বাংলাদেশের নদ-নদী রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
বাংলাদেশের নদ-নদী
প্রারম্ভিকা ঃ বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে নদীর জঠরে। তাইতো বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। বাংলাদেশের দেহে শিরা- উপশিরার মতো অসংখ্য নদ-নদী ছড়িয়ে রয়েছে। এজন্যই এদেশের শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও জীবনবোধের সাথে নদী ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশের নদী পরিচয় ঃ এ দেশে প্রায় ৭০০টি ছোট বড় নদ-নদী রয়েছে। এ সব নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৪,১৪০ কিলোমিটার। নদীগুলো তার নামের মতোই সুন্দর পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, যমুনা ইত্যাদি। জলাধারগুলো মানুষ আর প্রকৃতিকে এক ধারায় এনে মিশিয়েছে। মিশো একে অপরের বন্ধু করে তুলেছে।
বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদ-নদী ঃ প্রাচীন বাংলার যোগাযোগের প্রধান পথ ছিল নদী পথ। এমনকি ভিন্নদেশীদের সেকালে বাণিজ্য হেতু এখানে আগমনের প্রধান কারণ ছিল এ নদীপথ। বর্তমানেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে প্রায় ৮,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নদী পথ রয়েছে। এ দেশের বড় বড় শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো নদীপথকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।
আরো পড়ুন ঃ জাতীয় পাখি দোয়েল রচনা
পদ্মা ঃ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও বৃহত্তম নদী পদ্মা। এর উৎপত্তি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে। ভারতের গঙ্গা নদীর মূল প্রবাহ বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে পদ্মা নাম ধারণ করেছে। এটি কুষ্টিয়ার উত্তর পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে দৌলতদিয়ার নিকট যমুনার সাথে মিলিত হয়েছে। মহানন্দা পদ্মার প্রধান উপনদী । পদ্মা ইলিশের প্রধান উৎস ।
ব্রহ্মপুত্র ঃ এ নদীর উৎপত্তি স্থল হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের নিকট মানস সরোবর। তিব্বতের ওপর দিয়ে, পরে আসামের ভেতর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের বুক চিরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ধরলা ও তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের প্রধান উপনদী এবং বংশী ও শীতলক্ষ্যা প্রধান শাখানদী ।
মেঘনা ঃ সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মিলিত প্রবাহ কালনী নামে কিছু দূর দক্ষিণে গিয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে। এ নদীর উৎপত্তি আসামের বরাকনদী । গোমতি, তিতাস, মনু প্রভৃতি মেঘনার উপনদী ।
যমুনা ঃ যমুনা মূলত ব্ৰহ্মপুত্রের প্রধান শাখা। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্রের এ শাখাটি যমুনা নাম ধারণ করে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
কর্ণফুলী ঃ এটি আসামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। এটি প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর খরোস্রোতকে কাজে লাগিয়ে কাপ্তাইয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।
নদীর উপকারিতা ও অপকারিতা ঃ নদী হলো বাংলাদেশের প্রাণ । নদীর কারণে বাংলার মাটি এত উর্বর, বাংলার প্রকৃতি এত সবুজ বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুলাংশে নদীর ওপর নির্ভরশীল। মাছে-ভাতে বাঙালির মৎস্যের উৎস এই নদী। তবে বর্ষাকালে অতিবর্ষণ নদী ভাঙন ও বন্যার সৃষ্টি করে। কিন্তু দুর্মর বাঙালি প্রকৃতির এ দুর্যোগকে বার বার জয় করেছে। বিজ্ঞানের সুষ্ঠু প্রয়োগ অর্থাৎ নদী খনন ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে বর্ষার অশান্ত সময় নদীকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ।
আরো পড়ুন ঃ জাতীয় পশু বাঘ রচনা
যবনিকা ঃ বাঙালির জীবনে নদীর প্রভাব মাতার মতোই । নদীর কোলেই তাদের বেড়ে ওঠা এখানে শেষ। নদীগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খননের মাধ্যমে নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে কারণ নদী বাঁচলে আমরা বাঁচব ।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url