সংবাদপত্র রচনা pdf | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

সংবাদপত্র রচনা pdf

সংবাদপত্র রচনা

সূচনা ঃ পূর্বাকাশে আলোকের বিজয় ঘোষণার আগেই সমস্ত পৃথিবীর বাণী এসে আমাদের দরজায় আঘাত করে। সংবাদপত্রই সেই পৃথিবীর বাণী। সংবাদপত্র দৈনন্দিন জীবনের সীমাবদ্ধ মানুষকে বিশ্ব নাগরিকতার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে উত্তীর্ণ করে দেয়। মানুষ স্বভাবতই সুদূরকে জানতে চায়, আপন হাতের মুঠোয় পেতে চায় বৃহৎ বিশ্বকে। সংবাদপত্র তার সেই আকাঙ্ক্ষাকে সফলতা দান করেছে। সংবাদপত্র মানুষের দরজায় বহন করে আনে সেই বাঞ্ছিত সুদূরকে, ঘরের প্রাঙ্গণে এনে উপস্থিত করে সুদূর বিশ্বকে । সংবাদপত্রই আমাদের সুদূরের পিয়াসী আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি, আধুনিক জীবনের প্রাণের প্রহরী। সংবাদপত্র সভ্যতার অগ্রগতির প্রমাণপত্র, অত্যাচারিতের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।

সংবাদপত্র আবির্ভাবের ইতিহাস ঃ যুগের প্রয়োজনেই সংবাদপত্রের আবির্ভাব। কিন্তু এক দিন যখন সংবাদপত্রের অস্তিত্ব ছিল না তখন মানুষ খবরের জন্য উৎকণ্ঠিত হতো। তখনো পথের দুর্গমতাকে তুচ্ছ করে পরিব্রাজকেরা বেরিয়ে পড়তেন। ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতেন প্রয়োজনীয় নানা তথ্য, নানা সংবাদ। যখন স্বদেশে ফিরতেন, তখন আত্মীয়-পরিজনেরা তাদের কাছে সেসব কাহিনী শুনতেন। তারাও শোনাতেন পথের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা। বাণিজ্য-পসরা নিয়ে যারা দেশ-দেশান্তরে পাড়ি দিতেন, তারাও ছিলেন এক অর্থে জীবন্ত সংবাদপত্র।

বর্তমান সভ্যতায় সংবাদপত্রের যে অপরিহার্য ভূমিকা, তার প্রথম প্রকাশের গৌরব চীন দেশের। চীন দেশেই প্রথম কাগজ ও মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল। ভারতবর্ষে মোগল-শাসনে ও সরকারি প্রশাসনে হস্তলিখিত সংবাদপত্রের প্রচলন ছিল। সরকারি গণ্ডির মধ্যেই তা ছিল সীমাবদ্ধ। ইউরোপেও প্রথম সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটল নব-জাগরণের প্রাণকেন্দ্র ইতালিতে। সেখান থেকেই সংবাদপত্র অতি দ্রুত বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল ।

ভারতবর্ষে সংবাদপত্রের আবির্ভাব ঃ ভারতবর্ষেও অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফলে ইংরেজিতে প্রকাশিত হলো প্রথম সংবাদপত্র। হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট'-ই হলো সেই প্রথম প্রকাশিত সংবাদপত্র। পরে 'ইন্ডিয়া গেজেট', 'ক্যালকাটা গেজেট', ‘হরকরা’ প্রভৃতি ইংরেজি সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটল। ইংরেজের হাতেই ভারতবর্ষে প্রথম সাংবাদিকতার ঐতিহ্য রচিত হয়েছিল। ১৮১৮ সালে ভারতবর্ষের সংবাদপত্র ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। ঐ সনেরই এপ্রিলে প্রথম বাংলা সাময়িকপত্র 'দিগদর্শন'-এর আবির্ভাব ঘটল। ১৮১৮ সালের ২৩শে মে বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাসে যে পত্রিকা আজও তুলনাহীন মর্যাদায় ভূষিত হয়ে আছে, সেই 'সমাচার দর্পণ’ পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটল। 'সমাচার দর্পণ' বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র বলে কথিত।

সংবাদপত্রের শ্রেণিবিভাগ ঃ ধীরে ধীরে সংবাদপত্র হয়ে উঠল আধুনিক মানুষের ছোট-বড় নানা কৌতূহল চরিতার্থের অন্যতম অবলম্বন। স্বাভাবিক কারণেই সংবাদপত্রেরও ঘটল নানা রূপান্তর। শুধু বিষয়ের বৈচিত্র্যেই নয়, চরিত্র ধর্মেও এল বিভিন্নতা। সংবাদপত্র হলো দৈনিক, সাপ্তাহিক, অর্ধ-সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈ-মাসিক এমনি আরো কত শ্রেণির। বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো হচ্ছে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক সমকাল ইত্যাদি। শীর্ষস্থানীয় সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো হচ্ছে - বিচিত্রা, রোববার ইত্যাদি এবং শীর্ষস্থানীয় পাক্ষিক পত্রিকাগুলো হচ্ছে - আনন্দ ধারা, তারকালোক, অন্যদিন ইত্যাদি।

সংবাদপত্রের নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ঃ সংবাদপত্র বর্তমান সভ্যতার অপরিহার্য অঙ্গ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানব ভাগ্যে যখন দুর্দিন নেমে আসে, তখন সংবাদপত্রই সেই দুঃসংবাদ গণ-দুয়ারে পৌঁছে দিয়ে ত্রাণকার্যকে করে ত্বরান্বিত। রোগজর্জর পৃথিবীর শিয়রে বসে সে মহাত্রাতার মতো অনুভব করে তার বক্ষস্পন্দন এবং পৃথিবীর মানুষের কানে পৌঁছে দেয় তার সকল সংবাদ, দূর করে মানুষের উৎকণ্ঠা ও ব্যাকুল সংবাদ-তৃষ্ণা। বিশ্বের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, আমোদ-প্রমোদ সকল ক্ষেত্রেই তার অবাধ পদসঞ্জার।

সংবাদপত্রের নির্ভীক ধিক্কারবাণী যখন ধ্বনিত হয়ে ওঠে, সাথে সাথে পৃথিবীর লক্ষ কোটি কণ্ঠস্বরও প্রবল বিক্ষোভে সোচ্চার হয়ে ওঠে। শক্তিমদমত্ত অত্যাচারীর দল সেই প্রবল গণ-বিক্ষোভের সম্মুখে দাঁড়াতে পারে না। তখন ভীতসন্ত্রস্ত অত্যাচারীর দল নতি স্বীকার করে সেই জাগ্রত জনমতের কাছে। অন্যায়ের পরাভবে ন্যায়ের অম্লান মর্যাদা হয় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত। 

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবা” পত্রের ভূমিকা ঃ সংবাদপত্র গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী। মহাবিচারপতির বিচারশালায় সে নিপীড়িত মানুষের পক্ষ সমর্থন করে। কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, গণতন্ত্রের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হলে কিংবা গণতন্ত্রের পবিত্রতা কোনো কারণে কলুষিত হলে সংবাদপত্রের নির্ভীক কণ্ঠ সেখানে সোচ্চার হয়ে ওঠে। সংবাদপত্র তাই জনগণের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণে সর্বদা দায়িত্বশীল অভিভাবক ।

উপসংহার ঃ সংবাদপত্রের ভূমিকা গৌরবোজ্জ্বল হলেও সংকটমুক্ত নয়। সংকটের নানা রাহুগ্রাসে নিপতিত হয়ে সংবাদপত্র মাঝে মাঝে তার পবিত্র দায়িত্ব বহনে অসমর্থ হয়ে পড়ে। সংবাদপত্রের মালিকরা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষার জন্য শক্তিশালী শাসকগোষ্ঠীর মনোরঞ্জনে আত্মনিয়োগ করে। তাতে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর জনস্বার্থবিরোধী কার্যাবলিও সমর্থিত এবং পবিত্র জনস্বার্থ নির্মমভাবে হয় পদদলিত। তখন মানব জাতির বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর ভাগ্যে বড় দুর্দিন নেমে আসে। এমতাবস্থায় আধুনিক পৃথিবীর লক্ষ-কোটি অসহায় মানুষ বিচারের প্রার্থনায় কার দরজায় গিয়ে দাঁড়াবে? সংবাদপত্রকে তাই এ সর্বনাশের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url