বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
শিক্ষার্থী বন্ধুরা নিচে আমরা তোমাদের জন্য বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য : ধান রচনাটি শেয়ার করেছি। তোমরা যারা যারা এই রচনাটি পড়তে চাও তাঁরা চাইলে পড়ে নিতে পার।
এছাড়াও তোমাদের যদি আরও কোনো পছন্দের রচনা থাকে তাহলে সেটি তোমরা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পার। আমরা সেটিও সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য : ধান
ভূমিকা ঃ বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। ধানই কৃষিজাত ফসলের মধ্যে প্রধান। আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, যা আমরা ধান থেকেই পেয়ে থাকি পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোকের প্রধান খাদ্য ভাত। সুতরাং বিশ্বে যত প্রকার খাদ্য-শস্য উৎপন্ন হয়, তার মধ্যে ধানের গুরুত্ব সর্বাধিক
উৎপত্তি স্থান ঃ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ধানের চাষ হয়। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল ধানের প্রধান উৎপত্তি স্থান। ভারত, মিয়ানমার, চিন, জাপান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দেশে প্রচুর পরিমাণে ধান জন্মে ।
বর্ণনা ঃ ধানগাছ ঔষধি জাতীয় উদ্ভিদ । ধানগাছ সাধারণত দু-তিন হাত লম্বা হয় । গাছ বড় হলে প্রথমে এর মাথায় ধানের শীষ বের হয়। পরে এ শিষ আস্তে আস্তে ধানে রূপান্তরিত হয়। কচি কচি ধানগাছের যখন শিষ বের হয়, তখন মনে হয়, মাঠ যেন সবুজ আস্তরণে ঢাকা পড়ে গেছে। যখন ধান পেকে ওঠে তখন সূর্যকিরণে সোনালি ধানগুলো খুব সুন্দর দেখায়। মনে হয় মাঠ ভরে কে যেন সোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। আর সোনালি ধানখেতের উপর যখন বাতাস দোলা দেয় তখন মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঢেউ খেলে যায় । কী অপরূপই না সে দৃশ্য! তাই কবি এ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছেন--- ‘এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে!'
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল রচনা
প্রকারভেদ ঃ আমাদের দেশে নানা প্রজাতির ধান উৎপন্ন হয়। তার মধ্যে চামারা, দুলাই, গরচা, কালোমানিক, ল্যানজা, সোনামুখী, বয়ন, কালিজিরা, ধলাগুরা, কাটারিভোগ, লতাশাইল, ঝিঙ্গাশাইল প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বোরো ধান প্রচুর পরিমাণে জন্মে। অধুনা সরকারের প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে ইরি নামে এক প্রকার ধানের আবাদ শুরু হয়েছে এবং এর উৎপাদন দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত ধানকে প্রধানত চার শ্রেণিতে ভাগ করা যায় : আউশ, আমন, বোরো ও ইরি ।
চাষের নিয়ম ঃ আউশ ধানের বীজ চৈত্র মাসে বপন করা হয় এবং আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এ ধান কাটা হয়। বর্ষার পানি নেমে গেলে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে রোপা আমনের চাষ করা হয়। কাদাযুক্ত জমিতে ফাঁক ফাঁক করে এ ধানের চারা রোপণ করতে হয়। রোপা আমন ধান অগ্রহায়ণ- পৌষ মাসে কাটতে হয়। বোরো ধানের চারা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে রোপণ করতে হয় এবং মাঘ-ফাল্গুন মাসে কাটা হয়। নিচু জলাভূমিতে বোরো ধান রোপণ করতে হয়। ইরি ও বোরো ধান ফলাতে পানি খুবই প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশে সাধারণত বারো মাসই ইরি ধানের চাষ করা হয়
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের ফল রচনা
চাল তৈরি পদ্ধতি ঃ দুটো পদ্ধতি বা নিয়মে ধান থেকে চাল তৈরি করা হয়। ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে ঢেঁকিতে বা কলে ছাঁটতে হয়। এভাবে পাওয়া চালকে সিদ্ধ চাল বলে। আর সিদ্ধ না করে যে চাল পাওয়া যায় তাকে আতপ চাল বলে ।
প্রয়োজনীয়তা ঃ জীবনধারণের জন্য ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া চাল থেকে মুড়ি, চিড়ে, খৈ, পিঠা ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয়। ধানের কোনো অংশই বৃথা নষ্ট হয় না। ধানের খোসা ও তুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খড়, খুদ ও কুঁড়ো গরু-মহিষের প্রধান খাদ্য। ঘরের ছাউনিতেও আমরা খড় ব্যবহার করি।
উপসংহার ঃ যে ধানের উপর আমাদের জীবন নির্ভরশীল; সে ধানের উৎপাদন পদ্ধতি এবং একে কীট-পতঙ্গের উপদ্রব থেকে রক্ষা করার কোনো আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই। আজও আমাদের দেশে মান্ধাতার আমলের চাষ প্রণালি প্রচলিত। আমাদের দেশের কৃষকরা প্রধানত প্রাকৃতিক অবস্থার উপর নির্ভর করেই কৃষিকাজ করে থাকে। তাছাড়া অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও পোকার আক্রমণ হতে তারা শস্য রক্ষা করতে পারে না। ফলে দেশে দেখা দেয় অন্নাভাব ও দুর্ভিক্ষ। দেশকে চরম দুর্গতি ও দুরবস্থা থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারের প্রধান কর্তব্য দেশের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা। তা না হলে খাদ্য সংকট থেকে আমরা মুক্তি পাব না। সেই সঙ্গে উন্নয়নও ব্যাহত হবে।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url