ইন্টারনেট রচনা pdf | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

ইন্টারনেট

ইন্টারনেট
বা ইন্টারনেট ও আজকের বিশ্ব
বা ইন্টারনেট বিশ্বের সেতুবন্ধন
বা আধুনিক শিক্ষায় ইন্টারনেট

ভূমিকা ঃ আমাদের এ দৈনন্দিন গতিশীল ও ব্যস্ত জীবনকে ভালোবেসে উপভোগ করার জন্য যে সকল উপকরণ, সুযোগ-সুবিধা, জ্ঞান ও প্রযুক্তি থাকার প্রয়োজন এখন তা অনেকটা মানুষের নাগালের মধ্যে। আর ইন্টারনেট হলো বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বশেষ সংস্করণ। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সাথে কম্পিউটারকে কাজে লাগিয়ে তথ্য গ্রন্থিতে গাথা সম্ভব হয়েছে। কাজেই ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনধারায় যে পরিবর্তন এসেছে তা রীতিমত ঈর্ষণীয়।

ইন্টারনেট কী? ঃ ‘ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস' যা বর্তমানে ইন্টারনেট (Internet) নামে পরিচিত। নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারসমূহকে অন্যান্য নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই ইন্টারনেটের কাজ। নেটওয়ার্কসমূহ একত্রিত হয়ে পৃথিবীব্যাপী যে নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি করেছে তাকেই ‘ইন্টারনেট' বলে। তাই আমরা বলতে পারি, ইন্টারনেট হচ্ছে নেটওয়ার্কসমূহের নেটওয়ার্ক।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ সবার জন্য শিক্ষা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ ঃ ব্যবহারকারীগণ দু'ভাবে গ্রাহক হতে পারেন। একটি অন-লাইন ইন্টারনেটে। টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারের ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্য যেকোনো সার্ভিস প্রভাইডারের সাথে যুক্ত করার পদ্ধতিকে অন-লাইন ইন্টারনেট বলে। তাতে ব্যবহারকারীগণ যেকোনো সময় অন্য যেকোনো প্রভাইডারের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। এ ছাড়া IPACCES পদ্ধতিতে সরাসরি অন-লাইন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যয়বহুল। কাজেই সাধারণ গ্রহাকরা আগ্রহবোধ করে না। দ্বিতীয়টি হলো অফ-লাইন ইন্টারনেট বা ই-মেইল। গ্রাহকগণ নিকটবর্তী কোনো সার্ভারকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে বলেই এটাকে অফ- লাইন ইন্টারনেট বা ই-মেইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এ তথ্য মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আদান প্রদান করা যায়।

ইন্টারনেট তৈরির ইতিহাস ঃ প্রতিযোগিতা দিয়ে শুরু হয় যেকোনো কাজের অগ্রগতি। আর তাই তখন আমেরিকা ও রাশিয়ার সমরবিদরা পারমাণবিক বোমার ভয়ে আতঙ্কিত থাকত। কারণ, যেকোনো সময় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। যার ফলে আবিষ্কার করা হয় ইন্টারনেট। মার্কিন সামরিক বাহিনী টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেন। তারা বিশ্বব্যাপী নিজেদের অবস্থানগুলোর সাথে সার্বক্ষণিক গোপন যোগাযোগের জন্য ১৯৬৯ সালে প্রথম ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে। তখন এটি MILNET নামে পরিচিত ছিল। এই প্রযুক্তিকে আরো জনকল্যাণমুখী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেয়া হলে তারা শিক্ষা গবেষণা এবং তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেন।

১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন' সর্বসাধারণের জন্য একটি অন্য রকম যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেন। এর নাম দেয়া হয় 'নেফনেট'। তিন বছরের মাথায় নেফনেট সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে আরো অনেক ছোট-বড় নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তার জন্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয় যাতে আর কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা না যায়। ১৯৯০ সালে তাই গঠন করা হয় কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক। আর বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয়ে ওঠে ইন্টারনেটের সাথে। ১৯৯৩ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা চালু করা হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রায় বিশ হাজারের উপর নেটওয়ার্ক যুক্ত হয়েছে। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় তিন কোটির উপর (২০০৮)।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা ঃ ইন্টারনেটে অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন News group (নিউজ গ্রুপ) একটি তথ্য বা সংবাদ প্রদানকারী সংস্থা। ইন্টারনেটে নিউজ গ্রুপ ব্যবহার করে বিশ্বের সংবাদ জানা যায়। গবেষণাধর্মী বই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। যেমন ইউনাইটেড স্টেট অব কংগ্রেস বা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বাংলাদেশে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়া যায়। এর সাাহায্যে এক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত লেন-দেন করা যায়। মামলার জন্য বিদেশি আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া যায়। ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সহজ পথের সন্ধান দিয়েছে। অফিসের হাজারো ফাইলের মধ্যে থেকে Archi পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় ফাইলটি খুঁজে আনা যায়। ইন্টারনেট বর্তমানে চিকিৎসায়, ব্যাংকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তাই ইন্টারনেট বিভিন্ন কাজের সমাধান দিচ্ছে। ইন্টারনেটের সুবিধাগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো : ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, ই-মেইল, নিউজ গ্রুপ, টেলনেট, গোফার এবং ফাইল ট্রান্সফার। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব দ্বারা অন্যান্য কম্পিউটারের তথ্য পড়া ও শোনা যায় । ই-মেইল দিয়ে অন্য কম্পিউটারের টাইপ করে অন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সাথে তথ্য বিনিময় করা যায়। গোফারের সাহায্যে ইন্টারনেট হতে ফাইল খুঁজে বের করে তা নিজ কম্পিউটারের কপি করা যায়। আর ফাইল ট্রান্সফারের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ফাইল আদান- প্রদান ও সংরক্ষণ করা যায়।

ইন্টারনেটের অনলাইন অফলাইন ঃ কোনো দেশে যদি ইন্টারনেটের সার্ভার থাকে তবে এ সার্ভারের সাহায্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে রাখা অপর সার্ভারে যোগাযোগ করা যায়। এক ব্যবহারকারীর সাথে অপর ব্যবহারকারীর এ যোগাযোগ লাইনকে বলে অনলাইন। কিন্তু সার্ভারবিহীন দেশের ক্ষেত্রে অপর দেশের সার্ভারে প্রথমে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। একে বলা হয় অফলাইন । অফলাইন বেশ ব্যয়বহুল, এমনকি সময়ও বেশি লাগে। কিন্তু অনলাইন এ দুটির বিপরীত ব্যবস্থা। অবশ্য দুটিই জরুরি প্রয়োজন ।

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার ঃ বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়েছে ষাটের দশক থেকে। তবে টাইপ রাইটারের বিকল্প হিসেবে অধিক ব্যবহার হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্পৃক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের সাম্রাজ্যে ইন্টারনেটের সাথে। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে অন-লাইন নেটওয়ার্ক প্রচলন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে টি এন্ড টি বোর্ড, রয়টার, আই.এস.এন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, বেক্সিমকো, সাইটেক কোম্পানি লিমিটেড নামে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ভি-স্যাট স্থাপনের অনুমতি প্রদান করে। বর্তমানে এর দিন দিন প্রসার ঘটছে।

ইন্টারনেটের অসুবিধা ঃ ইন্টারনেটের যেমন ভালো দিক আছে তেমনি খারাপ দিক আছে। অসাধু ব্যবহারকারী মিথ্যে তথ্য প্রদান করে, পর্নো ছবির আদান-প্রদান, কিংবা জুয়া খেলা ইত্যাদি প্রদান করে। আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে লাখ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১৯৮৮ সালে ইচ্ছেকৃতভাবে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ‘ইন্টারনেট ওয়ার্ম' নামের ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে কয়েক লাখ কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ধরনের কার্যকলাপ থেমে নেই। আরো অহরহ ঘটছে।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও তার প্রতিকার | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

ইন্টারনেট সংযুক্তিকরণ ঃ প্রথমে একটা কম্পিউটার দরকার। তার সাথে মডেম ও টেলিফোন লাইন। ইন্টারনেটে যারা লাইন দেন তাদের কাছ থেকে মাসিক ফি'র বদলে সংযোগ নিতে হয়।

উপসংহার ঃ বিশ্ববাসী নিবিড়ভাবে ইন্টারনেটের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। আগামী শতাব্দীতে প্রত্যেক দেশেই ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটবে। ফলে তথ্য আদান-প্রদান, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা-শিক্ষা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় বিপ্লব ঘটবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Anonymous
    Anonymous July 1, 2024 at 9:31 AM

    অনেক সুন্দর একটি রচনা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url