আমাদের গ্রাম রচনা ক্লাস ৩-১০ | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

শিক্ষার্থী বন্ধুরা নিচে আমরা তোমাদের জন্য আমাদের গ্রাম বা একটি আদর্শ গ্রাম রচনাটি শেয়ার করেছি। তোমরা যারা যারা এই রচনাটি পড়তে চাও তাঁরা চাইলে পড়ে নিতে পার।

আমাদের গ্রাম রচনা

এছাড়াও তোমাদের যদি আরও কোনো পছন্দের রচনা থাকে তাহলে সেটি তোমরা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পার। আমরা সেটিও সং-গ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।

আমাদের গ্রাম বা একটি আদর্শ গ্রাম

সূচিপত্র ঃ আপনি যে অংশ থেকে পড়তে চান সেখানে চাপ দিন

সূচনা

মানুষের কাছে তার জন্মভূমি বা তার গ্রাম বড়ই প্রিয় ও আদর্শ। আমার গ্রাম সবচেয়ে প্রিয় ও পবিত্র। আমি এখানে জন্মেছি। এর ছায়াঘেরা মায়াময় কোলে আমার চঞ্চল জীবন কাটাচ্ছি। এর নদীর পানি আমার তৃষ্ণা দূর করছে। এর ক্ষেতের ফসল আমার ক্ষুধা দূর করছে। এর নানা রঙের পাখি গান শুনিয়ে আমার ঘুম ভাঙাচ্ছে। এর বাতাসে আমি শ্বাস গ্রহণ করে বড় হয়ে উঠছি। এ গ্রামের মানুষজনের কাছে আমি পেয়েছি আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা। তাই, আমার গ্রামকে আমি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি । আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমার গ্রামের মধুর স্মৃতি আমার হৃদয়ে জেগে থাকে ।

অবস্থান

আমি যে গ্রামে বাস করি সে গ্রামখানির নাম সাইচাপাড়া। গোমতী নদীর কূলে শ্যামলশোভা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে গ্রাম। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানায় অবস্থিত। জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব হবে পনের বিশ মাইল । দেবিদ্বার থানা শহরের পূর্ব দিকে মাত্র ৫ মাইল দূরত্বে আমাদের গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামটি দৈর্ঘ্যে প্রায় এক মাইল ও প্রস্থে আধা মাইল। এর পূর্বপ্রান্ত দিয়ে সর্পিল গতিতে কুমিল্লা-সিলেট বিশ্বরোড চলে গেছে।

লোকসংখ্যা ও পেশা

আমাদের গ্রামে প্রায় তিন হাজার লোক বাস করে। এই গ্রামে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই বাস করে। এই গ্রামের দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে রয়েছে সম্প্রীতির বন্ধন। গ্রামের অনেক বাড়িতে উচ্চশিক্ষিত লোক আছেন। তারা ঢাকা ও অন্যান্য শহরে ভালো চাকরি করেন। গ্রামে বয়স্ক যারা আছেন তারা সবাই কোনো না কোনো ব্যবসা কিংবা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্যান্য পেশার মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, উকিল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জেলে, কামার, কুমোর ও সুতার ।

আরো পড়ুন ঃ আমাদের বিদ্যালয় রচনা class 6 7 8 9 10 - রাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

ঘরবাড়ি

আমাদের গ্রামে যারা বসবাস করে তাদের বাড়িঘর প্রধানত টিনের তৈরি। গ্রামে দশটি পাকা বাড়ি আছে। এখানে ছনের বা খড়ের ঘর নেই বললেই চলে।

পোশাক-পরিচ্ছদ

আমাদের গ্রামে স্ত্রী-পুরুষরা ভালো ভালো কাপড়-চোপড় পরে। প্রত্যেক বাড়ির কেউ না কেউ দেশের বাইরে চাকরি করে বলে পোশাকে আধুনিকতার ছাপ দেখা যায়। পুরুষরা লুঙ্গি, পায়জামা, শার্ট, গেঞ্জি, চাদর প্রভৃতি এবং মেয়েরা সালোয়ার, কামিজ, শাড়ি প্রভৃতি পরিধান করে।

উৎপন্ন দ্রব্য

গ্রামের উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে ধান, পাট, গম, ডাল, সরিষা, তিল, তামাক, আঁখ এবং বিভিন্ন রকম শাকসবজি উল্লেখযোগ্য। পুকুর, নদী ও খাল, বিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। হাঁস-মুরগি প্রচুর ডিম দেয়। গাভির দুধ পাওয়া যায়। বাগানে আম, জাম, কলা, নারিকেল, সুপারি, তাল, পেয়ারা, বেল প্রভৃতি ফল প্রচুর উৎপন্ন হয়। এককথায় গ্রামের মানুষের খাবারের জন্য যা প্রয়োজন তার প্রায় সবই গ্রামে উৎপন্ন হয়।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান

আমাদের গ্রামে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা সংলগ্ন দুটি এতিমখানাও আছে। গাঁয়ের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীবনের প্রথম পাঠ শুরু করে এবং এখানে পড়া শেষ করে হাই স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়। 'সকালবেলায় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বসে আরবি শেখানো হয়। ছোট ছেলে-মেয়েরা এখানে এসে ভিড় জমায়। সন্ধ্যার পর চৌধুরীবাড়ির বৈঠকখানায় বসে বয়স্ক লোকদের লেখা ড়ার আসর। গাঁয়ের কয়েকজন শিক্ষিত যুবক তাদের লেখাপড়া শেখাবার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই আমাদের গ্রামে কোনো নিরক্ষর লোক নেই এবং সবাই নিজের নাম স্বাক্ষর করতে জানে। গোমতী নদীর পারে ‘নতুন বাজার'- এ পোস্ট অফিস, টেলিগ্রাম, দাতব্য চিকিৎসালয়, কৃষি অফিস আছে। সে জন্য আমাদের গ্রামের যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে।

আরো পড়ুন ঃ আমার দেখা একটি গ্রাম্য মেলা রচনা 3-10 | রাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

হাটবাজার ও দোকানপাট

আমাদের গ্রামে একটি বাজার আছে। বাজারটি বেশ বড়। বাজারটিতে সপ্তাহে দু দিন হাট বসে। তা ছাড়া দৈনিক সকালে বাজার বসে। মাছ, দুধ, তরকারি ও দৈনন্দিন প্রয়োজনের প্রায় সব জিনিসপত্র এখানে পাওয়া যায়। হাটের দিনে বহুদূর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা আসে। হাটের দিন এখানে ধান, চাল, হাঁস-মুরগি প্রভৃতি সব রকমের জিনিসপত্র বেচা-কেনা হয়ে থাকে। কাজারে - বিশজন স্থায়ী দোকানদার আছে। তাদের দোকান ভোর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। মোটের ওপর গ্রামের লোকেরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাববোধ করে না।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

কুমিল্লা-চট্টগ্রাম বিশ্বরোড এই গ্রামের ওপর দিয়ে চলে গেছে। গ্রামের মধ্যে এক পাড়া হতে অন্য পাড়ায় যাওয়ার জন্য কয়েকটি উঁচু রাস্তা আছে, তা ছাড়া জালের মতো ছড়িয়ে আছে পায়ে চলার গলিপথ। উঁচু রাস্তা দিয়ে রিকশা, টেম্পু, ভ্যান ইত্যাদি চলাচল করে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

'অবারিত মাঠ গগন ললাট চুমে তবে পদধূলি, ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।' সত্যিই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশের গ্রামের সুন্দর বর্ণনা সার্থক হয়েছে আমাদের গ্রামখানির ক্ষেত্রে। মনে হয় যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে এ গ্রামটি সাজানো। মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাবৈচিত্র্যে ভরপুর আমাদের গ্রামখানি। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে দেখা যায় আম, জাম, কাঁঠাল, বেল, কুল, পেয়ারা এবং নানা রকমের গাছ। মাঠভরা ধান ও অন্যান্য শস্যক্ষেতের ওপর দিয়ে যখন বাতাস বয়ে যায় তখন খুবই সুন্দর দেখায়।

সামাজিক অবস্থা

আমাদের গ্রামটির সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি একেবারে নেই বললেই চলে। শিক্ষার প্রভাবে গ্রাম্য কুসংস্কারও এখানে নেই।

উপসংহার

এমন একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করে আমি ধন্য। সর্বদাই সাধ জাগে যেকোনো মূল্যে গ্রামের ঐতিহ্য বজায় রাখব। উন্নয়নে তৎপর হব এবং সর্ব-প্রকার কুপ্রভাব থেকে গ্রামটি মুক্ত রাখব। আমাদের গ্রামটি যেন চিরদিন আদর্শ গ্রাম হিসেবে টিকে থাকে— সৃষ্টিকর্তার নিকট এ প্রার্থনা করি। [বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url