ভাবসম্প্রসারণ: হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান

হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান

হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান

মূলভাব ঃ কঠোর-কঠিন জীবনদৃষ্টি ও স্পষ্ট ভাষণের ক্ষমতা দিয়ে দারিদ্র্য মানবজীবনকে গৌরবময় করে তোলে। দারিদ্র্য মানুষকে শেখায় আত্মদৃষ্টির জীবন ও সংঘাতে মাথা উঁচু করার কৌশল । মানবসমাজকে বাস্তবিক শিক্ষা প্রদান করে দারিদ্র্য তাকে মহিমান্বিত করে তোলে ।

সম্প্রসারিত ভাব ঃ সৃষ্টির উষালগ্নে মানুষ যখন সবে জ্ঞান ও ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হয়েছে, তখন থেকেই তাদের মধ্যে শ্রেণিবিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। এই বিভাজন হয়েছে প্রথমত অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর, দ্বিতীয়ত জ্ঞান ও বর্ণবাদের ওপর। অর্থনৈতিক শ্রেণিসাম্য থেকে দুটি প্রধান শ্রেণি পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছে— ধনী ও দরিদ্র। ধনলাভে সমর্থ হয়ে একশ্রেণি সমাজে আভিজাত্য পেয়েছে, অন্য শ্রেণি তার পদলেহন করেছে। দ্বিতীয় এ শ্রেণির মানুষকে সবসময় সমাজের নিষ্ঠুরতা ও প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। তার জীবনীশক্তি ক্ষয় হয়েছে সবসময়; বিনিময়ে সে অর্জন করেছে এমন এক জীবনদৃষ্টি যা দিয়ে পৃথিবীর সকল কঠোরতাকে প্রতিহত করা যায়। বঞ্চনা, শোষণ তার মধ্যে ক্রমান্বয়ে দিয়েছে স্পষ্ট ভাষণের ক্ষমতা। সে কারণে ধন হয়তো সে অর্জন করতে পারেনি, কিন্তু অন্যায়ের চোখে চোখ রেখে তার প্রত্যুত্তর করেছে।

পৃথিবীর ঊষর জমিকে কর্ষণ করে সে সোনার জন্ম দিয়েছে, পর্বতসম বোঝা মাথায় নিয়ে সে পৃথিবীর ভারকে লাঘব করেছে, শক্ত হাতে হাতুড়ি চালিয়ে জন্ম দিয়েছে বাস্তবিক বিজ্ঞানের নানা সরঞ্জামের। কিন্তু আখেরে তার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি । দরিদ্র হয়ে জন্মানোর সমাজকৃত দায়কে সে সানন্দে মাথায় তুলে নিয়েছে। যিশুর মতো কণ্টক হার গলায় পরে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়েছে সামনের দিকে। মাথা উঁচু করার প্রত্যয় এসেছে সে জীবনদৃষ্টি থেকেই। দারিদ্র্যের মাহাত্ম্য জন্ম নিয়েছে ওই নির্দিষ্ট মুহূর্তে। যাকে সমাজের তথাকথিত ধনিকশ্রেণি অবজ্ঞাভরে দূরে ঠেলেছে তারাই আবার নিজেদের সকল বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে দারিদ্র্যের শরণাপন্ন হয়েছে। কিন্তু নিজের মহত্ত্বের গুণে সে আহ্বানকে দূরে ঠেলেনি দরিদ্র সমাজ। বরং অন্তরাত্মায় আপন করে রক্তে জলে ঘামে পৃথিবীকে প্রতি মুহূর্তে সুসভ্য করে বিনির্মাণ করেছে।

মন্তব্য ঃ দারিদ্র্য মানুষের আর্থিক অবস্থাকে স্পষ্ট করলেও তার মানসিক শ্রেণিকে উচ্চকিত করে না। মানবিকতার জয়গান হয় অন্তরাত্মা থেকে, যা দারিদ্র্যের কশাঘাতেই অর্জিত হওয়া সম্ভব। কারণ দারিদ্র্যের সামাজিক ও বৈশ্বিক সংঘর্ষ রয়েছে বলেই মানুষ জীবনকে গৌরবময় করার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রমে নিজেদের নিয়োজিত করেছে এবং জীবনের মহত্ত্ব অর্জন করেছে ।

সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url