কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব রচনা
ভূমিকা ঃ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি হচ্ছে প্রধান ও বৃহত্তম খাত। কৃষি কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে দেশজ অর্থনীতি। তাই কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমেই এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। আর কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন কৃষিতে উচ্চতর ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি । দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য প্রয়োজন কৃষিশিক্ষা ।
বাংলাদেশের কৃষির গুরুত্ব ঃ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। আর গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন কৃষিখাতের উপরই নির্ভরশীল। খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন, শিল্পায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশজ অর্থনীতির ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে কৃষি। বাংলাদেশের কৃষি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঃ
আরো পড়ুন ঃ
- ১. কর্মসংস্থানঃ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০% লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। এদের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস কৃষি ।
- ২. মৌলিক চাহিদা পূরণঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা-মানুষের এসব মৌলিক চাহিদা পূরণে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের খাদ্য-চাহিদা সম্পূর্ণরূপে কৃষির উপর নির্ভরশীল। বস্ত্র তৈরির প্রধান উপকরণও আসে কৃষি থাকে। যেমন পাট, তুলা, রেশম ইত্যাদি। বাসস্থান তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, বেত, কাঠ, ছন, খড় ইত্যাদিও কৃষি হতেই আসে। শিক্ষার উপকরণ কাগজ, পেন্সিল ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয় কৃষি উৎপাদিত বাঁশ, আখের ছোবড়া ইত্যাদি। এ ছাড়াও আসবাব তৈরি কিংবা জ্বালানি খাতে কৃষি-উৎপাদনের ভূ মিকা অপরিসীম।
- ৩. শিল্প ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে কৃষিঃ শিল্প ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণে কৃষির ভূমিকা অতুলনীয়। বাংলাদেশের প্রধান শিল্পখাত পাট শিল্প, চা শিল্প, বস্ত্র শিল্প, কাগজ শিল্প, চিনি শিল্প ইত্যাদিতে কাঁচামালের প্রধান উৎস হচ্ছে কৃষি। কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য বেশি উৎপাদিত হলে শিল্পের ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণও ঘটে। আবার কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৬০ ভাগই কৃষিজাত শিল্পপণ্যের মাধ্যমে আসে। সুতরাং, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে হলে কৃষির উন্নয়ন সাধনের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের কৃষি সমস্যা ঃ বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা বর্তমানে বহু সমস্যায় জর্জরিত। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন। যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এদেশের কৃষিতে বিরাজমান সমস্যাগুলো হলো ঃ
- ১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ
- ২. কৃষকের দারিদ্র্য
- ৩. প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতা
- ৪. সরকারি সাহায্য সহযোগিতার অভাব
- ৫. উন্নত প্রযুক্তির অভাব
- ৬. জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জমির স্বল্পতা
- ৭. কৃষিকাজে দক্ষতার অভাব
- ৮. রোগ ও পোকার আক্রমণ
- ৯. শস্য গুদামজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাব
আরো পড়ুন ঃ
বাংলাদেশে কৃষকেরা এখনও সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে বিধায় কৃষিব্যবস্থা সমস্যায় জর্জরিত। এর প্রধান কারণ কৃষকের শিক্ষার অভাব'। কৃষিখাতের সমস্যা মোকাবেলায় প্রয়োজন আধুনিক কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ কৃষক ও কৃষি শ্রমিক ।
কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব ঃ বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিখাতের উৎপাদন বৃদ্ধিই এদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পূর্বশর্ত। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি না পেলে বাংলার কৃষক দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারবে না। যেসব কারণে কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ঃ
- ১. আধুনিক বৈজ্ঞানিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন।
- 2.ফসলের রোগব্যাধি সনাক্তকরণ ও পোকার দমন কৌশল জানা ।
- ৩.কৃষিজমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা ।
- ৪.কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা।
- ৫.মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির কৌশল জানা।
- ৬.ফসলের নতুন নতুন জাতের ব্যবহার কৌশল জানা ।
- ৭.মাটির স্বাস্থ্যরক্ষা ও মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল জানা ৷
- ৮.চাষের উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত বীজ নির্বাচন, খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা ।
- ৯.পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল, বনজ সম্পদ, মাছ, পশু-পাখির উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
- ১০. রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার জানা।
- ১১. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
- ১২. কৃষিপণ্য বিক্রির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করা।
কৃষিশিক্ষা ও কৃষিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঃ বিজ্ঞানের যে শাখায় কৃষির উৎপাদন প্রযুক্তিসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্যাবলি জানা যায় তাকে কৃষিশিক্ষা বলে। কৃষিশিক্ষার মাধ্যমে কৃষিকাজে দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন ও কার্যদক্ষতাও বাড়ানো যায় । বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি কৃষিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। যেমন : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।
আরো পড়ুন ঃ
এ ছাড়াও বাংলাদেশে সরকারিভাবে ১২টি এবং বেসরকারিভাবে ২৬টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলো দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা । তাছাড়া কৃষিশিক্ষাকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করতে হলে মৌলিক ও ফলিত গবেষণার গুরুত্ব অনেক। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ।
উপসংহার ঃকৃষি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। তাই কৃষিক্ষেত্রে বিরাজমান সকল সমস্যা সমাধান করার মধ্য দিয়ে অবিলম্বেই উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষিতে আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার এ উপলক্ষে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছেন। জাতীয় অর্থনীতির উন্নতিকল্পে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে কৃষিশিক্ষা সম্প্রসারণে সচেষ্ট হতে হবে। কেননা কৃষিশিক্ষার প্রসার তথা কৃষির সাথে সম্পর্কযুক্ত, আনুষঙ্গিক বিষয়ে শিক্ষাদান, গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের কৃষিখাতের ঈপ্সিত উন্নয়ন সম্ভব।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url