একটি চাঁদনী রাত রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

একটি চাঁদনী রাত রচনা

চাঁদনি রাতে একটি গ্রামে

জ্যোৎস্না রাতের সৌন্দর্য চিরকালই মানুষের হৃদয়ে আন্দোলিত করে। দিনের ঝলমলে আলোয় কর্মচঞ্চল প্রকৃতির রূপ দেখে বোঝার উপায় নেই একটি পূর্ণিমার রাত কেমন হতে পারে। আর সেটা যদি হয় গ্রামের জ্যোৎস্না রাত তবে তো কথাই নেই । শহরের আকাশেও চাঁদ ওঠে। তবে শহরের কৃত্রিম আলো ঝলমল রাতে নাগরিক পূর্ণিমা যেন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। তাই গ্রাম-বাংলার অকৃত্রিম পরিবেশেই পূর্ণিমার চাঁদ মনকে অভিভূত করে তার অপরূপ মায়াবি আলোর মোহনীয় আকর্ষণে। সেবার গ্রামে গিয়ে এমনি এক মায়াবি জ্যোৎস্না রাত দেখে এমনি মনে হয়েছে আমার ।

চাচাতো বোনের বিয়ে । এই উপলক্ষে বাবা মা আমি ও আমার ছোট ভাই গিয়েছিলাম আমাদের গ্রামের বাড়িতে। নতুন দুলা ভাই আর অন্য আত্মীয়দের সাথে বেশ আনন্দেই কেটে গেল তিনটি দিন। যেদিন শহরে ফিরে আসব তার আগের রাতে আমরা সবাই বাড়ির উঠানে মাদুর বিছিয়ে বসলাম। সে রাতটি ছিল পূর্ণিমার রাত। দেখলাম, চাঁদের ঝকঝকে রুপালি আলোয় চারদিক ভেসে যাচ্ছে। বাড়ির বড়রাও আমাদের সাথে যোগ দিলেন। কেউ কেউ পানের বাটা নিয়ে বসলেন।

▶▶আরো পড়ুন ঃ নদীতীরে সূর্যাস্ত রচনা

রাত তখন আটটা হবে। এর মধ্যেই চারপাশ নীরব নিথর। এমনিতেই গ্রামের লোকজন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। তার ওপর আমাদের বাড়িটি লোকালয় থেকে একটু দূরে এবং আলাদা। চারপাশে অনেকদূর পর্যন্ত খোলামাঠ, ধানক্ষেত। দূরে আমাদের বাড়ির মতো গাছপালা ঘেরা ছাড়া ছাড়া বাড়ি। সেগুলোতে কোনো আলো দেখা গেল না। জ্যোৎস্নার আলোয় সেগুলোকে স্বপ্নলোকের বাড়ি বলে মনে হতে লাগল। চারদিক নিস্তব্ধ, নিঝুম। হালকা ঝির ঝির বাতাস বইছে। উঠোন জুড়ে গাছের ফাঁক দিয়ে রুপালি জ্যোৎস্না যেন গলে গলে পড়ছে। সমস্ত প্রকৃতি গভীর ঘুমে এলিয়ে পড়েছে। কেবল জেগে আছে আকাশের সেই বিশাল রুপালি চাঁদটা – একাকী। আমি গুণগুণ করে গান ধরলাম---

‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে

উছলে পড়ে আলো,

ও রজনীগন্ধা তোমার

গন্ধ সুধা ঢালো।'

আমাদের বাড়ির উঠোনের এক পাশে হাসনাহেনার ঝোপ। সেখান থেকে মিষ্টি সুবাস ভেসে আসছে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় সবাইকে কেমন যেন মায়াবি দেখাচ্ছিল। পূর্ণিমার আলো যেন আমাকেও মোহাচ্ছন্ন করে ফেলল। আমি একা একা পুকুর ঘাটে চলে গেলাম। আমাদের পুকুরটা এমনিতেই বড়। জ্যোৎস্নার আলোয় তা যেন আরো অনেক বড় মনে হলো। পুকুরের টলটলে পানি নিথর, স্থির। তার মাঝখানে গোল রুপালি চাঁদটি সোনায় থাকার মতো চকচক করে জ্বলছে। মাঝে মাঝে হালকা বাতাসে পুকুরে পানি ছোট ছোট তরঙ্গে দুলে উঠছে।

সেই সাথে দুলে উঠছে পুকুরের আয়নায় উজ্জ্বল চাঁদটা । পুকুরের পাড়ে ঝোপঝাড়ে একটা-দুটো জোনাকি দেখা গেল । জ্যোৎস্নার উজ্জ্বলতা আরো বাড়িয়ে দিতেই তারা যেন আজ বের হয়েছে। আমাদের বাড়ির পেছনে একটা জংলার মতো জায়গা আছে । রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে ভেসে আসতে লাগল শেয়ালের ডাক। চাঁদ যখন ঠিক মাথার ওপরে উঠল তখন সে ডাক আরো বড় হলো। এরই মধ্যে চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে এসেছে। মা এসে তাড়া দিলেন, ঘুমুতে যেতে। কাল সকাল সকাল ফিরতে হবে।

▶▶আরো পড়ুন ঃ একটি ঝড়ের রাত রচনা

বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে জ্যোৎস্না দেখতে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে স্বপ্ন দেখলাম আমি জ্যোৎস্নার মধ্যে আকাশে ডানা মেলে চাঁদের দেশে উড়ে যাচ্ছি। সে দিনের পর আরো অনেকবার আমি শহরে জ্যোৎস্না দেখেছি। কিন্তু সেদিন গ্রামে প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে অমন মায়াবি জ্যোৎস্না আর দেখা হয়নি । দেখা হয়নি জ্যোৎস্নার আলোয় জোনাকির মিটিমিটি জ্বলা । তাই সেদিনের সেই জ্যোৎস্না রাতের স্মৃতি আমাকে এখনো টানে। বড় ইচ্ছে করে পূর্ণিমার রাতগুলো গ্রামে কাটাতে।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url