খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকা ঃ ক্রীড়া বা খেলাধুলা শরীরচর্চা ও আনন্দ লাভের সঙ্গে সম্পৃক্ত ক্রিয়াকলাপ। সুন্দর ও সুস্থ জীবন গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, এমনকি জাতীয় জীবনের সফলতা লাভের পেছনে কাজ করে সুস্থ ও সুঠাম দেহ। আর এই সুস্থ দেহ গঠনের জন্যে খেলাধুলা অপরিহার্য।
খেলাধুলার উদ্ভব ঃ সুপ্রাচীন কাল থেকেই মানুষকে সুস্থদেহী, সবল ও কর্মক্ষম করে রাখার জন্যে বিভিন্ন খেলার প্রচলন ছিল। কুস্তি খেলার প্রথম সূচনা হয় ইরাকে, ৪০০০ বছরেরও বেশি আগে। খ্রিষ্টপূর্ব ২০৫০ বছর আগে মিশরে শুরু হয় হকি খেলা। এ ছাড়া মুষ্টিযুদ্ধ, অসিযুদ্ধ, দৌড়-ঝাঁপ ইত্যাদির ইতিহাসের সূচনাও প্রায় ৪০০০ বছর আগে। প্রাচীন গ্রিসে অলিম্পিক খেলার সূত্রপাত। সেই বিশাল প্রতিযোগিতায় গ্রিসের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াকুশলীরা দৌড়, ঝাঁপ, মল্লযুদ্ধ, চাকতি নিক্ষেপ, বর্শা ছোড়া, মুষ্টিযুদ্ধ ইত্যাদি প্রতিযোগিতায় অংশ নিত। এভাবে অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে ।
আরো পড়ুন ঃ
ব্যক্তিত্ব অর্জনে খেলাধুলা ঃ ব্যক্তিত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে খেলাধুলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইংরেজি প্রবাদে বলা হয়ঃ All work and no play make Jack a dull boy. বস্তুত, মনের সতেজতা ও প্রাণময়তা বৃদ্ধিতে খেলাধুলার ভূমিকা যথেষ্ট। খেলাধুলায় রয়েছে সুস্থ প্রতিযোগিতা। তা অনুশীলনের মাধ্যমে মনে আত্মবিশ্বাস ও সবলতার জন্ম দেয়। খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব অর্জনের মাধ্যমে জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা সহজ হয়ে ওঠে। খেলাধুলা অনেক ক্ষেত্রে মানসিক দুশ্চিন্তা লাঘবের উপায়।
তা ছাড়া দাবা, তাস ইত্যাদি চিন্তামূলক খেলা মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে বিকশিত করে। আত্মশক্তি অর্জনে খেলাধুলার ভূমিকা অসামান্য। ছোটবেলায় যিনি নানা রোগে ভুগে মরতে বসেছিলেন সেই জনি ওয়াইজমুলারই অলিম্পিক সাঁতারে সোনা জয় করেন। ১৯৬০-এর অলিম্পিক দৌড়ে তিনটি সোনা বিজয়ী“হিউম্যান লোকোমোটিভ' নামে পরিচিত চেকোশ্লোভাকিয়ার এমিল জটোপেক ছোটবেলায় খুঁড়িয়ে চলতেন।
শিক্ষায় খেলাধুলা ঃ জীবন গঠনের সূচনায় সব প্রাণীর ক্ষেত্রেই খেলাধুলা শিক্ষার উপায়। উন্নত বিশ্বে বিদ্যাশিক্ষাকে আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক করতে শিক্ষাব্যবস্থায় এমন খেলাধুলা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে টেবিল টেনিস, ব্যায়াম, দাবা, বাস্কেটবল ইত্যাদি খেলার ব্যবস্থা থাকে। আজকাল ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলায় উৎসাহী করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে ।
মানব-মৈত্রী গঠনে খেলাধুলা ঃ খেলাধুলা দেশে-দেশে রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে প্রীতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করায়ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে । খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শান্তি ও মৈত্রী স্থাপনের সবচেয়ে বড় সম্মেলন অলিম্পিক গেমস্ । এই বিশাল ক্রীড়া সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় সব দেশের হাজার হাজার খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেন। ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকের অনুপম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিটি বিশ্ববাসী অনুভব করেছে, দেশভেদ জাতিভেদ সত্ত্বেও মানুষ এক ও অভিন্ন সত্তা।
অলিম্পিক ছাড়াও এমনিভাবে ক্রিকেট ও ফুটবল বিশ্বকাপ, ইউরোপিয়ান গেমস, এশিয়ান গেমস ইত্যাদি বহু খেলার আসর আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি রক্ষায় সহায়তা করে। এভাবে বিশ্বে সাম্য, মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের জয়গান ধ্বনিত হয় । স্বাস্থ্যোন্নয়ন ও রোগ প্রতিরোধে খেলাধুলা : স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। শরীরের কোষগুলোর পুষ্টিসাধন, সহজ ও স্বাভাবিক রক্তচালনা, পরিপাকযন্ত্রকে কর্মক্ষম রাখা প্রভৃতির জন্যে প্রত্যেকের উচিত প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো শারীরিক খেলায় অংশ নেওয়া বা শরীরচর্চা করা।
আরো পড়ুন ঃ
শুধু স্বাস্থ্য উন্নয়নেই নয়, বিভিন্ন প্রকার ব্যাধি থেকে স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতেও খেলাধুলা প্রয়োজনীয়। হৃৎপিণ্ডের ও ফুসফুসের বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধেও প্রয়োজন খেলাধুলা। খেলাধুলা মানুষের মনের দুশ্চিন্তা লাঘব করে, সহনশীলতা বাড়ায় এবং দৈহিক পরিশ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাঁতারের মতো খেলাধুলা মানুষের ফুসফুসের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। মেদ চর্বি ইত্যাদি দূর করে সুন্দর ও সুঠাম শরীর গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই ।
চরিত্র গঠনে খেলাধুলা ঃ খেলাধুলা মানুষের চরিত্র গঠনেও সাহায্য করে। খেলাধুলার নিয়মকানুন মেনে চলতে গিয়ে মানুষ শেখে নিয়মানুবর্তিতা । খেলাধুলা মানুষকে করে সুশৃঙ্খল। কোচ ও রেফারির কথা মান্য করে দলপতি। দলপতির অধীনে দলবদ্ধ হয়ে খেলতে গিয়ে খেলোয়াড়রা সকলে মিলেমিশে কাজ করার শিক্ষা পায়। এভাবে যৌথ পরিকল্পনা, যৌথ কাজ ও যৌথ শ্রমের মধ্য দিয়ে মানুষ নৈতিকভাবে সবল হয়ে ওঠে।
অত্যাধিক খেলাধুলার অপকারিতা ঃ খেলাধুলা অনেক উপকার করলেও এর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাধুলা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যে হুমকি হতে পারে। ফুটবল, কাবাডি, রাগবি, কুস্তি, বক্সিং ইত্যাদি খেলায় রয়েছে মারাত্মকভাবে আহত হবার আশঙ্কা। অতিরিক্ত ক্রীড়া-আসক্তি অনেক সময় জীবনের স্বাভাবিক ও স্বচ্ছন্দ বিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় কোনো প্রতিযোগিতায় পরাজিত দল ও তাদের অন্ধ সমর্থকরা জয়ী দলের বা তাদের সমর্থকদের সাথে মারামারি বাধিয়ে দেয়। খেলাধুলার ক্ষেত্রে এ ধরনের উগ্রপন্থি মনোভাব কখনও কাম্য হতে পারে না ।
আরো পড়ুন ঃ
উপসংহার ঃ খেলাধুলা যেমন শরীর-গঠনের সহায়ক তেমনি আনন্দদায়ক। প্রতিটি খেলায় থাকে একধরনের কর্তব্যবোধ। খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষ দায়িত্বশীল হয় কর্তব্য সম্পাদনে, একই সঙ্গে পায় মর্যাদা অর্জনের শিক্ষা। ক্রিকেটে সাম্প্রতিককালে আমাদের তরুণ খেলোয়াড়দের অর্জন জাগরণ ঘটিয়েছে জাতির মর্যাদাবোধের। জাতীয় জীবনে খেলাধুলার প্রসার ঘটলে জাতি সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করতে শেখে, ঐক্যচেতনা গড়ে ওঠে। জাতি এগিয়ে যেতে পারে নিত্যনতুন অর্জনের পথে ।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url