জাতীয় পশু বাঘ রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

জাতীয় পশু বাঘ রচনা

জাতীয় পশু : বাঘ

ভূমিকা ঃ অপরূপ প্রাকৃতিক লীলাবৈচিত্র্যের উপস্থিতি বাংলাদেশকে দিয়েছে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেশের জীবজন্তু বা পশুপাখি। নানা প্রজাতির পশুর উপস্থিতে বাংলার সৌন্দর্যকে শোভামণ্ডিত করে থাকলেও অনন্য করেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এটি বাংলাদেশের জাতীয় পশু। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের প্রাণ বৈচিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছে। বিশ্বের অনেকে এর নামেই বাংলাদেশকে চিনে ।

আকার ও আকৃতি ঃ বৃহৎ বন্যবিড়াল হিসেবে স্বীকৃত রয়েল বেঙ্গল টাইগার মাথাসহ দৈর্ঘ্যে ১৪০-২০০ সে. মি. এবং গড় উচ্চতা ৯৫- ১১০ সে.মি। পূর্ণ বয়স্ক বাঘের ওজন ১৮০-২৮০ কেজি এবং বাঘিনীর ওজন ১১৫-১৮৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাঘের তুলনায় বাঘিনী আকারে ছোট হয়। চোখের মণি গোল। নখ থাবার ভেতরে লুকানো থাকে ।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের পাখি রচনা

প্রকৃতি ঃ বাঘের দেহবর্ণ গাঢ় গলুদ বা লালচে হলুদ। তার মধ্যে লম্বা কালো ডোরা কাটা দাগ। পেটের দিকে অনেকটা সাদা। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলো কালো বেড় থাকে। লেজের আগা একেবারে কালো। কানের পেছনটা কালো রঙের, তার মধ্যে একটা স্পষ্ট কালো দাগ থাকে । রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিজের চেয়ে দ্বিগুণ বড় জন্তু অনায়াসে শিকার করতে পারে। সুযোগ পেলে মানুষকেও আক্রমণ করে।

খাদ্যাভ্যাস ঃ রয়েল বেঙ্গল টাইগার মাঝারি ও বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী, হরিণ, বুনো শূকর ইত্যাদি শিকার করে। বড় আকরের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দৈনিক গড় মাংসের চাহিদা ৮-৯ কেজি ।

প্রাপ্তিস্থান ঃ অতীতে বাংলাদেশের প্রায় সব বনাঞ্চলেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাওয়া গেলেও বর্তমানে শুধু সুন্দরবনেই এদের বসবাস রয়েছে। অবৈধ শিকারের ফলে এটি এখন বিপন্নপ্রায় প্রাণী। বাংলাদেশ ভারত, নেপাল, চীন ও পশ্চিম মায়ানমারে কিছু বনাঞ্চলে বাঘের বসবাস রয়েছে। ভারত, বাংলাদেশ, ভুটানে ও নেপালে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা প্রায় চার হাজারের মতো। অথচ, বাংলাদেশের পূর্বে বিপুল পরিমাণে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উপস্থিতি ছিল। এখন এটি বিপন্নপ্রায় প্রাণী ।

সংখ্যা ঃ বাঘশুমারির বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি পাগমার্ক পদ্ধতিতে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে বাঘের পায়ের ছাপ পর্যবেক্ষণ করে ‘প্লাস্টার অব পেরিস' ঢেলে ছাপটি তুলে আনা হয়। পায়ের মাপ ও ওজনের তথ্য কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ১৯৭৫ সালে ৩৫০ টি, ১৯৮০ সালে ৪৩০ থেকে ৪৬০ টি এবং ১৯৮২ সালে ৪৫০ টি বাঘ সুন্দরবনে ছিল বলে জানা যায়। বন বিভাগের জরিপ অনুযায়ী এই সংখ্যা এখন আরো কমে এসেছে। 

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের মাছ রচনা

বিলুপ্তির কারণ ঃ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। কারণ, সুন্দরবনে বাঘের খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন অন্য পশুদের পাশাপাশি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জীবন বিপন্ন করছে। তাই হারিয়েছে আমাদের এই সম্পদ।

সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও উপায় ঃ দেশীয় স্বার্থে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে সংরক্ষণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। কারণ, পুরো বিশ্বে একমাত্র আমাদের দেশই এই সম্পদের আধিক্যের অধিকারী। এই পশুটিকে রক্ষার জন্য আমাদের দেশের বনাঞ্চলে অভায়ারণ্য গড়ে তোলা প্রয়োজন । অবৈধ শিকার বন্ধে সরকারি নীতিমালা ও আইন থাকলেও যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় বাঘ শিকার বন্ধ করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন ।

উপসংহার ঃ সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যের অনন্যতায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিঃসন্দেহে অসাধারণ। আমাদের জাতীয় পশু হিসেবে এটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি বিশ্ব ঐতিহ্যেরও এটি অংশ। তাই একে রক্ষা করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব।

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url