাতীয় জাগরণমূলক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা। এ রকম প্রচেষ্টা নিয়েই রাশিয়া শতকরা ১০০ ভাগ, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ শতকরা ৯৮ ভাগ, এমনকি জাপান শতকরা ৯৯ ভাগ সাক্ষরতা অর্জন করেছে। আমাদেরও দল-মত নির্বিশেষে তেমনই জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url