বিশ্বায়ন/গ্লোবালাইজেশন রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশন

বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশন রচনা

ভূমিকা ঃ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বর্তমান এক বহুল আলোচিত বিষয় ‘বিশ্বায়ন’। ধারণাগত অর্থে বিশ্বায়ন বলতে বোঝায় ‘বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও পরিবেশের তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ থেকে একই দিকে উত্তরণ। উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করাই এর মূল উদ্দেশ্য। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বায়নের প্রভাব • সম্পর্কে পর্যালোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি বিষয় ।

বিশ্বায়ন ঃ বিশ্বায়ন হলো পারস্পরিক ক্রিয়া ও আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় সূচনা করে। অন্যভাবে বলা যায়, বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থাসমূহ বিশ্বজুড়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গড়ে তোলে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বায়ন বলতে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে একাত্মতা বোঝায়। ‘উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়, প্রতিবন্ধকতা থাকতে না শুষ্ক ও বাণিজ্যে, একমাত্র মুক্ত বাণিজ্যেই জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বোত্তম পন্থা'- এরূপ অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথ ধরেই জন্মলাভ করেছে মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা। দানা বেঁধেছে বিশ্বায়ন।

আরো পড়ুন ঃ

বিশ্বায়নের কারণ ঃ বিশ্বায়নের কারণ বহুবিধ। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে মুনাফা অর্জন ও আর্থিক আধিপত্য বিস্তার। এক সমীক্ষার দেখা যায়, গ্লোবাল কোম্পানিসমূহের সম্পদের এক বিশাল অংশই নিজ দেশের (Home country) বাইরে অবস্থিত এবং কোনো কোনো গ্লোবাল কোম্পানির বিক্রির সিংহভাগই অনুষ্ঠিত হয় বহির্বিশ্বে। বিশ্বায়নের অন্যান্য কারণসমূহ নিম্নরূপ : ১. প্রযুক্তিগত বিশ্বায়ন; ২. তথ্যগত বিশ্বায়ন; ৩. অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন; ৪. সামরিক বিশ্বায়ন; ৫. পরিবেশগত বিশ্বায়ন; ৬. সামাজিক-রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক বিশ্বায়ন ।

বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব ঃ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত প্রসারে আজ পৃথিবী যে সত্যি সত্যিই ছোট হয়েছে আছে তার প্রমাণ পেতে বেশি দূর যেতে হয় না। ঘরে বসেই কম্পিউার ও ইন্টানেটের বদৌলতে সমগ্র পৃথিবীর খোঁজ-খবর পাওয়া যায়। এই সবই বিশ্বায়নের ইঙ্গিত বহন করে। বিশ্বায়নকে তাই উপেক্ষা করা দূরূহ। বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ : ১. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন; ২. বৃহদায়তন কর্মকাণ্ডের সুবিধা; ৩. ভৌগোলিক শ্রমবিভাগ ও বিশেষায়ন; ৪. গ্লোবাল ভাবমূর্তি উন্নয়ন; ৫. জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার স্থানান্তর; ৬. অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি; ৭. আন্তর্জাতিক সংঘাত হ্রাস ।

বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব ঃ বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায় উন্নয়নশীল দেশসমূহে। এ কারণেই এসব দেশের কৃষক সম্প্রদায়, শ্রমিক শ্রেণি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইত্যাদি শ্রেণির লোকেরা বিশ্বায়নবিরোধী আন্দোলন রসদ যোগায়। নিচে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবসমূহ আলোচনা করা হলো : ১. অর্থনৈতিক শোষণ ও মেধাপাচার; ২. অসম প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি; ৩. রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা কঠিন; ৪. শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয়; ৫. সাংস্কৃতিক বিপর্যয়; ৬. বেকার সমস্যা বৃদ্ধি ।

বিশ্বায়ন ও বাংলাদেশ ঃ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাধারণত বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবই বেশি লক্ষ করা যায়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : ১. বিদেশী পণ্যের প্রসার; ২. অসুসংহত বাজার কাঠামো; ৩. নিম্ন মানব উন্নয়ন সূচক; ৪. ভারতের সাথে পণ্য প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ; ৫. বিশ্ব অর্থনৈতিক বাজরে প্রবেশের তাগিদ; ৬. বিশ্বজনীন প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ।

আরো পড়ুন ঃ

বিশ্বায়নের ভবিষ্যৎ ঃ ভবিষ্যৎ সব সময় অনিশ্চয়তার। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলা অনেকাংশে সম্ভবপর হয়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যে ধারা তাতে ধনী দেশগুলো ধনী হচ্ছে এবং গরিব দেশগুলো আরো বেশি গরিব হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে ধনী দেশগুলোকে গরিব দেশগুলোর প্রতি আরো বেশি নমনীয় ও সহনশীল হতে হবে, পাশাপাশি বাজার অর্থনীতিকে আরো বেশি সমাজনৈতিক ও কল্যাণমুখী হতে হবে।

উপসংহার ঃ আধুনিক সভ্যতার গতিশীল চক্রের এক অবশ্যম্ভাবী ফল বিশ্বায়ন। তাই বিশ্বায়নকে নব্য উপনিবেশবাদ বলে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্বায়নকে যত নেতিবাচক বিশেষণেই ভূষিত করা হোক না কেন, বিশ্বায়ন এগিয়ে যাবে তার আপন গতিতে। তাই এরূপ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে কোনো রাষ্ট্রই দূর থাকতে পারে না। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া বিশ্বায়নের পথে অগ্রসর হলে তা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।

তবে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন তখনই ফলপ্রসূ ও কার্যকর হবে যখন এর সুফল সর্বত্র সমানভাবে বণ্টন করা যাবে। এজন্য প্রয়োজন সুষম মানের সম্পদ উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, সম্পদের সুষম বণ্টন ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো। তবেই বিশ্বায়নের পথে বাংলাদেশের যাত্রা হবে ফলদায়ক ।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url