আমার প্রিয় ঋতু শীতকাল রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

আমার প্রিয় ঋতু শীতকাল রচনা

আমার প্রিয় ঋতু : শীতকাল

ভূমিকা ঃ ষড়ঋতুর আনাগোনায় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরো বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে। প্রতিটি ঋতুই তার আপন সৌন্দর্যে ও বৈশিষ্ট্যে অনন্য। ষড়ঋতুর এই অনন্যতা প্রভাব ফেলে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে। সেখানে একেক ঋতুর আবেদন একেক রকম। বাংলা কবিতা বর্ষার বন্দনায় মুখর। বসন্তের বন্দনাও কম হয়নি। কিন্তু আমার প্রিয় ঋতু শীতকাল। ছটি ঋতুর মধ্যে শীতই যেন আমার কাছে একটু অন্য রকম । 

বাকি পাঁচটি ঋতুতেই প্রকৃতি থাকে সজীব, সুন্দর। হয়তো ঋতুভেদে এই সৌন্দর্যের তারতম্য হয়। কিন্তু শীতের রিক্ত, সিক্ত, রুক্ষ প্রকৃতির মধ্যেও যে অপার সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে, তা কেবল শীতকালেই বুঝতে পারা যায়। শীতের আগমনটাও যেন আমার কাছে অন্য ঋতুর চেয়ে একেবারে আলাদা। হেমন্তে শুরু হয় পাতা ঝরা ছাতিম ফুলের তীব্র গন্ধ আমাকে মনে করিয়ে দেয় শীত আসছে।

আরো পড়ুন ঃ বাদলা দিনে রচনা

শীতকালের বর্ণনা ঃ কুয়াশার সাদা চাদরে নিজেকে মুড়ে যখন এদেশে শীত আসে, কোনো গাছে তখন পাতা নেই, রাতগুলোও দীর্ঘতর। সকালে শিশির ঝরে ভিজে যায় গাছপালা, তীব্র কুয়াশার মাঝে মাঝে দিনরাতের পার্থক্য করা যায় না। কখনো কখনো এত কুয়াশা পড়ে যে, একটু দূরের জিনিসও দেখতে পাওয়া যায় না। শীত যেন সমস্ত প্রকৃতিকে রিক্ত শূন্য করে দেয়। আমার কিন্তু প্রকৃতির এই বিবর্ণতা দেখতে খুব ভালো লাগে। কারণ, বিবর্ণতা ছাড়া রঙের আলপনা যে হয় না। সারাটা বছরই যদি প্রকৃতিতে বসন্ত থাকে, তাহলে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কোনো মানুষের মনেই দোলা লাগাবে না। 

শীতের এই বিবর্ণতা তাই আমাকে মনে করিয়ে দেয়, এই বিবর্ণতাতেই একদিন রঙের ছোঁয়া লাগবে, গাছের ডালে ডালে নতুন পাতা গজাবে, পাখির কলকাকলি শোনা যাবে। এভাবে প্রকৃতি পুরোনো সবকিছুকে ঝেড়ে ফেলে নিজেকে নতুন করে সাজায়। ঠিক যেভাবে আমাদের জীবনে দুঃখের পর সুখ আসে, সুখের পর আবার দুঃখ। শীতকাল তাই আমাকে মনে করিয়ে দেয়, এই পাতা-ঝরা নিঃসঙ্গ গাছ, শুকিয়ে যাওয়া নদী আসলে আসন্ন নতুন দিনের আগমনী সংগীত গাইছে। শীত এলেই বোঝা যায়, বসন্ত আর দূরে নয়।

শীতের সকালে কুয়াশা-ঘেরা হিমেল হাওয়ায় আকাশে আলো-ছায়ার খেলা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। ভালো লাগে শিশির-ভেজা ঘাসে হাঁটতে। শীতের সকালের ভেজা ভেজা কুঁয়াশা আমার খুব প্রিয়। স্কুলে যাওয়ার পথে আমি তাকিয়ে থাকি কোথায় একটু রোদ দেখতে পাওয়া যায়। শীতের রোদ শরীরে জ্বালা ধরায় না। হাড়-কাঁপানো শীতের মধ্যে একটু উষ্ণ রোদের ছোঁয়া পেতে মন উন্মুখ হয়ে ওঠে। ভালো লাগে শীতকালে ফোটা গোলাপ, গাঁদা, জিনিয়া, কসমস, সূর্যমুখীসহ আরো হাজারো রঙের ফুল। শীতকালে শহরাঞ্চলে বাড়ির বারান্দায়, ছাদের কার্নিশে, পার্কের মাঠে যত বাহারি রঙের ফুল ফোটে তা আর কোনো ঋতুতেই দেখা যায় না। বড় বড় পাতাহীন গাছগুলোর রিক্ততার করুণ দৃশ্যকে ভুলিয়ে দেয় এই সব হাজারো রঙের ফুল।

আরো পড়ুন ঃ বাংলা রচনা চা

শীতের প্রকৃতি হয়তো কিছুটা রিক্ত। এই রিক্ত শীতেই প্রথম বাংলার কৃষকের গোলা ভরে যায় সোনার ধানে, শাক-সবজির সম্ভারে। দরিদ্র এ দেশে শীত তাই সচ্ছলতার ঋতু। শীতের সবজি আমার খুব প্রিয়। ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, টমেটোসহ আরো নানারকম সবজি হয় এই ঋতুতে। শীতকালে মাছের স্বাদও হয় আলাদা। শীতের পিঠাপুলির স্বাদ যেন অমৃতের মতো। মায়ের হাতে বানানো শীতের পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। শীতকালে আমার ভালো লাগে খেজুরের রস, সন্ধ্যায় পাড়ার মোড়ের দোকানের থেকে কেনা গরম ভাপা পিঠা, সকালের হালকা মিঠে রোদে বসে বই পড়া।

শীতকালে ঝড়বৃষ্টির ঝামেলা থাকে না। তাই এ সময়ে বেড়াতে যাওয়ার মজাই অন্যরকম। প্রতি শীতেই আমরা হয় গ্রামের বাড়িতে, না হয় অন্য কোথাও বেড়াতে যাই। শীতকালে গ্রামের বাড়িতে বেড়ানো আমার খুব প্রিয়। সকালবেলা আমি গুটি গুটি পায়ে চুলার পাশে দাদির গা ঘেঁষে বসে থাকি। গরম পিঠে খাই। সারাদিন কেটে যায় হাজার রকমের খেলার। সন্ধ্যায় উঠানের কিনারে লাকড়ি দিয়ে আগুন জ্বালানো হয় । আমরা সেই আগুনের তাপে গা গরম করি, মাঝে মাঝে বড়রা ভূতের গল্প বলে। আমরা সবাই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে সেই গল্প শুনি ।

আরো পড়ুন ঃ জাতীয় ফুল শাপলা রচনা

উপসংহার ঃ শীতকালে আগুনের নাচানাচি, কুয়াশার চাদর আর দূরের গাঢ় অন্ধকার সব মিলিয়ে একটা ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রাতের বেলা কম্বল গায়ে দেওয়ার পরও হু হু করে কাঁপার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ খুঁজে পাই। শীতকালে অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে আসে। শীতের ধূসর পর্দার মাঝে ওরা যেন রঙের ছোঁয়া জাগায়, শীত প্রকৃতির স্বাচ্ছন্দ্যের ঋতু। শীতে কালবৈশাখীর আশঙ্কা নেই, গ্রীষ্মের খাখা রোদের জ্বালা নেই, বর্ষার অঝোর বৃষ্টিতে কাজভেজা হওয়া, প্যাচপেঁচে কাদায় আছাড় খাওয়া কিংবা জনজীবন বিপন্ন হওয়ার ভয় নেই।

শীতকালে বেড়াতে ভালো লাগে, খেলতে ভালো লাগে, এমনকি যেসব সবজি সারা বছর খেতে ইচ্ছা করে না, সেগুলোও শীতকালে অনেক সুস্বাদু মনে হয় । তাই শীতকাল আমার সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে ভালো লাগার ঋতু।

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url