আমার প্রিয় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

আমার প্রিয় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য

আমার প্রিয় কবিঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য

ভূমিকা ঃ আমার প্রিয় কবি বিশ্বের পরম বিস্ময় সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাত্র একুশ বছর বয়সের সংক্ষিপ্ত জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে যা দিয়েছেন তা তাকে অমর করে রেখেছে। অকাল প্রয়াণের শোকোচ্ছ্বাসে নয়; তার সৃষ্টি সম্ভারের গুণগত মান বিচারে তিনি আমার প্রিয়।

কবি-পরিচয় ঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ সালের ১৫ই আগস্ট কলকাতার কালী ঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য এবং মাতা সুনীতি দেবী । নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য প্রকাশনা শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। সুকান্তের শৈশব কেটেছে বাগবাজারের নিবেদিতা লেনে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রেরণা ও উৎসাহে সুকান্তের কবি জীবনের সূচনা হয়। কবি তাঁর জীবৎকালে তাঁর কোনো গ্রন্থের প্রকাশনা দেখে যেতে পারেননি। 

তিনি যখন যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, প্রেসে তখন 'ছাড়পত্র' কাব্য গ্রন্থটির প্রকাশনার কাজ চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পূর্ণ গ্রন্থ দেখে যেতে পারেননি। ১৯৪৭ সালে ১৩ই মে, তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলো ‘ছাড়পত্র', 'ঘুম নেই', 'বার্তা', 'পূর্বাভাস’, ‘হরতাল’, ‘অভিযান’, ‘গীতিগুচ্ছ’, 'মিঠে কড়া।'

আরো পড়ুন ঃ একটি গ্রামে একদিন রচনা

সুকান্তের কাব্য ভাবনার জগৎ ঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাব্য রচনার অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে ধনী-গরিবের বৈষম্য থাকবে না। প্রত্যেক শিশু জন্মমাত্রই পৃথিবীর কাছে সমান অধিকার নিয়ে জন্মাবে। অল্পকতক মানুষের কাছে রাষ্ট্রের সম্পদ কুক্ষিগত থাকবে না। সুকান্ত শিশুদের জন্য এমনি একটি পৃথিবী নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন। কবি বলেন-

‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি

নব জাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার' (ছাড়পত্র)।

কবি যে শুধু কবিতার মাঝে মানবীয় পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছেন তা নয়। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে সে স্বপ্নকে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি কিশোরদের নিয়ে একটি সংগঠন পরিচালনা করতেন যারা দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকায় রিলিফ পৌঁছে দিত। অর্থ সংগৃহীত হতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এছাড়া তারা রাস্তায় রাস্তায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলতেন । প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য রিলিফ ওয়ার্ক করতে গিয়ে তিনি সেসব মানুষের মানসিক মনোবল দেখে অবাক হন এবং রচনা করেন-

'সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী

অবাক তাকিয়ে রয়;

জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার

তবু মাথা নোয়াবার নয়।'

সুকান্তের কাব্য ভাবনার জগৎ মাটির সোঁদাগন্ধ থেকে উদ্ভূত। তাইতো তিনি মনে করতেন ক্ষুধার কাছে পদ্যের লালিত্যও স্নান হয়ে যায় । কারণ---

'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়

পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।' (হে মহাজীবন)

আরো পড়ুন ঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা

তিনি বার বার আহবান করেছেন শোষিত, নির্যাতিত, অসহায়, সর্বহারাদের; তোমরা আর নসিব ভেবে সবকিছু মেনে নিও না। তোমরা না জাগলে কেউ তোমাদের নায্য অধিকার বুঝিয়ে দেবে না। তাঁর কর্ম, কাব্য সাধনা, রাজনৈতিক আদর্শ, সব ছিল এ মতকে ঘিরে ।

শেষ কথা ঃ সুকান্ত আমাদের ভাবতে শিখিয়েছেন। তাঁর জীবন আমাদের দেখিয়েছে কীভাবে কর্মে ও বিশ্বাসে এক থাকতে হয়। এই ভোগবাদী-পুঁজিবাদী সভ্যতায় সুকান্ত চর্চা বড়ই জরুরি। তাই তো সুকান্ত আমার প্রিয় কবি।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url