আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
আমার জীবনের লক্ষ্য
সূচনা ঃ মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত কিন্তু তার কর্মক্ষেত্র অনেক বড়। এ সংক্ষিপ্ত জীবনে উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করতে হলে প্রত্যেক মানুষকে শুরুতেই সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। কারণ লক্ষ্যহীন মানুষ জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে না। জীবনে যাদের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই, তারা স্রোতের মতো লক্ষ্যহীনভাবে ভেসে বেড়ায়।
লক্ষ্যহীন জীবন ঃ লক্ষ্যহীন মানবজীবন অর্থহীন। হালবিহীন নৌকা যেমন গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে না, তেমনি লক্ষ্যহীন মানুষ জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে পারে না। যারা লক্ষ্যহীনভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে তাদের ভবিষ্যৎ হতাশাব্যঞ্জক এবং তারা সমাজে শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় মানুষ আমার মা রচনা
লক্ষ্য নির্ধারণ ঃ অবিচল লক্ষ্য স্থির করে যারা জীবন পথে অগ্রসর হয় তারা সেই অনুযায়ী নিজেরদের তৈরি করে নেয়। তারা আত্মশক্তির ওপর নির্ভর করে স্থির লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলে। প্রতিটি মানুষকে জীবনের প্রভাতে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে সেটাকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। তবে চিন্তাভাবনা না করে ঝোঁকের বশে কোনো লক্ষ্য স্থির করা ঠিক নয়। নিজের মেধা, কর্মশক্তি, ইচ্ছে অনুসারে তা ঠিক করতে হবে। মৃত্যুর নাম শুনলে যে লোকের গা ভয়ে শিউরে ওঠে ডাক্তারি শেখা কিছুতেই তার লক্ষ্য হতে পারে না। তাই খুব ধীরস্থিরভাবে চিন্তাভাবনা করে লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
আমার জীবনের লক্ষ্য ঃ আমি সবেমাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তাই এখনই আমার জীবনের লক্ষ্যটি স্থির করে নিতে হবে এবং তার জন্য কাজ করে যেতে হবে। দেশসেবা আমার জীবনের সববেচয়ে বড় উদ্দেশ্য। লেখাপড়া শেষে আমি দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। আমার বন্ধুদের অনেককে তাদের জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তাদের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ উকিল আবার কেউ বড় অফিসার হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। তবে আমি এসবের কোনোটাই হতে চাই না। আমি চাই দেশের সেবার জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করতে।
আমি চাই শিক্ষকতার মহান পেশায় ব্রতী হয়ে দেশের সাধারণত মানুষের সেবা করতে। আর তাই আমি হতে চাই একজন স্কুল শিক্ষক। নিভৃত পল্লির অবহেলিত জনপদে আমার বসবাস। আমি আমার অবহেলিত গ্রামবাসীদের মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে তাদেরকে কুসংস্কারমুক্ত করতে চাই।
কেন শিক্ষক হব ঃ শিক্ষাই পারে দেশ ও জাতিকে বদলে দিতে। শিক্ষার প্রভাবেই মানুষ কুসংস্কার, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে জাতিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে পারে। জাতিকে বিশ্ব দরবারে উন্নত মর্যাদাশালী জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ আমার প্রিয় মাতৃভূমি। এদেশকে আমি আমার মায়ের মতোই ভালোবাসি। আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকই অশিক্ষিত। বিশেষ করে পল্লির শতকরা পঁচাশি ভাগ লোকই নিরক্ষর। তাই শিক্ষার অভাবে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হতে পারছে না।
শিক্ষার আলো বঞ্চিত লোকেরা বিভিন্ন কুসংস্কারে নিমজ্জিত। আমি গ্রামবাসীদেরকে কুসংস্কারমুক্ত করে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূ চি বাস্তবায়ন করতে চাই। আমি আমার গ্রামবাসীকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চাই। তারা শিক্ষিত হলেই বুঝতে পারবে দেশের মঙ্গলের জন্য তাদের কী করা উচিত। সবাই মিলে দেশসেবায় এগিয়ে এলেই দেশ সত্যিকারভাবে উন্নতির পথে ধাবিত হবে। আমাদের দেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি। সেজন্য দেশের জমির ওপরও খুব বেশি চাপ পড়ছে।
তাই অধিক জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য বর্তমানে পুরোনো পদ্ধতির বদলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জমি চাষ করতে হবে ও অধিক ফসল ফলাতে হবে। আমি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চাষাবাদ সম্পর্কে গ্রামের নিরক্ষর চাষিদেরকে বাস্তব শিক্ষা দিব। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারলে আমাদের উর্বর জমির উৎপাদন দুতিন গুণ বেড়ে যাবে। এতে খাদ্যের ঘাটতি থাকবে না ।
আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা
বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে কলেরা, বসন্ত, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ আরো অনেক সংক্রামক ব্যাধি লেগেই আছে। জনসাধারণের মূর্খতা ও অজ্ঞতার জন্যই এরূপ হচ্ছে। তাদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে পারলে তারা বিধির নিয়মগুলো জানতে পারবে। এতে দেশবাসীর প্রকৃত মঙ্গল সাধিত হবে।
উপসংহার ঃ নিঃস্বার্থভাবে মানবসেবাই আমার জীবনের লক্ষ্য, আমার স্বপ্ন। তাই একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে গ্রামের অশিক্ষিত ও দুঃখী মানুষের সেবায় সর্বশক্তি নিয়োগ করব। আমার লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমি ছাত্রাবস্থা থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব ।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url