বসন্তকাল রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

বসন্তকাল রচনা

বসন্তকাল

সূচনা ঃ বাংলার ঋতু পরিবর্তনের দিন শেষ হলে প্রকৃতিতে শুরু হয় পালাবদল। কুয়াশা মাখা পাতা ঝরার দিন শেষ হয়। শেষ হয় বসন্তের জন্যে শীতের তপস্যার দিন। প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে বরণ করে নেয় বসন্ত ঋতুকে।

সময় ঃ ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস নিয়ে বসন্তকাল। কিন্তু মাঘের শেষে শীত কমতে শুরু করলেই শুরু হয় শীতের যাই যাই ভাব। তখনই প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন-লক্ষণ দেখা দেয়। অন্যদিকে চৈত্রের মধ্যভাগে অনুভূত হতে থাকে গ্রীষ্মের তাপ । এদিক থেকে মাঝের এই শীতোষ্ণ আবহাওয়াই বসন্তের নিজস্ব আবহাওয়া ।

আরো পড়ুন ঃ একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা

বসন্তের রূপ ঃ বসন্তের আগমনে বাংলার প্রকৃতিতে শুরু হয় মন-মাতানো দক্ষিণা বাতাসের আনাগোনা। সে বাতাসে নিষ্পত্র গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, পত্রপল্লবে ফুল ফোটে। আম গাছ নব মঞ্জুরীতে সেজে ওঠে। অশোক, পলাশ, শিমুল, ডালিম আর কৃষ্ণচূড়ার লাল লাল ফুলে নীল আকাশে তৈরি হয় রক্তিম আল্পনা। ফুলে ফুলে শুরু হয় মৌমাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা। কোকিলের কুহুতান মনকে আনন্দ আবেগে ভরিয়ে তোলে। ফুলের গন্ধে আমোদিত বাতাসের ঢেউ খেলে যায় দিক-দিগন্তে। যব, গম, সরিষা ইত্যাদি শস্যের পাতায় গ্রাম বাংলার ক্ষেতগুলো হয়ে ওঠে অপরূপ। প্রকৃতির মন মাতানো সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে অভিষেক হয় বসন্তের। প্রকৃতি ও জীবনে বয়ে যায় আনন্দের শিহরণ। কবি মেতে ওঠেন বসন্ত বন্দনায় ঃ

“কুহেলী দোলায় চড়ে

এল ঐ কে এল রে ?

মকরের কেতন ওড়ে

শিমুলের হিঙ্গুল বনে।

পলাশের গেলাস-দোলা

কাননের রং মহলা

ডালিমের ডাল উতলা 

লালিমার আলিঙ্গনে। 

না । যেতে শীত-কুহেলী 

ফাগুনের ফুল-সোহেলি 

এল কি? রক্ত-চেলী

করেছে বন উজালা ।'

নিরানন্দের দিক ঃ বসন্ত কেবল, সৌন্দর্য ও আনন্দ নিয়ে আসে না, সেই সঙ্গে এই ঋতু নিরানন্দও নিয়ে আসে। এই সময় কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ সব রোগের আক্রমণ ঘটলে লোকের ভোগান্তি বাড়ে ।

বসন্তোৎসব ঃ বসন্তের আগমনে বাঙালির জীবনে লাগে উৎসবের ছোঁয়া। বাঙালি আয়োজন করে বসন্ত বরণ উৎসবের। এজন্য তরুণ- তরুণীরা বাসন্তী রং পোশাকে সাজে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সরস্বতী পূজা, বাসন্তী পূজা, দোল যাত্রা, হোলি উৎসব ইত্যাদির আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। হোলি উৎসবে তারা নিজেদের রঙে রঙিন করে তোলে ।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য রচনা

উপসংহার ঃ বসন্তে আবহাওয়া থাকে চমৎকার। তাপমাত্রা থাকে নাতিশীতোষ্ণ। বর্ষার একঘেয়ে বৃষ্টি, শীতের তীব্রতা, কিংবা গ্রীষ্মের তাপদাহ থেকে এ ঋতু পুরোপুরি মুক্ত। তাই বাংলার ঋতু পরিক্রমার এ ঋতু সমাদৃত ‘ঋতুরাজ' হিসেবে। এই ঋতু রাজের বিদায়ের মধ্য দিয়ে একটি বছর শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় আনন্দ দিনের মুহূর্ত।

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url