বাংলা রচনা চা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
শিক্ষার্থী বন্ধুরা নিচে আমরা তোমাদের জন্য চা রচনাটি শেয়ার করেছি। তোমরা যারা যারা এই রচনাটি পড়তে চাও তাঁরা চাইলে পড়ে নিতে পার।
এছাড়াও তোমাদের যদি আরও কোনো পছন্দের রচনা থাকে তাহলে সেটি তোমরা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পার। আমরা সেটিও সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।
চা
সূচনা ঃ বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে চা অন্যতম। এটা অত্যন্ত সুলভ ও জনপ্রিয় পানীয়। অভিজাত ও অনভিজাত সকলেরই এটা প্রিয় পানীয়। চা পরিবেশন করে আতিথেয়তা আমাদের জীবনযাত্রায় অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে নাশতার টেবিলে খবরের কাগজ পড়ার সময় এক কাপ চা আজকাল একটি সাধারণ ঘটনা। তাছাড়া যেকোনো সময়ে এক পেয়ালা গরম চা পারে সকল অবসাদ, ক্লান্তি দূর করে নব উদ্যম এনে দিতে।
প্রচলনের ইতিহাস ঃ বর্তমান যুগে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে চায়ের প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চায়ের চাষ ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৩টি চা বাগান রয়েছে। চাষের আদি জন্মস্থান চিন। সেখান থেকে ইউরোপে এর প্রচলন শুরু হয় । ইংরেজরা আমাদের দেশে এর আমদানি করে ।
আরো পড়ুন ঃ জাতীয় ফুল শাপলা রচনা
উৎপাদন ঃ প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও যেখানে পানি জমে থাকে না এমন উঁচু ঢালু ও পাহাড়ি এলাকায় চা জন্মে। সে জমিতে পানি জমে থাকে সেখানে চায়ের চাষ হয় না। চা চাষের জন্য পার্বত্য ভূমির মাটি অবশ্যই উর্বর হতে হবে। পাহাড়ি অঞ্চলের উর্বর মাটি চা চাষের জন্য উপযোগী । সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচুর চা জন্মে। এ ছাড়া ভারত, শ্রীলঙ্কা, চিন, জাপান, ব্রিটেন, মিয়ানমার, আমেরিকা প্রভৃতি দেশেও চা জন্মে । বর্তমানে চা উৎপাদনে ভারত প্রথম এবং চা রপ্তানিতে শ্রীলঙ্কা শীর্ষে অবদান করছে।
চাষপ্রণালি ঃ চা রোপণ করার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। প্রথমে চায়ের চারা জন্মাতে হয়। চারাগুলো যখন একটু বড় হয় তখন সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে রোপণ করা হয়। বৃষ্টিবহুল ঢাল পাহাড়ি অঞ্চলে চারাগুলোকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ফাঁক ফাঁক করে লাগাতে হয়। কচি কচি চায়ের চারাগুলো দেখতে খুবই সুন্দর দেখায়। চা গাছ বাঁচাবার জন্য যত্ন ও পরিশ্রম করে খেতের আগাছাগুলো নিড়িয়ে ফেলতে হয়। পোকামাকড় যাতে গাছের ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। চা গাছের গোড়া ও পাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হয়। চা গাছ অবশ্য দশ-বারো ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে সচরাচর তিন-চার ফুটের বেশি বাড়লে চা পাওয়া যায় না। সেজন্য বেশি বাড়ার সময় চারার মাথা ছেঁটে দেওয়া হয়, গুঁড়িগুলোও ছেঁটে ফেলা হয়।
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান
চা গাছগুলো যখন নির্দিষ্ট পরিমাণ বড় হয় তখনই কচি পাতা সংগ্রহ শুরু হয়। বছরে অন্তত চার বার চা পাতা সংগ্রহ করা যায় । এপ্রিল C মাসে চা পাতা প্রথমবার কাটা হলে জুনের প্রথমদিকে দ্বিতীয়বার কাটা যায় । তৃতীয় ও চতুর্থবার পাতা কাটতে হয় জুলাই-আগস্ট মাসে।
প্রক্রিয়াকরণ ঃ চা পাতা সংগ্রহ করার পর পাতাগুলোকে শুকাতে হয়। শুকালে চা পাতাগুলো কলের সাহায্যে চেপ্টাভাবে গুঁড়ো করে গুদামজাত করা হয়। এতে চায়ের একটা বিশেষ গন্ধ আসে। তারপর বিশেষ নিয়মে আগুনে সেঁকে চালনির সাহায্যে চায়ের শ্রেণিবিভাগ করা হয় এবং বাজারজাত করার জন্য বাক্সে ভরে তৈরি করা হয়।
চা প্রস্তুত প্রণালি ঃ চা তৈরি করতে হলে একটি পাত্রে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হয়। ফুটন্ত পানিতে পরিমাণ মতো চা পাতা ঢেলে দিয়ে মিনিট পাঁচেক সিদ্ধ করে নামিয়ে নিতে হয়। তারপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিয়ে চায়ের কাপে চা ঢালতে হয়। চিনি ও দুধ যার যার রুচি অনুযায়ী পরিমাণ মতো নিতে হয়। লেবুর রস মেশানো চা-কে লেমন চা বলে। তাছাড়া অনেকে আদা, দারুচিনি ও লং মিশিয়ে চা খেতে ভালোবাসে।
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল রচনা
উপকারিতা ঃ শীতপ্রধান দেশের লোকের জন্য চা বেশ উপকারী। চা খেলে শরীরের অলসতা ও জড়তা দূর হয়, কাজ করতে ভালো লাগে । চা পান করলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায়। সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথায় চা খেলে আরাম পাওয়া যায়। আমাদের দেশে অতিথি আপ্যায়নের জন্য এর চেয়ে সস্তা আর কিছু নেই। চা থেকে রং, ঔষধ প্রস্তুত হয়। এ ছাড়া চা পচন নিবারক। বিদেশে চা রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের পরেই চা-এর স্থান ।
অপকারিতা ঃ চা উপকারের পাশাপাশি অপকারও করে থাকে। খুব বেশি চা পান করলে ক্ষিদে কমে যায় এবং রাতে ঘুম হয় না। শিশুদের কোমল পাকস্থলীর জন্য চা খুবই ক্ষতিকর। তবে সর্দি-কাশিতে পাতলা চায়ের সঙ্গে আদার রস মিশিয়ে তাদের খেতে দেওয়া যায়। নেশাগ্রস্তের মতো চা পান করা অনুচিত।
উপসংহার ঃ আধুনিক যুগে চা একটি লাভজনক ব্যবসা। আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে আরও অধিক চা উৎপাদন করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এতে আমাদের দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url