কোজাগরী লক্ষী পূজার পাঁচালী ও লক্ষী পূজার সকল মন্ত্র একসাথে জানুন

প্রিয় পাঠক প্রতিদিনের মতোই আজকেও আপনাদের জন্য আর একটি ধর্মীয় তথ্য নিয়ে হাজির হলাম। আজকের পোস্টে আমরা হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ধনসম্পদের দেবী মা লক্ষ্মীর পাঁচালী (দোল পূর্ণিমা নিশি নির্মল আকাশ) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি কোজাগরী লক্ষী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথা না জেনে থাকেন তাহলে আপনি আজকের পোস্টটি পড়ার মধ্যে দিয়ে তা জানতে পারবেন।

মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা

আজকের পোস্টের আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা নিয়ে। এছাড়াও আজকের পোস্টে আমরা মা লক্ষ্মীর বন্দনা থেকে শুরু করে মা লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র ও প্রণাম মন্ত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব। প্রিয় পাঠক আপনি যদি মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন। তাহলে, চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করি

কন্টেন্ট সূচিপত্রঃ কোজাগরী লক্ষী পূজার পাঁচালী ও মা লক্ষী পূজার সকল মন্ত্র একসাথে

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আজকের পোস্টে আমরা কোন বিষয়ে আলোচনা করব তা ইতোমধ্যে আপনারা সকলেই জানেন। কি জানেন না? তাহলে, আবারও জেনে নিন আজকের পোস্টে আমরা কোজাগরী লক্ষী পূজার পাঁচালী “দোল পূর্ণিমা নিশি নির্মল আকাশ” এবং মা লক্ষ্মীর ব্রত কথা সহ লক্ষ্মী পুজোর সকল প্রকার নিয়ম কানুন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

আমরা সকলেই জানি মা লক্ষ্মী ধনসম্পদ ও শান্তির দেবী। বাংলার সকল হিন্দু পরিবারে প্রতি বৃহস্পতিবার দেবী মা লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয় এবং আরাধনা শেষে কোজাগরী লক্ষী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথা শ্রুতি আকারে গেয়ে শোনানো হয়। সৃষ্টির আদি থেকেই সকল হিন্দু পরিবারের মধ্যে এই নিয়ম, নীতি গুলো পালিত হয়ে আসছে। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পাঁচালি ও ব্রত কথা জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে, আজকের সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

মা লক্ষ্মীর বন্দনা

নারায়ণং নমস্কত্যং নরঞ্চৈব নরোত্তমং। দেবীং সরস্বতীঞ্চৈব ততো জয় মুদীরয়েৎ।। (লক্ষ্মী পূজায় ঘন্টা বাদ্য নিষেধ)

অর্থঃ- শুদ্ধাসনে পূর্বমুখী হইয়া বসিবেন। নমো বিষ্ণুঃ (তিনবার) বলিতে বলিতে তুলসীর জলের ছিটা মাথায় দিবেন । হরিস্মরণ মন্ত্রঃ-নমঃঅপবিত্র পবিত্রোবা সর্বাবস্থাং গতোহপিৰা যঃ স্মরেৎ পুন্ডরীকাক্ষ সর্বাবাহ্যাভ্যন্তর শুচিঃ।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

মা লক্ষ্মীর আচমন মন্ত্র

নমো আত্মতত্ত্বায় নমঃ। নমো বিদ্যতত্ত্বায় নমঃ। নমো শিবতত্ত্বায় নমঃ।

সুৰ্য্যার্ঘ্য

কুশাতে দুর্বা, চাউল, ফুল, জল লইয়া মন্ত্র পরিবেন । নমো বিবস্বতে ব্রহ্মণ ভাম্বতে বিষ্ণু তেজসে জগৎ সবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কৰ্ম্মদায়িনে ইদমর্ঘ্যং নমো ভগবতে শ্রীসূৰ্য্যায় নমঃ।

হাত যোড় করিয়া-নমঃ এহি সূৰ্য্য সহস্রাংশো তেজোরাশে । জগৎপতে অনুকম্পায় মাং ভক্তং গৃহানাৰ্য্যং দিবাকরম্ । নমস্কারঃ- নমো জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং ধ্বান্তারিং সর্ব্বাপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম।

মা লক্ষ্মীর স্বস্তিবাচন

নয়টি চাউল লইয়া একবারে তিনটি করিয়া নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ পূর্ব্বক ৩ বার ঘটে দিবেন-নমঃ স্বস্তি ভবন্তো ধ্রুবস্তু ৩ বার পাঠ করিবেন।

সঙ্কল্পঃ- বিষ্ণুর্নমোহদ্য অমুক মাসি অমুকে পক্ষে অমুক তিথৌ অমুক গোত্রা শ্রীঅমুকী দেবী লক্ষ্মী প্রীতি কাম গণেশাদি নানা দেবতা গন্ধপুষ্পদান পূৰ্ব্বক শ্রীশ্রী লক্ষ্মী পূজা' তদিতিহাস কথা শ্রবন কর্ম্মাহং করিষ্যে, ঘটে উক্ত জল দিবেন।

মা লক্ষ্মীর ঘটাস্থাপন মন্ত্র

নমো সৰ্ব্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্ব্বদেব সমন্বিতং ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবী স্থিরো ভব।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ হিন্দু ধর্মের সকল নিত্য প্রয়োজনীয় মন্ত্র বাংলা অর্থ সহ

মা লক্ষ্মীর আসনশুদ্ধি

আসনের নীচে ভূমিতে চন্দন দ্বারা ত্রিকোন মন্ডল করিয়া এতে গন্ধপুষ্পে নমো হ্রীং আধার শক্তয়ে কমলাসনায় নমঃ। অন্তনায় নমঃ, কুৰ্ম্মায় নমঃ পৃথিব্যৈ নমঃ। (চাউল দ্বারা অর্চনা করিবে) ও মন্ডলে চাউল দুর্বা লইয়া ধরিয়া বলিবে। মেরুপৃষ্ঠ ঋষি সুতলং ছন্দঃ কুৰ্ম্ম দেবতা আসন পরিগ্রহনে বিনিয়োগঃ। (হাত যোড় করিয়া) নমঃ পৃথিত্বয়া ধৃতা লোকা দেবিত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা তঞ্চধারয় মাং নিত্যং পবিত্রং আসনং কুরু।

ভূতশুদ্ধি

দুৰ্ব্বা, চাউল, পুষ্প লইয়া নিম্ন মন্ত্র পাঠে মাথার উপর দিয়া পেছন দিকে ফেলিয়া দিবে। নমঃ অপসর্পস্তুতে ভূতা যে ভূতা ভূমি পালকা ভূতা নাম বিরোধেন পূজা, কর্ম করোম্যহং। অতঃপর ঊর্ধ্বে তিনটি তালি দিয়া গায়ের চতুর্দিকে তুড়ি দিবে।

অর্ঘ্য পাত্র স্থাপন

কোশার নীচে মাটিতে চন্দন দ্বারা ত্রিকোণ মন্ডল করিয়া অতঃপর মন্ডলে চাউল দ্বারা অর্চনা করিবে।

নমঃ অনন্তায় কুৰ্ম্মায়, পৃথিব্যৈ নমঃ। আধার শক্তয়ে নমঃ আধারে মং বহ্নি মন্ডলায় দ্বাদশ কলাত্মনে নমঃ। (৩ বার জল ঢালিবে ও কোশায় গন্ধ পুষ্প দিবে এবং অর্ঘ্য সাজাইয়া) ও চন্দ্র মন্ডলায় ষোড়শ কলাত্মনে নমঃ । কবচে নামগুষ্ঠা ধেনু মুদ্রা মূর্তিকৃন্য মৎস্য মুদ্রামাচ্ছাদ্য কুর্মমুদ্রাং প্রদস্য অঙ্কুশ মুদ্রয়া তীর্থানাবাহা মন্ত্ৰ পঠেৎ । নমো গঙ্গে চ যমুনেচৈব গোদাবরী সরস্বতী নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু । মূল মন্ত্র শ্রীং কোশার উপর ৮ বার জপ করিবে পরে ফুলটি লইয়া মাথায় ও পূজার সমস্ত জিনিসে জলের ছিটা দিবে। তৎপর এতে গন্ধ পুষ্পে গণেশায়ঃ নমঃ বলিয়া এক একটি গন্ধ পুষ্প দিবে। এতে গন্ধপুষ্পে শিবাদি পঞ্চদেব তাগণেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধ পুষ্পে নমো নারায়ণায় শ্রীবিষ্ণুবে নমঃ । 

মা লক্ষ্মীর ধ্যান (চন্দনাক্ত ফুল লইয়া)

নমঃ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃনিভর্যাম্য সৌম্ময়ে । পদ্মসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরং । গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্ব্বালঙ্কার ভূষিতাং রোক্সপদ্ম ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণে নতু ।

এই মন্ত্র পাঠে নিজের মাথায় ফুলটি দিয়া সোহমিতি চিন্তা করিবে । পুনঃ অর্ঘ্যপাত্র পূর্ব্বমত স্থাপন করিবে এবং পুনঃ লক্ষ্মীর ধ্যান করিয়া চাউল দ্বারা তিনবার অর্চনা করিবে। নমোঃ শ্রীং লক্ষ্ম্যৈ দেব্যৈ নমঃ। তৎপর এতৎ পাদ্যং, ইদমর্ঘ্যং, ইদং, আচমনীয়ং ইদং স্নানীয়ং, এষতে গন্ধঃ এতৎ পুষ্পং, এতানি বিল্বপত্রানি, এষ, ধূপ, এষ দীপ, ইদং সোপকরণ নৈবৈদ্যং ইদং পানার্থ জলং, ইদং পুনরাচমনীয় জলং এতৎ তাম্বুলং শ্রীং লক্ষ্মী দেবৈ নমঃ। তৎপর চাউল দ্বারা তিনবার অর্চনা করিবে । পরে বলিবে শ্রীং লক্ষ্মী দেবী পূজিতোহসি ক্ষমস্ব ।

মা লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র

এষ সচন্দন বিল্পপত্র পুষ্পাঞ্জলী নমঃ সায়ুধায়ৈ সপরিবারায়ৈ সাঙ্গপাঙ্গয়ৈ নমো শ্ৰীশ্ৰীলক্ষ্মী দেব্যৈ নমঃ। বামেঃ গুরুভ্যো নমঃ দক্ষিণে গণেশায় নমঃ মধ্যে শ্রীং লক্ষ্মী দেব্যৈ নমঃ শ্রীং শ্রীং দশবার জপ করিবে

▶▶ আরো পড়ুন ঃ গায়ত্রী মন্ত্র কি - গায়ত্রী মন্ত্র পাঠের নিয়ম - গায়ত্রী মন্ত্র পাঠের উপকারিতা

মা লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র

বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে। সৰ্ব্বতো পাহিমাং দেবী মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে ।।

কোজাগরী লক্ষী পূজার পাঁচালী (দোল পূর্ণিমা নিশি নির্মল আকাশ)

  • দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ,
  • মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় বাতাস ।।
  • লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ ।
  • কহিতেছে নানা কথা সুখে আলাপন ।।
  • হেনকালে বীণা করে দেবর্ষি নারদ ।
  • হরি গুণ গানে মাতি হইয়া বিভোর ।।
  • ধীরে ধীরে যুক্ত কড়ে করিয়া প্রণতি ।
  • কহিলা নারদ মুণি নারায়ণী প্ৰতি ।।
  • কহ মাত এ কেমন তোমার বিচার।
  • চঞ্চলা চপলা প্রায় ফিরে দ্বারে দ্বার ।।
  • ক্ষণকাল তরে তব নাহি কোথা স্থিতি ।
  • মৰ্ত্তবাসী সদা তাই ভুগেছি দুৰ্গতি ।।
  • সতত কু-ক্রিয়ায় রত নর-নারীগণ ।
  • অসহ্য যাতনা দেয় দুর্ভিক্ষ ভীষণ ।।
  • অন্নাভাবে শীর্ণকায় বলহীন দেহ ।
  • অতি কষ্টে আত্মহত্যা করিতেছে কেহ ।।
  • কেহ প্রিয় প্রাণাদিক পুত্র কন্যাগণে ।
  • বিক্রী করি খাইতেছে অন্নের কারণে ।।
  • বল বল, বল দেবী কি পাপের ফলে ।
  • ভীষণ দুর্ভিক্ষ সদা মৰ্ত্ত লোকে জ্বলে ।।
  • কমলা ব্যথিত হয়ে দুঃখিত অন্তরে ।
  • কহিলেন অতঃপর ক্ষুন্ন মুণিবরে ।।
  • নরলোকে দুঃখ পায় শোকের বিষয় ৷
  • দুষ্কৃতির ফল ইহা জানিবে নিশ্চয়।।
  • চঞ্চলা ইহার নাম কিসের লাগিয়া ।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ শ্রী কৃষ্ণের অষ্টতর শতনাম লিরিক্স বাংলায় | কৃষ্ণের অষ্টতর শতনাম

  • কারণ ইহার তবে শুন মন দিয়া ।।
  • দিবা নিদ্ৰা অনাচার ক্রোধ অহঙ্কার ।
  • আলস্য কলহ মিথ্যা ঘিরিছে সংসার ।।
  • উচ্চ হাসি উচ্চ ভাষা কহে নারীগণে ।
  • সন্ধ্যা কালে নিদ্রা যায় ঝগড়া জনে জনে ।।
  • দয়া মায়া লজ্জা আদি দিয়া বিসর্জ্জন ।
  • যেথায় সেথায় করে স্বেচ্ছায় গমন ।।
  • না দেয় প্রদীপ তারা প্রতি সন্ধ্যা কালে ।
  • বাবুগিরি করে তারা রং মাখে গালে ।।
  • ভোৱেতে দেয় না তাঁরা গোবরের ছড়া ।
  • কি জানি মলিন হবে তার সেমিজ পরা । ।
  • লক্ষ্মী স্বরূপিনী নারী করিয়া সৃজন ।
  • পাঠাইয়াছি ধরাধামে সুখের কারণ ।।
  • অনেক সুখেতে তারা ভুলিয়া আমায় ৷
  • অকাৰ্য্যে কুকার্য্যে তারা সংসার মজায় ।।
  • শ্বশুর শাশুড়ীগণে নহে ভক্তিমতী ।
  • বাক্যবান বর্ষে সদা তাহাদের প্রতি।।
  • স্বামীর আত্মীয়গণে না করে আদর।
  • থাকিতে চাহয়ে তারা হয়ে সতন্তুর।।
  • লজ্জা আদি গুণ যত নারীর ভূষণ ।
  • একে একে হৃদয় হতে করেছে বৰ্জ্জন ।।
  • অতিথি আসিলে তারা কষ্ট বাসে মনে।
  • স্বামীর আগেতে খায় যত নারীগণে ।।
  • পতিরে করেছে হেলা না শুনে বচন ।
  • ছাড়িয়াছে গৃহকর্ম্ম ছেড়েছে রন্ধন ।।
  • পুরুষেরা পরিহাসে সময় কাটায় ৷
  • মিথ্যা ছাড়া সত্য কথা কভু নাহি কয় ।।
  • সতত ইহারা মোরে জ্বালাতন করে।
  • চপলার প্রায় তাই ফিরে ঘরে ঘরে।।
  • ঈর্ষা দ্বেষ হিংসা পূর্ণ মানবহৃদয় ।
  • নর নারী সবে হেরি কুটিলতাময় ।।
  • দেব দ্বিজে ভক্তিহীন তুচ্ছ গুরুজন।
  • কেবল আপন সুখ করে অষেণ ।।
  • রসনা তৃপ্তির জন্য অভক্ষ্য ভক্ষণ ।
  • তারি ফলে নানা দুঃখে অকালে মরণ ।।
  • যেই ঘরে এইরূপ পাপের আগার ।
  • অচলা হইয়া তথা থাকি কি প্রকার ।।
  • বজ্জিয়া এ সব দোষ হলে সদাচারী।
  • নিশ্চলা থাকিয়া সদা দিব্য বিভাবরী।।
  • এত শুনি মুনিবর কহে ক্ষুন্ন মনে ।
  • কি হলে প্রসন্না দেবী হবে নরগণে ।।
  • পারে কি লভিতে নর তব পদ ছায়া ।
  • ওহে দয়াময়ী তুমি না করিলে দয়া।।
  • সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের তুমি অধিকারী ।
  • জগৎ প্রসুতি তুমি জগৎ ঈশ্বরী ।।
  • কৃপা করি কহ মাতঃ বিহিত বিধান ।
  • নরের দুঃখের লাগি কাঁদে মোর প্রাণ । ।
  • দেবর্ষির বাক্যে দেবীর দয়া হল মনে ।
  • বিদায় করিল তারে মধুর বচনে।।
  • মর্ত্যবাসীদের দুঃখে কাঁদিছে অন্তর ।
  • প্রতিকার চেষ্টা আমি করিব সত্বর।।
  • ভাবিয়া চিন্তিয়া বলে নারায়ণী প্রতি ।
  • কিরূপে হেরিব এবে নরের দুষ্কৃতি ।।
  • কেমনে তাদের দুঃখ করিব মোচন ।
  • উপদেশ দেহ মোরে হৃদয় রঞ্জন ।।
  • শুনিয়া রমার বাণী কহে রমাপতি ।
  • উতলা কি হেতু দেবী স্থির কর মতি।।
  • শুন সতী মন দিয়া বচন আমার ৷
  • লক্ষ্মীব্রত নরলোকে করহ প্রচার ।।
  • গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি নারীগণে ।
  • পুজিয়া শুনিবে কথা আনন্দিত মনে ।।
  • বাড়িবে ঐশ্চর্য্য তাহে তোমার কৃপায় ।
  • দারিদ্রতা দূরে যাবে জানিবে নিশ্চয়।।
  • শ্রীহরির বাক্যে দেবী অতি হৃষ্ট মনে ।
  • গমন করিলা ধরায় ব্রত প্রচারণে ।।
  • অবন্তি নগরে গিয়ে হল উপনীত ।
  • দেখিয়া শুনিয়া হল বড়ই চিন্তিত।।
  • নগরে অধীর ছিল ধনেশ্বর রায়।
  • ঐশ্বর্য্য অপার তার কুবরের প্রায় ।।
  • সোনার সংসার তার শূণ্য হিংসা দ্বেষ।
  • পালিত অধীনগণে পুত্র নির্বিশেষ ।।
  • এক অন্নে সাত পুত্র রেখে ধনেশ্বর ।
  • স-সম্মানে যথাকালে গেল লোকান্তর ।।
  • ভার্য্যার কুহকজালে সপ্ত সহোদর।
  • পৃথক হইল অন্ন কিছু দিন পর ।।
  • হিংসা দ্বেষ অলক্ষ্মীর যত সহচর।
  • একে একে সবে আসি প্রবেশিল ঘর ।।
  • ক্রমে ক্রমে লক্ষ্মীদেবী ছাড়িল সবারে ।
  • সোনার সংসার তার গেল ছারখারে
  • বৃদ্ধা ধনেশ্বর পত্নী নিজ ভাগ্য দোষে ।
  • না পারি তিষ্ঠিতে আর বধুদের রোষে।।
  • চলিল বিপিনে বৃদ্ধা ত্যজিতে জীবন ।
  • অদৃষ্টের ফলে হয় এ হেন ঘটন ।
  • এ অন্নাভাবে শীর্ণ দেহ মলিন বদন ।
  • চলিতে শকতি নাই করিতে ক্রন্দন।।
  • সকরুণ স্বরে দেবী জিজ্ঞাসে বৃদ্ধারে ।
  • কি হেতু এসেছ তুমি এ ঘোর কান্তারে।।
  • কাহার তনয়া তুমি কাহার ঘরণী ।
  • কি হেতু মলিন মুখ দেখি বিষাদিনী ।।
  • বৃদ্ধা বলে পতিহীনা আমি অভাগিনী ।
  • হবে শুনিয়া মম দুঃখের কাহিনী ।।
  • পিতা পতি ছিল মোর অতি ধনবান ।
  • সদা ছিল মোর ভাগ্যে লক্ষ্মী অধিষ্ঠান।।
  • সোনার সংসার মোর ছিল ধনে জনে ।
  • পুত্র বধুগণ মোরে সেবিত যতনে।।
  • পতর হইল কাল, সুখ শান্তি যত ।
  • গৃহ হতে ক্রমে ক্রমে হল তিরোহিত।।
  • সাতপুত্ৰ সাত হাঁড়ি হয়েছে এখন ।
  • সতত বধুরা মোরে করে জ্বালাতন ।।
  • নারায়ণ বলে শুন আমার বচন ।
  • আত্মহত্যা মহা পাপ নরকে গমন ।।
  • যাও দেবী গৃহে ফিরে কর লক্ষ্মীব্রত ।
  • অচিরে হইবে সুখ তব পূৰ্ব্বমত।।
  • গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি নারীগণ ।
  • করিবে লক্ষ্মীর ব্রত হয়ে এক মন।।
  • জলপূর্ণ ঘটে দিয়ে সিন্দুরের ফোঁটা ৷
  • আম্রের পল্লব দিবে শিরে এক গোট ।।
  • আসন সাজায়ে তাহে দিয়ে গুয়া পান ।
  • সিন্দুর গুলিয়ে দিবে ব্রতের বিধান ।।
  • ধুপ দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে ।
  • শুনিতে বসিবে কথা দুর্বা লয়ে হাতে ।।
  • মনেতে লক্ষ্মীর মূর্ত্তি করিয়া চিন্তন।
  • এক চিত্তে ব্রতকথা করিবে শ্রবণ।।
  • কথান্তে উলুধ্বনি দিয়া প্রণাম করিবে।
  • তারপর এয়োগণ সিন্দুর লইবে।।
  • যে রমণী ব্রত করে প্রতি গুরুবারে।
  • হইবে বিশুদ্ধ মন লক্ষ্মীদেবীর বরে ।।
  • যেই গৃহে ব্রতকালে সব নারীগণ ।
  • সর্ব্বকার্য্য পরিহরি ব্রতে দেয় মন।।
  • সেই গৃহে বাঁধা রব হইয়া অচলা ।
  • ভক্ত বাঞ্ছা পূর্ণ করি আমি যে কমলা ।।
  • গুরুবারে হয় যদি পুর্ণিমা উদিত ।
  • অনাহারে যেই নারী করে এই ব্রত।।
  • সকল বাসনা তার হইবে পূরণ ।
  • পতি পুত্র সহ সুখে রবে সৰ্ব্বক্ষণ।।
  • লক্ষ্মীর ভান্ডার স্থাপি সব ঘরে ঘরে।
  • রাখিবে তন্ডুল তাহে এক মুষ্টি করে ।।
  • সঞ্চয়ের পথ ইহা জানিবে সকলে ।
  • অসময়ের উপকার পাবে এর ফলে ।।
  • আলস্য ত্যাজিয়া সুতা কাট বামাগণ ৷
  • দেশের অবস্থা সবে করিয়া চিন্তন।।
  • প্রসন্না থাকিবা তাহে কহিলাম সার ।
  • যাও গৃহে কর গিয়া ব্রতের প্রচার ।।
  • বলিতে বলিতে দেবী নিজ মুর্ত্তি ধরি ৷
  • দরশন দিলা তারে রমা কৃপা করি ।।
  • হেরিয়া হইল বৃদ্ধা আনন্দে বিভোর ।
  • প্রণাম করিছে সতী করি হাত যোড় ।।
  • প্রসন্না হইয়া দেবী দিয়া তারে কোল ।
  • অন্তৰ্দ্ধান হইলেন বল হরিবোল ।।
  • কর এবে ব্রত মোর সংসারের প্রচার ।
  • অচিরে হইবে তব বৈভব অপার ।।
  • পুত্র বধুগণ বশে থাকিবে তোমার ।
  • সুখ শান্তিময় তব হইবে সংসার ।।
  • এত বলি লক্ষ্মীদেবী হল অন্তৰ্দ্ধান ।
  • হৃষ্ট চিত্তে বৃদ্ধা গৃহে করিলা গমন ।।
  • আসিয়া গৃহেতে সব করিলা বর্ণন ।
  • যেরূপে ঘটিল তার দেবী দরশন ।।
  • ব্রতের বিধান সতী বলিল সবারে ৷
  • সবিশেষ কথা দেবী কহিলা তাহারে
  • বধুগণ মিলি সবে করে লক্ষ্মীব্রত ।
  • হিংসা দ্বেষ স্বার্থভাব চলিল ত্বরিত ।।
  • মিলিল একত্রে পুনঃ ভাই সাতজন।
  • মিলে সহোদরা সম সব বধুগণ ।।
  • মা লক্ষ্মী করিল তথা পুনরাগমন ।
  • অচিরে হইল গৃহ শান্তি নিকেতন।।
  • অবশেষে শুন এক অপূর্ব ব্যাপার ৷
  • ব্রতের বিধান হল যে ভাবে প্রচার ।।
  • অবন্তি নগরে এক গৃহস্থ ভবনে ।
  • নারীগণ নিয়োজিত ব্রতের সাধনে।।
  • শ্রীনগরবাসী এক বণিক তনয় ।
  • উপনীত হল আসি ব্রতের সময়।।
  • অনেক সম্পতি তার ভাই পঞ্চজন।
  • পরস্পর অনুগত ছিল সৰ্ব্বক্ষণ।।
  • ব্ৰত দেখি হেলা করি সাধুর তনয় ।
  • বলে একি ব্রত এতে কিবা ফলোদয়।।
  • সদাগর বাক্য শুনি বলে নারীগণ ।
  • কর লক্ষ্মীব্রত যাতে মানস সাধন ।।
  • যে জন করিবে ইহা ধন জনে তার ।
  • লক্ষ্মীর বরেতে হবে পূর্ণিত সংসার ।।
  • ইহা শুনি সদাগর বলে অহঙ্কারে ৷
  • যে জন অভাবে থাকে পূজে সে উহারে ।।
  • ধন জন সুখ ভোগ যা কিছু সম্ভবে।
  • সকল আমার আছে আর কিবা হবে ।।
  • কপালে না থাকে যদি লক্ষ্মী দিবে ধন ।
  • হেন বাক্য কভু আমি শুনিনি কখন ।।
  • গর্বিত বচন দেবী সহিতে না পারে।
  • অহঙ্কারে দোষে দেবী ছাড়িল তাহারে ।।
  • ধন মদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা ।
  • নানা জিনিস পূর্ণ তরি বাণিজ্যেতে গেলা ।।
  • দৈব যোগে লক্ষ্মী কোপে সহ ধন জন ।
  • সপ্ততরী জল মাঝে হল নিগমন।।
  • ইষ্টক আলয়াদি যা কিছু তাহার ।
  • বজ্রাঘাতে দগ্ধ হয়ে হল ছারখার।।
  • দূর গেল ভ্রাতৃ ভাব হল ভিন্ন অন্ন।
  • সোনার সংসার এবে সকলি বিপন্ন ।।
  • ভিক্ষাজীবি হয়ে সবে ফিরে ঘরে ঘরে।
  • জঠর জ্বালায় ঘোরে দেশ দেশান্তরে।।
  • পড়িয়া বিপাকে তাই সাধুর তনয় ।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ হিন্দু ধর্মের বেদ কয় প্রকার ও কি কি | কোন বেদে কি আছে জানুন

  • অশ্রু ঝরে দুই নেত্রে কাঁদে উভরায় ।।
  • কি দোষ পাইয়া বিধি করিল এমন ।।
  • অধম সন্তান আমি অতি অভাজন ।।
  • সাধুর দুর্দ্দশা দেখি দয়া উপজিল ।
  • করুণা হৃদয় লক্ষ্মী সকলি বুঝিল ।।
  • দুঃখ দূর তবে তারে করিয়া কৌশল ।
  • পাঠাই অবন্তি পুরে করি ভিক্ষার ছল।।
  • নানাস্থানে ঘুরাইয়া আনে তার পরে।
  • উপনীত করাইল অবন্তি নগরে।।
  • লক্ষ্মীব্রত দেখে তথা সব নারীগণ ।
  • স্মরণ হইল তার পূর্ব বিবরণ ।।
  • বুঝিল তখন কেন পড়িল বিপাকে ।
  • অহঙ্কার দোষে দেবী ত্যাজিল আমাকে ।।
  • জোড় হস্তে ভক্তি ভাবে হয়ে একমন।
  • করিল তাঁহাকে স্তুতি সাধুর নন্দন।।
  • অতঃপর স্তব করি এক চিত্ত মনে।
  • একাগ্র হৃদয়ে সাধু ব্রত কথা শুনে।।
  • ব্রত অন্তে সদাগর করিয়া প্রণাম ৷
  • ব্রতের সঙ্কল্প করি আসে নিজ ধাম ৷৷
  • বধূগণে বলে সাধু লক্ষ্মী ব্রত সার ।
  • সকলে মিলিয়া কর প্রতি গুরুবার ।।
  • সাধুর বাক্যেতে তুষ্ট হয়ে বধুগণ ।
  • ভক্তি মনে করে তারা ব্রত আচরণ ।।
  • ভক্তাধীনা নারায়ণী হইয়া সদয় ।
  • নাশিল সাধুর ছিল যত বিঘ্নচয়।।
  • দেবীর কৃপায় তার সম্পদ লভিল ।
  • দারিদ্রতা দূরে গিয়ে নিরাপদ হল । ।
  • সপ্ত ডিঙ্গা উঠে ভাসি জলের উপর ।
  • আনন্দে পূর্ণিত হল সাধুর অন্তর।।
  • মিলিল ভ্রাতারা পুনঃ আর বধূগণ ।
  • সাধুর সংসার হল শান্তি নিকেতন।।
  • এইরূপে মর্ত্ত লোকে ব্রতের প্রচার ।
  • মনে রেখ ধরাধামে লক্ষ্মীব্রত সার।।
  • লক্ষ্মীব্রত যে রমণী করে এক মনে।
  • লক্ষ্মীর দয়ায় তার বারে ধনে জনে।।
  • অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন।
  • ইহলোকে সুখী অন্তে গোলকে গমন।।
  • এই ব্ৰত কথা শুনে যেবা রাখে ঘরে ।
  • লক্ষ্মীর বরেতে তার মনোবাঞ্ছা পুরে।।
  • ব্রত করি স্তব পাঠ যেই জন করে।
  • অভাব না রহে তার লক্ষ্মী দেবীর বরে ।।
  • লক্ষ্মীর ব্রতের কথা হল সমাপণ ।
  • ভক্তি ভরে বর চাহ যার যাহা মন ।।
  • সিন্দুর সিঁথিতে দাও ত্রয়োগণ মিলে ।
  • উলুধ্বনি কর পরে অতি কৌতুহলে ।।
  • লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড় মধুময় ।
  • প্রণাম করিয়া যাও যে যার আলয় ।।
  • জোড় করি দুই হাত ভক্তিযুক্ত মনে।
  • প্রণাম করিয়া এবে যে থাক যেখান ।।
  • অগ্রগতির গতি মাতঃ তুমি নারায়ণী ।
  • দয়াময়ী জগম্মাতা বিপদ নাশিনী ।।
  • ভক্ত বৎসলা দেবী তুমি নারায়ণী ।
  • হরিপ্রিয়া পদ্মাসনা ভূতা পহারিণী ।
  • এতদুরে পাঁচালী যে সমাপ্ত হইল ।
  • লক্ষ্মী প্রীতি সবে মিলে হরি হরি বল ।।

 ঃ সমাপ্ত ঃ

▶▶ আরো পড়ুন ঃ শিবের গলায় সাপের নাম কি - শিবের ত্রিশূল এর নাম কি জানুন

কোজাগরী লক্ষী পূজার পাঁচালী ও ব্রত কথা Mp3 Song

প্রতি বৃহস্পতিবার সকাল ও সন্ধ্যায় শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে মা লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করতে হয়। কিন্তু আমার মা বোনদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা চোখে না দেখার কারণে মা লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়তে পারেন না তাই তারা চাইলে এখান থেকে মা লক্ষ্মীর পাঁচালি লি-রি-ক্স আকারে শ্রবণ করতে পারেন। ধর্মে বলা আছে মন্ত্র কিংবা শ্রুতি যদি পাঠ করতে না পারেন তাহলে মন দিয়ে একবার শ্রবণ করুন এতেও মন্ত্র পাঠের সমান পূণ্য লাভ করা যায়।

মা লক্ষ্মীর পাঁচালী নিয়ে শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকের পোস্টে আমরা মা লক্ষ্মীর পাঁচালী ও ব্রত কথা , লক্ষ্মীর পাঁচালী pdf Download ও আরো গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আজকের পোস্টটি পড়ে আপনার কাছে কেমন লেগেছে সেটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল। আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url