নৌকা বাইচ সম্পর্কে রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
নৌকাবাইচ রচনা
সবুজ-শ্যামল ও বঙ্গভূমির বুক চিরে বয়ে চলেছে শত শত নদী, খাল। আর নদীমাতৃক এ দেশ তার সন্তানদের আপন বৈশিষ্ট্য দিয়ে মণ্ডিত করেছে নিবিড়ভাবে। নদীর তীরেই জনপদ, তাই নদীকে কেন্দ্র করেই সবকিছু; এমনকি খেলাধুলাও। নৌকাবাইচ তেমনই একটি জনপ্রিয় এবং বাংলার নিজস্ব খেলা ।
নৌকাবাইচ হলো একদল মাঝি নিয়ে গঠিত দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত নৌকা চালনা প্রতিযোগিতা। বাইচ শব্দটি ফরাসি যার অর্থ বাজি বা খেলা । নৌকার দাঁড় টানার কসরত ও নৌকা চালনার কৌশল দ্বারা জয়লাভের উদ্দেশ্যে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
নৌকাবাইচ বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং খেলাধুলার নদ-নদীর প্রভাবে এক সমৃদ্ধ ফসল। নদীমাতৃক এদেশে বিকাশমান নৌ- শিল্পকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় বন্দর ও বাজার গড়ে ওঠে, দ্রুত যাতায়াতের আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে একসময় বিভিন্ন নৌযানের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয় । ক্রমে তা আনুষ্ঠানিক নৌকাবাইচে রূপ নেয় । বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নৌকার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। ঢাকা, ময়মনসিংহ ইত্যাদি এলাকার বাইচের জন্য ব্যবহৃত হয় কোশা নৌকা ।
আরো পড়ুন ঃ
টাঙ্গাইল ও পাবনা জেলায় নৌকাবাইচে সরু ও লম্বা দ্রুত গতিসম্পন্ন ছিপ জাতীয় নৌকা ব্যবহৃত হয়। কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলে বাইচের জন্য ব্যবহৃত হয় সারেঙ্গি নৌকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাইচের জন্য সাম্পান ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে মুসলিম শাসন আমলে নবাব-বাদশাহরা নৌকাবাইচের আয়োজন করতেন। কোনো কোনো নবাব বা বাদশার নৌ-বাহিনী নৌকাবাইচ উৎসবে অংশ নিত। পূর্ববঙ্গের ভাটি অঞ্চলে রাজ্যরক্ষা ও রাজ্যজয়ের অন্যতম উপায় ছিল নৌশক্তি। মগ ও হার্মাদ জলদস্যুদের রাজ্যজয়ের অন্যতম উপায় ছিল নৌশক্তি। মগ ও হার্মাদ জলদস্যুদের দমন করতে নৌশক্তি ব্যবহৃত হতো। এদের রণবহরে দীর্ঘ প্রকৃতির ছিপ নৌকা থাকত। বর্তমানে নৌশক্তির প্রতিযোগিতামূলক আনন্দোৎসব আজও নৌকা বাইচের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে বিরাজমান ৷
বাংলাদেশে সাধারণত ভাদ্র-আশ্বিন মাসে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। জাতীয় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় নির্ধারিত দূরত্ব ৬৫০ মিটার । প্রতিটি নৌকায় ৭, ২৫, ৫০ বা ১০০ জন মাঝি থাকতে পারে। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ রোয়িং ফেডারেশন গঠিত হয়। এই ফেডারেশন আন্তর্জাতিক রোয়িং ফেডারেশনের সদস্য। দেশে প্রতিবছরই জাতীয় নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আরো পড়ুন ঃ
বাঙালির নিজস্ব খেলা নৌকাবাইচ। অথচ সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ খেলা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সামান্য সচেতনতাই পারে নৌকাবাইচকে বাঁচিয়ে রাখতে। তাহলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব হবে। সম্ভব হবে নৌকাবাইচের জাতীয় মানকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করা ।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url