একটি ঝড়ের রাত রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

একটি ঝড়ের রাত রচনা

একটি ঝড়ের রাত

সূচনা ঃ কালবৈশাখীর তাণ্ডব দেখে ভাবতাম, ওটাই বোধ হয় স্থলে প্রকৃতির রুদ্রতম রূপ। কিন্তু দু'বছর আগে যা দেখতে হলো তাতে আগের ধারণা পালটে গেল। সাগরে যাই নি; তাই সাগরে প্রকৃতির রুদ্র রূপ দেখার সুযোগ হয়নি। শহৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ -এর ঝড়ের যে বর্ণনা আছে তা পড়ে সমুদ্রবক্ষে প্রকৃতির রুদ্র রূপ সম্বন্ধে একটা ধারণা লাভ হয়েছিল।

ঝড়ের পূর্বাভাস ঃ বিকেল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সাথে ছিল দমকা হাওয়া। ঝাপটাগুলো পাঁচ থেকে দশ মিনিট অন্তর অন্তর আসছিল। দমকা হওয়ায় বেগ থাকলেও তা কোনো আশঙ্কার উদ্রেক করছিল না। তবে দমকা বাতাসের ধ্বনিতে বিচিত্র একটা গোঙানির সুর ছিল, ছিল একটা চাপা আক্রোশের গর্জন। মন বলল, কিসের যেন পূর্বাভাস শুনছি। হাওয়ার বিপরীত দিকের জানালা খুলে একখানা রোমাঞ্চ উপন্যাস পড়ে সময় কাটাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মনোযোগ বইতে নিরুদ্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।

▶▶আরো পড়ুন ঃ দেশভ্রমণ প্রবন্ধ রচনা

ঝড়ের বর্ণনা ঃ সন্ধ্যার সামান্য আগে বায়ুর বেগ আর দমকায় পৌনঃপুনিকতা দ্রুত বেড়ে গেল। বর্ষণও প্রবলতর হয়েছিল। একটা অজানা আশঙ্কায় মন অস্থির হয়ে উঠল। এমন সময় এক বন্ধু এসে দরজায় প্রবল বেগে আঘাত করতে লাগল, চিৎকারও করছিল সে তারস্বরে। এ অবস্থার ভেতর কেউ বেড়াতে আসতে পারে তা ছিল ধারণার অতীত। দরজা খুলতে খুলতে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম কোনো বিপদ- আপদ ঘটেছে কি না। সে বলল বিপদ সবার। রেডিওতে সে শুনেছে যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। তারপর সে অবিলম্বে সবাইকে নিয়ে কাছের কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নেবার পরামর্শ দিল। কিন্তু ততক্ষণে বড় দেরি হয়ে গেছে। সে তার কথা শেষ করতে না করতেই ঝড়ের এমন তাণ্ডব শুরু হলো যে, ঘর থেকে বের হবার কোনো উপায় রইল না। ঝড়ের গর্জনের ফাঁকে ফাঁকে চালার টিন বা আস্ত চালা ছুটে এসে গাছের বা অন্য চালায় আঘাত করার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। আমাদের চালার উপর একখানা গাছের ডাল পড়ার শব্দ শুনলাম ।

ঝড়ের অভিজ্ঞতা ঃ চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেল। কামরার ভেতরে বসে আমরা উভয়েই কাঁপতে থাকলাম। বাতাসের শব্দ এমন ভয়ঙ্কর হতে পারে আগে তা কখনও কল্পনাও করিনি। মনে হলো যেন জাহান্নাম থেকে শয়তান তার চেলাবেলা নিয়ে মুক্তি পেয়ে উন্মুক্ত উল্লাসে বিশ্বটাকে বিধ্বস্ত করার চেষ্টায় মেতেছে। পাশের কামরা থেকে আমাকে ডাকা হচ্ছে বলে মনে হলো, কিন্তু সেখানে যাবার উপায় ছিল না। বারান্দা না পেরিয়ে অন্য কামরায় যাওয়া ছিল অসম্ভব। কিন্তু দরজা খুলে বারান্দায় বের হবার মতো বুকের পাটা আমাদের দুজনের কারোরই ছিল না। অন্য কামরায় যারা ছিল তাদেরও সে সাহস ছিল বলে মনে হলো না; থাকলে নিশ্চয়ই তাদের কেউ এসে আমাদের কামরার দরজায় আঘাত করত।

সময় যতই কাটতে থাকল ঝড়ের বেগ ততই বাড়তে থাকল। একবার সাহস করে বিপরীত দিকের একটা জানালা ফাঁক করলাম, কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেলাম না। তবে মনে হলো যে দুনিয়া ধ্বংসের মুহূর্ত সমাগত। বাইরে তাণ্ডব, ভেতরে আমরা অস্থির। ক্ষণিকের জন্য একবার ঝড়ের তাণ্ডব একটু কমলো তারপর দমকার পর দমকা এসে প্রচণ্ডবেগে আঘাত করতে থাকল আমাদের ঘরখানায়। মনে হলো, মুহূর্তে পাঁচ ইঞ্চি পুরু দেওয়াল পড়ে যাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আমরাও শেষ হয়ে যাব। ক্রমে দমকাগুলোর মাঝের সময়ের ব্যবধান অন্তর্হিত হলো ও কল্পনাতীত প্রবল বেগে একটানা ঝড় বইতে লাগল। মাথার উপরের পাটাতন বা সিলিং-এর প্রতিটি ফাঁক দিয়ে অবিরল ধারায় বৃষ্টির পানি পড়ছিল। আমি নিশ্চিত হলাম যে, ঘরের চালা উড়ে চলে গেছে। আমরা দুবন্ধু যেখানে কম পানি পড়ছিল সেখানে বসে

শীত ও ভয়ে কাঁপতে থাকলাম। উদ্বেগাক্লিষ্ট মন এক সময় অবসাদগ্রস্ত হয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। অবসন্ন অবস্থায় উদাসভাবে ঝড় আর বৃষ্টির প্রলয় নৃত্যের ধ্বনি শুনতে লাগলাম । কথা বলার শক্তিও লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, কেবল থেকে থেকে অসহায়ভাবে বন্ধুটির দিকে তাকাচ্ছিলাম। সেও তাই করছিল, চরম অসহায় অবস্থায় বোধ হয় এমনটিই হয়। প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই, অথচ পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করার উপায়ও নেই—–বের হলেও উড়ন্ত টিন গলা কেটে দেবে অথবা প্রকাণ্ড গাছ বা বিশাল শাখা চাপা দিয়ে হত্যা করবে। গৃহাভ্যন্তরও নিরাপদ আশ্রয় নয়। এ অবস্থায় অসহায়ভাবে মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। আমরাও ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়ে হতাশার মধ্যে অপেক্ষা করতে থাকলাম ।

▶▶আরো পড়ুন ঃ বসন্তকাল রচনা

রাত বারটার পরে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। মাথাটা হয়তো সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল, কাঁধটা টন টন করে উঠতেই তন্দ্রার ঘোর কেটে গেল, আর সেই সাথে জীবনের আশ্বাস ফিরে পেলাম। ঝড়ের তাণ্ডব এখন যথেষ্ট প্রশমিত হয়েছে। তখনও দমকা হাওয়া আঘাত হানছিল, কিন্তু যে ধ্বনি কানে আসছিল তাকে একই সঙ্গে ক্রুদ্ধ গর্জন ও করুণ আর্তনাদ মনে হচ্ছিল। ক্রমে সে আওয়াজের পৌনঃপুনিকতা হ্রাস পেল। রাত তিনটার দিকে প্রবল বর্ষণ শুরু হলো। টিনের চালায় বৃষ্টি পতনের শব্দে তখন কানে তালা লাগার উপক্রম। প্রবল বর্ষণ সত্ত্বেও উপর থেকে পানি পড়ছিল না; লক্ষ করে বুঝলাম যে, মাথার উপরের চালা উড়ে যায়নি। আমরা দুবন্ধু তখন দুখানা চেয়ার টেবিলের কাছে নিয়ে তাতে বসে টেবিলে মাথা রেখে অবসন্নের মতো স্থির হয়ে রইলাম। এক সময় তন্দ্রা এসে অচেতন করে দিল । অন্যান্য কামরায় যারা ছিল তাঁরাও যে যেখানে পেরেছিল সেখানে দেহ এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল।

উপসংহার ঃ পরদিন সকালে মায়ের ডাকে যখন ঘুম ভাঙল তখন বেলা আটটা। দরজা খুলে দেখি রোদ উঠেছে আর তখনও দুর্বল দমকা হাওয়া থেকে থেকে সবকিছুকে নাড়া দিচ্ছে। মনে হলো অসুরগুলো ক্লান্ত হয়ে হাঁপাচ্ছে। আমি চোখ রগড়াতে রগড়াতে বন্ধুকে নিয়ে ধ্বংসের পরিমাণ দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url