নৌকা ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
নৌকা ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা
ভূমিকা ঃ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশটির বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে অসংখ্য ছোট-বড় নদী-নদী। নদী-নদীর এদেশে বছরের যেকোনো মৌসুমেই নৌকা ভ্রমণ অত্যন্ত আনন্দের ও উপভোগের। নৌকা ভ্রমণে বাংলা মায়ের স্বরূপ চিনতে পারা যায়, পাওয়া যায় অকৃত্রিম আনন্দ, যা অন্য কোনো ভ্রমণে আশাও করা যায় না। জীবনে এ সুযোগ আসামাত্র সবার সাদরে নিয়ন্ত্রিত অতিথিদের মতো গ্রহণ করা উচিত ।
ভ্রমণের উদ্দেশ্য ঃ সময়টা শরৎকাল। স্কুলে গিয়ে জানলাম স্কুল এ সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। এক সপ্তাহের বন্ধে আমরা সবাই আনন্দে আত্মহারা। আমরা দু বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, অবসর বিনোদনে মেঘনা নদীতে বেড়াতে যাব। সেদিনের সেই স্মৃতি আজও আমার পরিষ্কার মনে পড়ছে।
▶▶আরো পড়ুন ঃ ট্রেন ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা রচনা
ভ্রমণের আয়োজন ঃ সকাল আটটায় বাগমারী থেকে যাত্রা করলাম। আমরা সঙ্গে বিস্কুট, কলা, নারকেল, বাদাম ও বিনোদনের জন্য একটি ক্যাসেট প্লেয়ার নিলাম। দুপুরে খাওয়ার জন্য পোলাও, গরুর মাংস সঙ্গে নিলাম। রনি নিল তার হারমোনিয়াম, মিশেল নিল ক্যামেরা, নিপুণ নিল বাঁশি। আর আমি নিলাম একটি রেডিও।
ভ্রমণযাত্রা ঃ দিনটি ছিল আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি মেঘমুক্ত পরিষ্কার একটি দিন। মাঝি নৌকা ছাড়ল। ভোরের শান্ত স্নিগ্ধ বাতাসে নৌকা ধীরগতিতে এগিয়ে চলল।
ভ্রমণের বর্ণনা ঃ মেঘনা নদী তখন পূর্ণ যৌবনা। সকালে মেঘনা উপভোগ্য। স্রোতের অনুকূলে নৌকাটি চলতে লাগল। নদীতে নানা রঙের পালতোলা ছোট-বড় অনেক নৌকা দেখলাম। মাঝে মাঝে লঞ্চ ও স্টিমারের দেখা পেলাম। নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমারের দৃশ্য দেখতে খুবই মনোরম। জেলে নদীতে জাল ফেলছে। জেলেদের মাছ ধরার কৌশলও অভিনব। দূরে গ্রামগুলোকে মনে হলো আকাশের প্রান্তের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। মাছরাঙা পাখি নদীতে ডুব দিয়ে কিছুক্ষণ পরে মাছ নিয়ে ভেসে উঠছিল। সাদা সাদা বালিহাঁস নদীর পানিতে খেলা করার দৃশ্য খুবই মনোরম।
এসব দৃশ্য আমাদের খুব ভালো লাগছিল। চারদিকে কূল নেই, কিনারা নেই, বাতাস নেই তবু ঢেউয়ের খেলা। এরূপ দৃশ্য ।' রনির গানের সাথে দেখতে দেখতে আমাদের নৌকা চলতে লাগল। হঠাৎ রনির কণ্ঠে ধ্বনিত হলো – ‘আমার গহীন গাঙের নাইয়া সাথে নিপুণ বাজাচ্ছিল বাঁশি। আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে গান শুনতে লাগলাম। সমগ্র পরিবেশটা একটা স্বপ্নময় কল্পলোকে পরিণত হলো। ।' মাঝির গানের পর ক্যাসেট রনির গানের শেষে মাঝির কণ্ঠে ধ্বনিত হলো ভাটিয়ালি রাগিনী— ‘পদ্মার ঢেউরে মোর শূন্য হৃদয় নিয়ে প্লেয়ার চালু করে দিলাম । মিশেল নদীর অনেকগুলো দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করল। সকাল এগারোটার সময় আমরা সবাই মিলে হালকা নাস্তা খেয়ে নিলাম ।
নদীর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা কামারঘাট বাজারে এসে পৌছলাম। সবাই বাজারে গিয়ে চা পান করলাম। তারপর আবার নৌকা চলতে লাগল। চারদিকের বিভিন্ন দৃশ্য দেখতে দেখতে হৈ চৈ এর মধ্য দিয়ে কখন বেলা দুটা বেজে গেল টেরও পেলাম না। রাঢ়িখাল স্টিমার ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে সাবই তীরে নামলাম। স্টিমার ঘাটের পাশের গ্রামগুলো ঘুরে ফিরে দেখলাম। দেখার পর বেলা তিনটার সময় নৌকার নিকট আসলাম এবং সবাই মেঘনা নদীতে গোসল করলাম। গোসল শেষ করে একসঙ্গে খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম। আনন্দ- উল্লাসের মধ্য দিয়ে খাওয়া শেষ করে সবাই নৌকায় বিশ্রাম নিলাম ।
▶▶আরো পড়ুন ঃ একটি চাঁদনী রাত রচনা
এবার প্রত্যাবর্তনের পালা। সাড়ে চারটায় মাঝি নৌকা ছাড়ল। নৌকা চলতে চলতে সন্ধ্যা গড়িয়ে আসল। উপভোগ করলাম নদীতীরে সূ র্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। সূর্য যখন অস্ত যাচ্ছিল তখন তার লাল রক্তিম আলোকবিন্দু কূলের গাছ-গাছালির উপর বিলিয়ে দেওয়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখলাম । সাদা বকের দল শ্রেণিবদ্ধভাবে আকাশ পথে পাড়ি জমাচ্ছে। সন্ধ্যার নিস্তব্ধতা ভাঙে মাঝির ভাটিয়ালি গানে-
‘মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে
আমি আর বাইতে পারলাম না।'
উপসংহার ঃ নৌকাভ্রমণ যে কত আনন্দের, কত উপভোগের তা নৌকাভ্রমণে না গেলে বুঝতেই পারতাম না। কর্মব্যস্ত সময়ে সেদিনের নৌকাভ্রমণের সুখকর স্মৃতি আজও আমার মনে যখন উদয় হয় তখন বড়ই ভালো লাগে ।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url