আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা

আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা

ভূমিকা ঃ মানুষের জীবন কতগুলো ছোট ছোট অভিজ্ঞতা নিয়ে গঠিত। কেউ কেউ মনে করেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার সমষ্টিই জীবন। জীবনের এই যে অভিজ্ঞতা বা ঘটনা এর সবগুলোই স্মরণীয় কিংবা মনে রাখার মতো নয়। এ জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত হৃদয়কে নাড়া দেয় । আমার এতটুকু জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেছে যা আমি জীবনেও ভুলতে পারব না ।

ঘটনা ঃ সে দিনটি ছিল ফাল্গুন মাসের এক পড়ন্ত বিকেল। সকালবেলা আমরা সবাই হাজির হয়েছি। সময়মতো ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্লাস শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন, এমন সময় নোটিস এলো, টিফিন প্রিয়ডের পর আর ক্লাস হবে না। বিকেল চারটায় মাঠে এক জাদুশিল্পী জাদু দেখাবেন। আমাদের সকলকে আসতে হবে এবং এক টাকা দিয়ে টিকেট কিনতে হবে। খুশিতে সবাই আত্মহারা হয়ে গেলাম। এর আগে কখনও জাদু দেখিনি বাড়িতে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে কোনো রকমে কিছু মুখে দিয়েই বাবার পকেট থেকে পাঁচ টাকা নিয়ে স্কুল মাঠে হাজির। অনেক লোকের সমাগম হয়েছিল মাঠে। সবার সামনে গিয়েই বসলাম আমরা কয়েক বন্ধু।

▶▶আরো পড়ুন ঃ চিড়িয়াখানায় একদিন রচনা

একটু পরেই জাদুকর তার ছোট সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চাকে নিয়ে হাজির। বাচ্চাকে দেখে তখন মনে হচ্ছিল, এত সুন্দর একটা ছেলে পড়ালেখা না করে তার বাবার সঙ্গে কেন জাদু দেখিয়ে বেড়ায়? গরিব পিতার পড়ালেখার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য নেই বলেই এক মুঠো খাবারের আশায় এখানে- সেখানে জাদু দেখিয়ে দু পয়সা রোজগার করে । এটাই হলো তার সংসার চালানোর একমাত্র পথ। জাদুকর অদ্ভুত চেহারার মানুষ। লম্বা দাড়ি, ঢিলেঢালা কালো পোশাক, মাথায় পাগড়ি, আর হাতে তার জাদুর বাঁশি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো জাদুকরের জাদু দেখানো। অদ্ভুত রকমের অনেকগুলো জাদু দেখালেন তিনি। সবাই তার জাদু দেখে অবাক হয়ে গেলাম। 

তিনি বললেন, ‘এবার শেষ জাদু দেখাব।' সেটা হলো তার ফুটফুটে সেই সুন্দর ছেলের বুকে একটা ধারালো তরবারি ঢুকিয়ে তাকে মেরে ফেলবে এবং কিছুক্ষণ পরে তাকে আবার জাদুমন্ত্র দিয়ে বাঁচিয়ে তুলবে। সত্যি ভীষণ ভয় হচ্ছিল তখন। মনে হচ্ছিল, জাদুকর যদি তাকে বাঁচাতে না পারে? অনেকবার এ প্রশ্ন আমার মনের মাঝে জেগেছিল। জাদুকর সবার কাছে তার ছেলের জন্য দোয়া চেয়ে ধারালো তরবারি বের করে ছেলের বুকে চালিয়ে দিল, আমি চোখ বন্ধ করলাম। কিন্তু সেই ছেলে হৃদয়বিদারক বাবা বাবা চিৎকার আমাদের কাঁদিয়ে তুলল। চোখ মেলে দেখি রক্তে চারদিক ভেসে যাচ্ছে। সে মাটিতে পড়ে বলতে লাগল, আমাকে বাঁচাও বাবা, আমাকে বাঁচাও! জাদুকর তখনই বুঝতে পেরেছে এটা জাদু নয়, সত্যি তার বুকে তরবারিটা চালিয়েছে। জাদুকর পাগলের মতো ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল । 

আমরা সবাই তাকে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করলেন। চারদিকে শোকের ছায়া নেমে এলো। জাদুকর হয়তো সেদিন থকে সত্যি পাগলই হয়েছিল। আমরা সবাই মিলে তার মৃতদেহ জাদুকরসহ তাদের সেই নির্ভূত গ্রামে নিয়ে কবর দিয়েছিলাম। পরদিন সকালে আমরা সবাই স্কুলে এসে সেই রক্তাক্ত স্থানটিতে একটা ছোট্ট কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়েছিলাম। আজ সেই কৃষ্ণচূড়া অনেক বড় হয়েছে। যখন ফুলে ফুলে কৃষ্ণচূড়া গাছটা ভরে ওঠে তখন তাকে রক্তের মতো লাল দেখায় । মনে হয়, এ যেন তারই রক্তে রঞ্জিত। স্মৃতিপটে ভেসে এলো সেই ফুটফুটে ফুলের মতো ছেলেটির মুখ । কোনোদিনও হয়তো ভুলতে পারব না এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি।

▶▶আরো পড়ুন ঃ নৌকা ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা রচনা

উপসংহার ঃ মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখের অনেক ঘটনাই ঘটে। কিন্তু এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা খুব কমই ঘটে। আমার জীবনটি ছোট। এ জীবনে ঘটনা খুব কম। তবে এ করুণ স্মৃতি আমি কোনোদিনও আমার হৃদয় হতে মুছতে পারব না।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url