ছুটির দিনে বনভোজন রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
বনভোজনে একদিন
বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। কদিন ছুটি পাওয়া গেল। পড়াশোনার দায় নেই। বাবা-মার নজরদারি থেকেও ছাড় পেয়েছি। তাই ক্লাসের বন্ধুরা ঠিক করলাম রেজাল্ট বের হবার আগে বনভোজনে যেতে হবে। কোথায় যাব? কেউ বলল, রাঙামাটি। কিন্তু এত দূরে পাহাড়ি জায়গায় যাওয়ার অনুমতি মিলবে কি? কেউ বলল, কক্সবাজার। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। একদিনে ফেরা তো যাবে না। শেষে ঠিক হলো বাবার অনুমতি নিয়ে ধারে কাছেই কোথাও যাব। ঠিক হলো, ময়নামতি গেলে কেউ আপত্তি করবে না। আকরাম তার বাবাকে বললে তিনি একটা মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করে দিলেন। হাসান চাচা, মানে শাওনের বাবা বললেন, তিনিও ঐদিন কুমিল্লায় যাবেন।
শুরু হয়ে গেল প্রবল উৎসাহে প্রস্তুতি। সবাই ১০০ টাকা করে চাঁদা দিলাম। মোরশেদের বাবার বেকারির দোকান আছে। যাওয়ার পথের নাশতার প্যাকেটের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিল মোরশেদ। উপল নিল চাল, ডাল, তেল, নুন, মসলা ও তরকারির দায়িত্ব। তার মা আবার এসব ব্যাপারে খুবই পাকা। উৎসব অনুষ্ঠানে এসব দেখাশোনার জন্য অনেকেই তাকে ডেকে নেন। আমার ওপর দায়িত্ব পড়ল, দাবা, ভিডিও গেম, ওয়াকম্যান, চাদর, চায়ের ফ্লাস্ক ইত্যাদি নেওয়ার। সোহরাবের বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কী-একটা হলের প্রভোস্ট। তিনি সঙ্গে দিলেন করম আলীকে; সে নাকি ‘থ্রি ইন ওয়ান’ – বয়, বেয়ারা, বাবুর্চি - • সব কাজেই পাকা ।
আরো পড়ুন ঃ হযরত মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা pdf
শীতের সকাল। তবে শীতে তেমন ছিল না। কিংবা আনন্দ-উত্তেজনায় আমাদের শীত তেমন লাগছিল না। শাহবাগের মোড় থেকে আমরা রওনা দিলাম । কথা ছিল যাত্রা শুরু হবে ৯টায়। কিন্তু গেণ্ডারিয়া থেকে রকিবের আসতে দেরি হয়ে গেল। পথে নাকি বেশ জ্যাম। আসলে যা হোক, পৌনে দশটায় আমরা যাত্রা শুরু করাম। মাইক্রোবাসে আমরা সবাই। হাসান চাচা কার-এ। মাইক্রো ছুটে চলল। বাতাসে চুল উড়ছে সবার। দু পাশের গাছপালা, ঘরবাড়ি, ছায়াছবির মতো মিলিয়ে যেতে লাগল।
মাঝে মাঝে দ্রুতগামী বাস, ট্রাককে তেড়ে আসতে দেখে ভয়ে আমরা এ ওকে জড়িয়ে ধরি। আমাদের অবস্থা দেখে ড্রাইভার সাহেব গতি একটু কমিয়ে দিলেন। যদিও তিনি জানালেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রাস্তায় ৭০/৮০ কিলোমিটার মাইক্রো চালানো তার জন্য ডালভাত। পথে দাউদকান্দি সেতু পার হয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় নাশতা খাওয়া হলো। সঙ্গে বোতলের পানি ও ফ্লাক্সের চা।
ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আমরা ময়নামতি এসে পৌঁছলাম। শাওনের বাব চলে গেলেন। বললেন, ৪টার মধ্যে তিনি ফিরবেন। একটু এগিয়ে শালবন বিহার বাঁয়ে রেখে আমরা শালবনের পাশে গাড়ি থামালাম। একটা গাছের তলায় পাটি ও চাদর বিছালাম। পাশেই রান্নার ব্যবস্থা হলো। সবাই মিলে জিনিসপত্র টেনে আনা গেল। একটু কষ্ট হলো লাকড়ির বোঝা টেনে নিতে অবশ্য করম আলী থাকায় কষ্টটা বেশি হলো না।
একদিকে রান্না চলতে লাগল। ড্রাইভার সাহেব ও অলরাউন্ডার করম আলীর ওপর রান্নার দায়িত্ব দিয়ে আমরা শালবন বিহার দেখতে চলে গেলাম। এককালে এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন । লেখাপড়া ও ধর্মচর্চা করতেন। সেই পুরোনো আমলের ধ্বংসাবশেষ দেখতে দেখতে গর্ব হলো
শত শত বছর আগের ঐতিহ্য আমরা বয়ে চলেছি। সেজানের সঙ্গে ছিল ক্যামেরা। সে চটপট কিছু ছবি তুলে নিল। কাছেই রয়েছে জাদুঘর। জাদুঘরে সেই আমলের নানা নিদর্শন সাজানো রয়েছে। প্রাচীন কালের হাতিয়ার, তাম্রলিপি, মুদ্রা, অলঙ্কার, বোঞ্জের মূর্তি, পোড়ামাটির চিত্রফলক ইত্যাদি দেখে অবাক হলাম। আরো মজা পেলাম সেকালের পেরেক, কড়া, বড়শি, দা, ছুরি, শিল-নোড়া ইত্যাদি দেখে ৷
দেখা শেষ হলে আমরা ফিরলাম বনভোজনের জায়গায়। রান্না শেষ হতে তখনও বাকি। সেই সময়টা চলল গান শোনা, দাবা ও ভিডিও গেম খেলা । রান্না শেষ হতে হতে প্রায় সাড়ে তিনটা। সবাই গোল হয়ে খেতে বসে গেলাম। সবজি ভাজি, ঘন ডাল, মাছ ভাজা, ডিম ফ্রাই, আর মুরগির মাংস। খাসা রান্না। তবে ঝাল যেন খুব বেশি। শালবন বিহারে ঘোরাঘুরি করে ক্ষিধের চোটে প্রথমে বুঝতে পারি নি। কিন্তু খাওয়া শেষে সবার মুখ দিয়ে ঝালের চোটে লালা পড়তে লাগল। বুঝলাম, করম আলী ঝাল খাওয়াতে ওস্তাদ।
আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় কবিঃ কাজী নজরুল ইসলাম রচনা
আহ্! একটু মিষ্টি পেলে কী ভালোই না লাগত! মিষ্টি কোথায়? ঠিক হলো, ড্রাইভার সাহেবের খাওয়া শেষ হলে তাকে পাঠানো হবে কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই কিনতে। না পেলে কোক আনা হবে । ঠিক এমন সময় হাসান চাচার গাড়ির হর্ন শোনা গেল। আর কী অবাক কাণ্ড! গাড়ি থেকে তিনি যে প্যাকট নিয়ে নামলেন তাতে হাঁড়ি ভর্তি রসমালাই। হাসান চাচাকে জোর করে খাওয়ানো হলো । তিনি খেয়ে ওঠে বললেন, রান্না বেশ চমৎকার হয়েছে। তবে বড্ড ঝাল!
বড্ড ঝাল বলেই সেই বনভোজন আমার চিরদিন মনে থাকবে।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url