মোবাইল ফোন রচনা বাংলা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
মোবাইল ফোনবা যোগাযোগ উন্নয়নে মোবাইল ফোনবা মোবাইল ফোন
ভূমিকা ঃ বিজ্ঞান দূরকে করেছে নিকট এবং পরকে করেছে আপন। বিজ্ঞান তার বিস্ময়কর সব আবিষ্কারের দ্বারা এভাবে মানুষের জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে দিয়েছে। মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের একটি নতুন সংযোজন হলো মোবাইল ফোন। মোবাইলের মাধ্যমে মানুষ দূর-দূরান্তে অবস্থিত প্রিয়জনের প্রশান্তি ভরা আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়। মোবাইল যেমন দূরত্বকে জয় করেছে তেমনি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে অবিচ্ছিন্ন বন্ধন ।মোবাইল ফোনের ইতিহাস ও কার্যপ্রণালি ঃ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল সর্বপ্রথম দূরে অবস্থিত মানুষের সাথে বার্তা বা কথা পৌছাতে সক্ষম হন। আলেকজান্ডার এবং মারকনির সূত্র ধরেই ডেটরয়েট পুলিশ গাড়িতে কার মোবাইল রেডিও প্রচলন হয়। ১৯৬৫ স্টকহোমে কার টেলিফোন ব্যবহার শুরু হয়। যার আকার ছিল একটি প্রমাণ সাইজের স্যুটকেসের সমান এবং ওজন ছিল প্রায় ৪০ কেজি গাড়ির ব্যাটারির জন্য ছিল মহাত্রু। মোবাইল ফোনের জেনারেশনকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন ঃ
মোবাইল ফোনের জেনারেশনে ভয়েস কোয়ালিটি ছিল অত্যন্ত নিম্ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল নিম্নমানের। দ্বিতীয় জেনারেশনে কিছু ডাটা ও কথা পৌঁছানোর সুবিধা থাকে । নানা প্রকার সাবসক্রাইবার সার্ভিসের বেছে নেওয়ার সুবিধা। তৃতীয় জেনারেশনে মোবাইলে সংযুক্ত হয় উচ্চতর সুবিধা। ইন্টারনেট, মাল্টিমিডিয়া, গ্লোবাল রোমিং-এর সুবিধা এখন মোবাইলে যুক্ত হয়েছে।
মোবাইল ফোন সিস্টেমে একটি শহরকে ছোট ছোট সেল (cell)-এ ভাগ করা হয়। যার ফলে শহরের মধ্যে ফ্রিকুয়েন্সি পুনঃপুন ব্যবহার করা হয়। আর এর ফলেই একই সময়ে একই শহরে লক্ষ লক্ষ লোক সেল ফোনে কথা বলতে পারছে। এই সেল সাধারণত ১০ বর্গমাইল হতে পারে (সম্ভবত ৩ মাইল × ৩ মাইল) । সাধারণত একটি বড় হেক্সাগন গ্রিডের একটি হেক্সাগন অংশ হিসেবে একটি সেলকে চিন্তা
করা হয় । প্রতিটি সেল এ একটি রিলে স্টেশন থাকবে যাতে একটি টাওয়ার ও ছোট বিল্ডিং থেকে রেডিও ইকুইপমেন্টসহ সেল ফোন ও রিলে উভয়েই লো পাওয়ারে সিগনাল আদান-প্রদান করে। প্রতিটি শহর একটি কেন্দ্রীয় অফিস-এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয় যাকে বলে মোবাইল টেলিফোন সুইচিং অফিস।
বাংলাদেশের মোবাইল ফোন এবং এর রেডিয়েশন ঃ বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবহারে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। মোট জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ এখন মোবাইল ব্যবহার করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ছয়টি সরকারি ও বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি ।
মোবাইল ফোন মূলত একটি টুওয়ে ট্রান্সমিটার, যা তথ্য গ্রহণ ও প্রদান দুটোই করতে পারে । কোনো মোবাইল ফোনো যখন কোনো তথ্য পাঠাতে চায় তখন সেটা থেকে ওয়েব এর মাধ্যমে নিটকবর্তী কোনো স্টেশন গ্রহণ করে নির্দিষ্ট মাত্রায় পুনরায় ছেড়ে দেয় । মোবাইলের যে যে ফ্রিকোয়েন্সি বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যবহার হচ্ছে তা হচ্ছে ৮০০ কিংবা মেগাহার্টস। গ্রামীণ, একটেল, বাংলা লিংক এই তিনটি ৯০০ মেগাহার্টস এবং সিটিলেস ব্যবহার করছে ৮০০ মেগাহার্টস। যতকম ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয় ততই রেডিয়েশনের পরিমাণ বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। তবে রেডিয়েশন সেটের দামের ওপরও নির্ভর করে। দামি সেটের রেডিরেশন মাত্রা কম দামের সেটের রেডিয়েশনের চেয়ে কম।
আরো পড়ুন ঃ
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মোবাইল ঃ মোবাইল ফোন পৃথিবীকে যেন একটি ক্ষুদ্র সেটের মধ্যে বন্দি করেছে। মোবাইল ফোনের সাহায্যে আধুনিক ব্যস্ততম মানুষ দূর-দূরান্তে মানুষের সাথে যেকোনো মুহূর্তে যোগাযোগ করতে পেরেছে। মোবাইল ফোনের সুবিধা হলো এটি সঙ্গে করে বয়ে বেড়ানো যায়। বিপদে আপদে প্রিয়জনের খোঁজখবর নেওয়া যায়। মোবাইল ফোনের উদ্ভাবনের পূর্বে বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকা বন্ধুর খবর জানা সময় সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল।
এখন মুহূর্তের মধ্যে যেকোনো সময় আপনজনের সঙ্গে কথা বলে তার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় । মোবাইলের শুধু কথাই হয় না, এসএমএস এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংবাদ মুহূর্তেই পৌঁছে দিতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে মোবাইলের বিকল্প এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। মোবাইল কোম্পানিগুলো মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেবা কার্যক্রম গ্রাহকের দোর গড়ায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছে।
প্রিয়জনের সাফল্যে অভিনন্দন প্রেরণ এবং নিজের সুসংবাদ প্রদানে মোবাইল যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। ইদানীং মোবাইলের মাধ্যমে কথা বলা, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসেবা সংবাদ প্রেরণ ছাড়াও বিভিন্ন সেবা পাওয়া সম্ভব। মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের খবর সহজে পাওয়া যায় এবং ঘরে বসে যে কারো সাথে যোগাযোগ করা যায় । ইন্টারনেট ব্রাউজিং-এর মাধ্যমে যেকোনো সময় যেকোনো তথ্য পেতে পারে মোবাইলের সাহায্যে। মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষে মানুষে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। মোবাইল ফোন আত্মীয়- স্বজনের, মানুষের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে আপডেট সংবাদ এবং অন্যান্য সেবা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। মোবাইলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নেওয়া যায়। মোবাইল কোম্পানিগুলো জাতীয় দিবসের প্রতিপাদ্য এবং সরকারের আদেশ খবর গ্রহণের নিকট পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। মোবাইলের কথা বলার স্থান নির্বাচন করে এবং কথাবার্তার গতিপরিধি নির্ণয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করছে। এককথায় বলা যায়, মোবাইল যোগাযোগের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। গান- বাজনা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি বিনোদনমূলক কাজে মোবাইল ফোনের ব্যবহার হচ্ছে। স্মৃতিকে ধরে রাখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ক্যামেরা।
মোবাইলের ক্ষতিকারক ঃ মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সস্তা, সহজসাধ্য এবং সময় ও অর্থের সাশ্রয়পূর্ণ করে থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ চক্রের দ্বারা নাশকতামূলক কার্যক্রম সহজেই হয়ে থাকে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতি অসামাজিক কার্যকলাপে মোবাইল সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোবাইলের নেটওয়ার্কের কারণে অগ্রিম সংবাদ পেয়ে দুষ্কৃতকারীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। মোবাইলের মাধ্যমে হুমকি প্রদান করে কারো কারো মনে ভীতি সঞ্চার কারে থাকে দুষ্কৃতকারীরা। মোবাইল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অনেক ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
আরো পড়ুন ঃ
মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে থাকে। মোবাইলের রেডিয়েশন মানুষের দেহে উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ব্রেন টিউমারের মতো কঠিন রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এর রেডিয়েশন নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত করে। চোখের ক্যাটরেখ, রক্তের উপাদনগত পরিবর্তনে রেডিয়েশন প্রভাব ফেলতে পারে ।
উপসংহার ঃ কিছু ক্ষতিকর দিক থাকা সত্ত্বেও মোবাইল মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। মোবাইল- বিহীন এক মুহূর্তের কথা কেউ চিন্তা করতে পারে না। মানুষের সুখ-দুঃখের অনুভূতির প্রকাশের সহজ মাধ্যম হয়েছে মোবাইল । মোবাইল যেন মানুষের কণ্ঠস্বরের ব্যাপ্তিকে দূর-দূরান্তে অবস্থিত প্রিয়জনের কান পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। মোবাইলে ইন্টারনেটের সংযোজন এর যোগসূত্র স্থাপনের কার্যক্রম আরো প্রসারিত করেছে। মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার আমাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে আরো প্রসারিত করুক এই আশা আমাদের সকলের।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url