শিক্ষকের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষকের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা

শিক্ষকের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

ভূমিকা ঃ শিক্ষকরা জাতির বিবেক। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। জ্ঞানে, গুণে, স্বভাবে, আচরণে তাঁরা আমাদের জীবনে পরশ পাথরের মতো ভূমিকা রাখেন। তাঁরা আমাদের মনের অন্ধকার দূর করেন, বিকশিত করেন চেতনা, জ্বালিয়ে দেন জ্ঞানের আলো। তারাই দেশ, জাতি ও সভ্যতার অগ্রযাত্রার নেপথ্য উৎস ও চালিকা শক্তি। তাঁরা আমাদের জীবনে পালন করে দ্বিতীয় পিতা-মাতার ভূমিকা। তাই তাদের প্রতি আমাদের বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

আমাদের জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা ঃ শিক্ষকরা শিক্ষকতাকে নিছক জীবিকা হিসেবে কখনো দেখে না, দেখেন মহান ব্রত হিসেবে। সাংসারিক নানা সমস্যা সহ্য করেও তাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা কেবল আমাদের পাঠদান করেন না উন্নত মন, চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব গঠনেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। তাঁরা আমাদের বিনয় ও সৌজন্যে উজ্জীবিত করেন, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা মান্য করতে শেখান, অধ্যবসায় ও সহিঞ্চুতার পাঠ দেন। এভাবে তারা আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন মহৎ, উদার ও পরিশীলিত মানুষ হয়ে উঠতে।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ কর্তব্যনিষ্ঠা বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

শিক্ষক আমাদের কেবল স্নেহ করেন না আমাদের নানা ভুল ত্রুটিও শুধরে দেন। তিনি ছোট, বড় ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য করেন না। সকলকে তিনি সমান চোখে দেখেন। তবে দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের প্রতি তার সহানুভূতিশীল দৃষ্টি থাকে। তিনি তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে বিশেষ সহায়তা করেন। স্কুলের বাইরেও তিনি আমাদের উৎসাহ দাতা ও অভিভাবক। আমাদের নানা রকম সমস্যা মোকাবেলায় তিনি আমাদের পরামর্শ দেন, সাহায্য করেন। তাঁর মধুর ব্যক্তিত্ব দেখে আমরা অভিভূত ও আকৃষ্ট হই। তাই শিক্ষক আমাদের সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র।

শিক্ষকের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য ঃ শ্রেণি-কক্ষে শিক্ষকের প্রবেশ ও প্রস্থান কালে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি আমাদের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পাঠদানে সর্বাত্মক সহায়তা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য। ক্লাসে যেন পুরোপুরি শৃঙ্খলা বজায় থাকে, পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ রক্ষিত হয় সেদিকে সকলের সচেষ্ট হওয়া দরকার। কেবল ক্লাসকক্ষ নয়; ক্লাসের বাইরে এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যেখানেই শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হোক না কেন তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দেখানো আমাদের কর্তব্য।

ছাত্র হিসেবে আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব শিক্ষককে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করা, তাঁর উপদেশ, পরামর্শ ও নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুধাবন করা ও মান্য করা । প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার, শিক্ষকও মানুষ। নানা কারণে কখনো কখনো তাঁর কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে। সেজন্য তাঁকে অবজ্ঞা বা অসম্মান করা কখনো উচিত নয়। শিক্ষকের সঙ্গে আমাদের অভিভাবকদের যেন সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে সেদিকেও আমাদের সচেষ্ট থাকা উচিত।

মনে রাখতে হবে, মহৎ শিক্ষক কেবল জ্ঞানে-গুণে বড় নন, হৃদয়েও অনেক বড় হয়ে থাকেন। তিনি সবসময় ছাত্রছাত্রীদের মঙ্গল কামনা করেন। তাদের কষ্টে ও দুঃখে বিচলিত হন। কোনো শিক্ষকের এই বিশাল মনের পরিচয় পেলে তা যেন আমরা কখনো না ভুলি। শিক্ষকরা আমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চান না। তবু সারা জীবন তাঁদের অবদানের কথা আমাদের মনে রাখা উচিত।

উপসংহার ঃ আমরা যখন বড় হব তখন আমাদের শিক্ষকরা অবসর জীবনযাপন করেন। তখন তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া, সুখে-দুঃখে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। এটা হবে তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতার সামান্যতম প্রকাশ। এ কৃতজ্ঞতা আমাদের অবশ্যই দেখানো উচিত। কারণ আজীবন আমরা চিন্তা ও কর্মে, বিদ্যা ও বুদ্ধিতে, চরিত্র ও আচরণে আমাদের মহান শিক্ষকদের অবদানকেই বহন করে চলব।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন 

সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url