বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ রচনা

বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪

ভূমিকা ঃ আনন্দ, বেদনা, রোমান্স নিয়ে প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর বিশ্ববাসীর সম্মুখে হাজির হয় বিশ্বকাপ ফুটবল। 'Greatest Show on earth' খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ এর ২০তম আসর বসে ব্রাজিলে। ১২ই জুন শুরু হয়ে ১৩ই জুলাই ২০১৪ পর্যন্ত দীর্ঘ একমাস ব্যাপী চলে এ ফুটবল মহাযজ্ঞ । ৩২টি দলের অংশগ্রহণে মোট ৬৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১২টি ভেন্যুতে। বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ খেলা হয় ব্রাজুকা নামক বল দিয়ে আর এ বিশ্বকাপের মাসকটের নাম ছিল ফুলেকো।

ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম ও শেষ ঃ ১৯৩০ সালে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত (২০১৪) মোট ২০ বার। এ ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসেছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরে। ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সাম্বার দেশ ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে। ঐতিহাসিক মারকানা আবার ফিরে পাই তার হারানো ঐতিহ্য। কিন্তু নিজের মাঠে জার্মান লজ্জার ডুবে মারকানার টিকিট মিস করে স্বাগতিকরা। আর আর্জেন্টিনাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চতুর্থবারের মতো ইতিহাসের খাতায় নিজেদের নাম চিরস্মরণীয় করে রাখে জার্মানরা।

আরো পড়ুন ঃ

গোলের খেলা ফুটবল ঃ গোল ফুটবলের প্রাণস্বরূপ। ব্রাজিল বিশ্বকাপে মোট গোল হয়েছে ১৭১টি। তবে উদ্বোধনী খেলায় প্রথম গোলটি হয় আত্মঘাতী। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের মার্সেলো নিজের জালে নিজেই বল জড়ান। অন্যদিকে নিজের দলের হয়ে প্রথম গোল করেন ব্রাজিলের নেইমার জুনিয়র। সে হিসেবে ২০১৪ বিশ্বকাপের প্রথম গোলটি হলো নেইমার জুনিয়রের। সর্বোচ্চ গোলদাতা হামেস রদ্রিগেজ। কলম্বিয়ান এ খেলোয়াড় ৬টি গোল করে গোল্ডেন বুট জিতলেন। আর এক ম্যাচে সর্বাধিক গোল হয় জার্মানি বনাম ব্রাজিলের মধ্যকার সেমিফাইনাল ম্যাচে ৮টি। এ বিশ্বকাপের শততম গোলদাতা ব্রাজিলের নেইমার জুনিয়র এবং সর্বশেষ গোলদাতা জার্মানির ম্যারিও গোটশে ।

জয়-পরাজয় ঃ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪-এ মোট ৬৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৫১টি ম্যাচের ফল নিষ্পত্তি হয়। তবে সবচেয়ে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে। জার্মানদের তীব্র গতির মুখে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে ব্রাজিলের রক্ষণভাগ। গুণে গুণে সাতটি গোল হজম করতে হয় স্বাগতিকদের। যদিও দ্বিতীয়ার্ধের শেষভাগে একটি গোল শোধ করতে সক্ষম হয় ব্রাজিলের অস্কার। এ পরাজয়ের ফলে মারাকানা ফাইনালের টিকিট হারায় স্বাগতিকরা। অন্যদিকে অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করে জার্মান বাহিনী। অন্য সেমিতে হল্যান্ডকে ট্রাইবেকারে পরাজিত করে ২৪ বছর পর বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের টিকিট হাতে পায় মেসির আর্জেন্টিনা দল।

স্বপ্নের ফাইনাল ঃ প্রায় ৭৪,৭৩৮ জন দর্শককে বুকে ধারণ করে ১৩ই জুলাই ২০১৪ মারকানায় বসে "The greatest show on earth' এর ফাইনাল ম্যাচ। যদিও এই ম্যাচে মহাদেশীয় দল আর্জেন্টিনাকেও কান্নায় এনে দিয়েছিল। শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের মধ্যে দিয়ে খেলা এগোতে থাকে। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে হিগুয়েনের গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে পড়েন তিনি । জার্মানিও অনেকগুলো সহজ সুযোগ মিস করে। তবে মেসির দূর থেকে নেওয়া শর্টটি গোলপোস্টের জাল খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়ে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। এ দিন জার্মানির গতির কাছে অনেকটাই নাজেহাল হয়ে পড়ে আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগ। নির্ধারিত সময়ে কোনো দল গোল করতে না পারাই খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর এ অতিরিক্ত সময়ে কাজের কাজটি করেন জার্মানির ম্যারিও গোটশে। তার এ গোলের সুবাদে 

আরো পড়ুন ঃ

সারাবিশ্বের সকল জার্মান সমর্থকেরা যেন আনন্দের জোয়ারে ভাসতে থাকেন। বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যে কিনা বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমে জয়সূচক গোলটি করেন। মারাকানা থেকে বার্লিন হয়ে ঢাকার রাজপথে ও এ জোয়ারের ঢেউ লাগে। আর রেফারি নিকোলা রিজোল্লি (ইতালি) যখন বাঁশিতে শেষ ফু দেন তখন জার্মানদের কর্তৃত্ব ফিরে আসে বিশ্ব ফুটবলের উপর। অন্যদিকে এ সময়ের সেরা খেলোয়াড় মেসির হৃদয় ভাঙে বেদনার নীলের আভায়। মারাকানা থেকে এ শোকের হাওয়া লাগে বুয়েন্স আয়ার্স সহ সমগ্র বিশ্বের আর্জেন্টিনা সমর্থক গোষ্ঠীর মনে।

রেকর্ডময় বিশ্বকাপ ঃ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪ ছিল রেকর্ডের ছড়াছড়ি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম এক টুর্নামেন্টে ১৭১টি গোল হয়। এছাড়াও জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা চার বিশ্বকাপে ১৬ গোল করে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার স্থান নিজের করে নেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে স্বাগতিক হিসেবে সবচেয়ে বাজে হারের রেকর্ড গড়ে ব্রাজিল। সেমিফাইনালে তারা জার্মানির কাছে ১-৭ গোলে পরাজিত হয় । এবার প্রথম কোনো ইউরোপের দেশ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায়। যুক্তরাষ্ট্রের টিম হাওয়ার্ড এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোল সেডের রেকর্ড গড়েন এই বিশ্বকাপে ।

গোললাইন প্রযুক্তির ব্যবহার ঃ গ্রুপ পর্বে ই-গ্রুপের ফ্রান্স-হন্ডুরাস ম্যাচে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয় গোললাইন প্রযুক্তি। ১৫ই জুন ২০১৪ অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথম কোনো গোলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।

সেরাদের সেরা ঃ ২০১৪ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি স্বরূপ গোল্ডেন বল পান লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)। কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার হামেস রদ্রিগেজ পান গোল্ডেন বুট। এছাড়াও সেরা গোলরক্ষকের খেতাব গোল্ডেন গ্লাভ জেতেন জার্মানির ম্যানুয়েল নয়্যার এবং সেরা তরুণ ফুটবলার নির্বাচিত হয় ফ্রান্সের পল পগবা ।

আরো পড়ুন ঃ

উপসংহার ঃ সদ্য সমাপ্ত "ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪” এখন সবার কাছেই অতীত। তবে ইউরো বিশ্বকাপে খেলতে খেলতে ক্লান্ত স্পেনের বিদায় কারো কাছে চমক না হলেও ডু অর ডাই ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে অলআউট ফুটবল না খেলার জন্য ৪ বারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিদায় ছিল অনেকটাই করুণ। ৮২ ও ৮৬'র ন্যায় আবারো প্রমাণিত হলো ফ্রান্সের চিরশত্রু জার্মানি । বিশ্বকাপ আর হতাশা যদি কারো জন্য হয় তা নেদারল্যান্ডস।

নিজেদের প্রতি আত্ম-বিশ্বাস, অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের সমন্বয়ের অভাব, জার্মানির সাথে জেতার মনোভাব ইত্যাদি ছিল ব্রাজিলের লজ্জাকর পরাজয়ের কারণ। আর আর্জেন্টিনার শক্ত ডিফেন্সকে বুলেট গতির শটে পদদলিত করে জার্মানির উত্থানের মধ্যে দিয়ে পর্দা নামে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ এর।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url