দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
সূচনা ঃ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ বিশ্বের মানচিত্রে সার্বভৌম বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে। তার মূলে কাজ করেছে জাগ্রত ছাত্রসমাজের গৌরবদীপ্ত সংগ্রাম। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যুদ্ধ করেছে। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। তেমনি সৈনিকদের ভূমিকা নিয়ে ছাত্রসমাজকে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ছাত্রসমাজই দেশের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশ গঠনের সুকঠিন পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারে ।
ছাত্রসমাজের আত্মত্যাগ ঃ দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিক হিসেবে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে আত্মত্যাগের সুমহান দায়িত্ব নিয়ে প্রবল কর্মোদ্যমে কাজ করতে হবে। দেশের নর-নারীর নৈতিকতার উন্নতি বিধান, যাবতীয় কুসংস্কার, কু- আইন, অত্যাচার, অবিচার প্রভৃতি নির্মূল করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে ছাত্রসমাজকে। সকল প্রকার দুর্নীতি দমনের বজ্র কঠিন শপথ তাদেরকেই নিতে হবে। আর্তের সেবা, দারিদ্র্যদূরীকরণ এবং নিরক্ষরতার অভিশাপ মুক্তিতে ছাত্রসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করার সংগ্রামেও ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
আরো পড়ুন ঃ একটি কলমের আত্মকথা রচনা
জনসেবামূলক কাজ ঃ জনসেবামূলক কাজের ভেতর দিয়ে ছাত্রসমাজ দেশ গঠনে অংশ নিতে পারে। তাদের দাঁড়াতে হবে দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের পাশে—সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে অনাহারক্লিষ্ট এবং বৃদ্ধদের মাঝে। ক্ষুধিতের মুখে তারা তুলে দিতে পারে অন্ন, অসহায় রোগীকে দিতে পারে সেবা, মৃতপ্রায়কে নিতে পারে হাসপাতালে, পরিত্যক্ত শিশুকে পৌঁছে দিতে পারে শিশু সদনে, গৃহহারাকে দিতে পারে গৃহ । তাই বলা যায় ছাত্ররাই দুর্বলের বল, অসহায়ের সহায় এবং রোগীর সেবক। দেশ গঠনে জনসেবার বিকল্প নেই ।
পল্লি উন্নয়ন ঃ পল্লিই বাংলাদেশের প্রাণ। তাই পল্লি উন্নয়ন দেশেরই উন্নয়ন। পল্লি উন্নয়নে ছাত্রসমাজ এগিয়ে আসতে পারে। গ্রামের আর্থ- সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কৃষি উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল সম্পর্কে নানা উপদেশ দিয়ে ছাত্রসমাজ প্রভূত সাহায্য করতে পারে। অবসর সময়ে ছাত্রসমাজ গ্রামে গিয়ে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, খাল-পুকুর খনন ইত্যাদি স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ করতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগ থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করতে পারে। ছোটখাটো রোগের হাত থেকে রক্ষা এবং রোগের প্রতিকার সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সচেতন করে তুলতে পারে। পল্লি উন্নয়ন মানেই জাতির উন্নয়ন ।
নিরক্ষরতা দূরীকরণ ঃ নিরক্ষরতা আমাদের জাতীয় জীবনে বিরাট অভিশাপ। দেশের প্রায় অর্ধেক লোক নিরক্ষর। নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান দান করার ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। অজ্ঞানতার অন্ধকারে থাকা লোকদের শিক্ষিত করে তোলোর অভিযানে ছাত্রসমাজ অংশ নিতে পারে । নিরক্ষরতা দূর হলে মানুষ শিক্ষার আলো পাবে। সাধারণ মানুষ আধুনিক চেতনার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে এবং জ্ঞান- বিজ্ঞানে শিক্ষা ও প্রযুক্তিকে প্রয়োগ করতে পারবে। সাধারণ মানুষকে এই বোধে উদ্দীপিত করার দায়িত্ব ছাত্রসমাজের।
জনমত গঠন ঃ দেশ ও জাতির উন্নয়নে নানা কর্মকাণ্ডে জনমত গঠনে ছাত্রসমাজ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সভা-সমিতি ও নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজ দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে। জনগণের মধ্যে প্রীতি ও ঐক্য স্থাপন করে জাতিগঠনের কাজে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে জাতির মানস গঠনে সাহায্য করতে পারে। বিদেশি দ্রব্য বর্জন এবং স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহার সম্পর্কে জনমত গঠনের প্রচারাভিযানে ছাত্রসমাজ অংশ নিতে পারে। বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জনমত গঠন করতে পারে ছাত্রসমাজ।
আরো পড়ুন ঃ একটি সড়কের আত্মকাহিনি রচনা
উপসংহার ঃ দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অনেক। এ কাজে এগিয়ে এসে তারা মহত্তর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। বিপথগামিতা এবং ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ থেকে মুক্ত থেকে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এতে দেশের প্রগতি আসবে—সমৃদ্ধির সূচনা হবে। তাদের কর্মপ্রেরণার দ্বারাই নির্মিত হবে দেশের প্রগতির ধারা ।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url