অধ্যবসায় রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
অধ্যবসায়
ভূমিকা ঃ যে-কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্যে 'নিরবচ্ছিন্ন ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার নাম অধ্যবসায়। অবিচল সংকল্প নিয়ে, সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, অপরিসীম ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করা চরিত্রের এই গুণটিই অধ্যবসায়। সেই সঙ্গে উদ্যোগ, নিরন্তর কর্মপ্রচেষ্টা আর আন্তরিক কঠোর পরিশ্রম অধ্যবসায়কে দেয় পূর্ণতা।
অধ্যবসায়ের গুরুত্ব ঃ মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম চালিকাশক্তি অধ্যবসায়। আদিম মানুষ মাটিতে, পানিতে, আকাশে বৈরীশক্তিকে মোকাবেলা করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সফল হয়েছে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। অনাবাদি জমি আবাদ করে ফসল ফলানো, জলাভূমি ভরাট করে নগর পত্তন, মরুভূমিকে মরুদ্যানে রূপান্তর – সবই অধ্যবসায়ের দান। আদিম গুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে।
আরো পড়ুন ঃ দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা রচনা
জ্ঞান- বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, চিকিৎসা-শিল্পকলা ইত্যাদি প্রতিটি শাখায় মানুষের যে অভাবনীয় অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যোগ আর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও অধ্যবসায়কে একটি চারিত্রিক গুণের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায় ঃ জীবনের পথ পরিক্রমায় নানা সমস্যা মোকাবেলার উপায় অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। যে অধ্যবসায়ী নয়, তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়। মানবজীবনে অধ্যবসায়ের এ গুণটি চমৎকারভাবে প্রকাশিত হয়েছে নিম্নলিখিত কাব্যপঙ্ক্তিতে -----
‘কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ?
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?'
এ উদ্যম অধ্যবসায়েরই নামান্তর মাত্র।
প্রতিভা ও অধ্যবসায় ঃ কেউ কেউ মনে করেন, প্রতিভাই সফলতার মূল নিয়ামক। এ ধারণা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। অধ্যবসায় ছাড়া সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় না। প্রতিভাবানদের জীবনেও আত্মপ্রতিষ্ঠা আসে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় ঃ ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবন রচনার অনুশীলনক্ষেত্র। তাই অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধ্যয়ন এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সংযোগ। বারবার পাঠ অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে জ্ঞান আহরণ করতে হয়। ছাত্রজীবন অধ্যবসায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলে রচিত হয় জীবনের সাফল্যের বুনিয়াদ। অধ্যবসায় না থাকলে কেবল মেধা কাজে লাগে না। অনেক মেধাবী বিদ্যার্থী যথেষ্ঠ প্রয়াসের অভাবে সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
মনীষীদের জীবনে অধ্যবসায় ঃ জগতে যাঁরা মানুষের শ্র + আর ভালোবাসার আদর্শ হয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। মহাকবি ফেরদৌসীর অমর মহাকাব্য ‘শাহানামা' দীর্ঘ তিরিশ বছরের কাব্যপ্রয়াস। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশ বিশ বছরের সাধনায় রচনা করেন ‘বাংলা ভাষার অভিধান'। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ছাড়াই একক প্রচেষ্টায় প্রায় দু হাজার প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেন খ্যাতনামা সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস পরপর ছয়বার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েও হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছিলেন। বিজ্ঞানী নিউটনের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি : বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ সাধনা ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম।
আরো পড়ুন ঃ একটি কলমের আত্মকথা রচনা
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায় ঃ সামগ্রিকভাবে জাতির সগৌরব প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রত্যেক নাগরিকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যক্তিজীবনে তার অনুশীলন প্রয়োজন। এদিক থেকে জাতির বৃহত্তম অধ্যবসায়ী ব্যক্তির গুরুত্ব অনেকখানি ।
উপসংহার ঃ জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। লক্ষ্যে পৌছানোর উদ্যমী নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকলে কোনো প্রতিকূলতাই জাতিকে নিরস্ত করতে পারে না। অধ্যবসায়ী মানুষ ধৈর্য ও অবিচলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একসময়-না-একসময় সাফল্য ছিনিয়ে আনে। প্রতিটি সফল জীবন এক অর্থে অধ্যবসায়েরই চালচিত্র। তাই ছোটবেলা থেকে প্রত্যেকের উচিত এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
আপনাদের ওয়েবসাইটে এ এসে অনেক উপকৃত হলাম। ড্রিম ফিউচার আইটিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এরকম একটা ওয়েবসাইট খোলার জন্য।
শিক্ষা ভিত্তিক সকল আপডেট পেতে ভিজিট করুণ আমাদের নতুন ওয়েবসাইট https://academic.futuredreamit.com/
ধন্যবাদ 🥰
তবে আপনার একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণীর গুলা দিলে আরও খুশি হতাম