হরতালের একটি দিন রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
হরতালের একটি দিন
সকালবেলা একটা অনিশ্চয়তার অনুভূতি নিয়ে ঘুম ভাঙল। বাবা-মার মুখও গম্ভীর। আজ আমার একটা সাপ্তাহিক পরীক্ষা হবার কথা। কিন্তু গতকাল রাতে টিভির খবরে দেখিয়েছে বিরোধী দল আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। সেটা শোনার পর থেকে পড়ায় একফোঁটাও মন বসেনি। এখন মনে হচ্ছে যদি বিরোধী দল হরতাল তুলে নেয় তাহলে তো পরীক্ষা ঠিকই হবে। বাবাও বুঝতে পারছেন না হরতাল হচ্ছে কি হচ্ছে না। আমাকে বাইরে গিয়ে একবার দেখে আসতে বললেন - রাস্তায় যানবাহন চলছে কি না ।
আমি বাইরে বেরিয়ে দেখলাম রিকশা চলছে তবে কোনো প্রাইভেট কার বা ভারী যানবাহন চোখে পড়ল না। বাবাকে খবরটা জানালাম । এমন সময় পত্রিকাও এসে পড়ল। প্রথম পাতায় বড় বড় হরফে লেখা ‘আজ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।' আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম - স্কুলে যেতে হবে না। কিন্তু বাবা বললেন, তাঁকে অফিসে যেতেই হবে। সরকার নাকি হরতালের দিনও অফিস-আদালত খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বাবা দ্রুত তৈরি হয়ে নিলেন। বাবা কোথায় কোথায় যেন ফোন করলেন। তারপর মাকে বললেন, গাড়ি বের করা যাবে না। আজ অনেক. দল মিলে হরতাল ডেকেছে। শ্রমিকরাও সমর্থন জানিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় মিছিল হচ্ছে।
আরো পড়ুন ঃ আমার শৈশব স্মৃতি রচনা
দু-একটা ভাঙচুর হচ্ছে। রিকশাও নাকি খুব একটা নিরাপদ নয়। পিকেটাররা রিকশার চাকার বাতাস ছেড়ে দিচ্ছে। যাত্রীদের বাধা দিচ্ছে। বাবাকে তবু অফিস যেতেই হবে। তাই বাবা রিকশা নিয়ে ভয়ে ভয়ে চলে গেলেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মায়ের মুখে চিন্তার ছাপ। অবশ্যই আধ ঘণ্টা পরে বাবা ফোন করে জানালেন, তিনি অফিসে নিরাপদে পৌঁছেছেন। কোনো ঝামেলা হয়নি। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম সারাদিন বাসায় বসেই কাটালাম। বাইরে গণ্ডগোল হতে পারে ভেবে মা বাইরে খেলতে যেতে দিলেন না। দুপুরের টিভি সংবাদে জানা গেল, সারা দেশের অনেক জায়গায় হরতাল সমর্থক- পুলিশের মধ্যে ছোটখাটো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
গাজীপুরে পুরোদস্তুর হামলা ও পাল্টা হামলা হয়েছে। এতে কয়েকজন পথচারীসহ দুদলের আহত হয়েছে অনেক। গাজীপুরে আমার বড় মামা ও মামাতো ভাইবোনেরা থাকে। মা একটু চিন্তিত হয়ে পড়লেন, আমাকে বড় মামার বাসায় ফোন করে খবর নিতে বললেন। ফোন করে জানতে পারলাম, সেখানে সবাই ভালো আছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে সারা শহর থমথমে। মানুষজন ঘর ছেড়ে বাইরে বের হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর বাবার ফোন এলো। বাবা জানালেন, অফিস খোলা থাকলেও তেমন কাজ হচ্ছে না। সবাই অলস সময় কাটাচ্ছে। আর হরতাল নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। কাজই যদি না হয় তবে অফিসে না গেলে কী হতো! আমার সাথে অনেক গল্প করতে পারতেন। দুপুর কাটল কম্পিউটার গেমস্ খেলে। বিকেলে বাবা ঘরে ফিরে এলেন।
টেনশন আর ক্লান্তিকর একঘেয়েমিতে ভরা একটা দিন কাটায় সবার মন-মেজাজই একটু খারাপ । মা তাই বিকেলে অনেক ধরনের মজার মজার খাবার রান্না করলেন। কিন্তু তারপরও আড্ডাটা জমল না। বড়রা বার বার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, হরতাল ইত্যাদি নিয়ে কথা বলছেন। আমি মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনার এবং বোঝার চেষ্টা করলাম। আমি আলোচনার সব কথা বুঝতে পারছিলাম না। বাবাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি আগ্রহভরে সেগুলো সহজ করে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন। সেইসঙ্গে বললেন, আমি এখন বড় হয়েছি এবং এখন থেকে আমাকেও নিজের দেশ সম্পর্কে এবং দেশের বিরাজমান অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
আরো পড়ুন ঃ আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা রচনা
সন্ধ্যায় জোর করে পড়তে বসলাম। পড়ার চাপ ছিল না। তাই একটুও মন বসছিল না। শেষে গল্পের বই নিয়ে বসলাম। রাতের টিভির খবরের সময় বাবা আমাকেও খবর শুনতে ডাকলেন। খবরে সারা দিনের হরতাল পরিস্থিতি দেখে আমি হতবাক হয়ে পড়লাম। দেশের এরকম অবস্থা! পুলিশ মানুষকে লাঠিচার্জ করছে, হরতাল সমর্থকরা গাড়ি ভাঙচুর করছে, পিকেটিং করছে। আবার হরতাল বিরোধীরা তাদের সাথে মারামারিও করছে। অনেক মানুষ আহত হয়েছে। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অবস্থা। বাড়িতে বসে বাইরের এই পরিস্থিতি আমি কিছুই টের পাইনি। এখন আমি বুঝলাম, মা কেন বাবার অফিস যাওয়া নিয়ে এতো টেনশন করছিলেন এবং আমাকে কেন বাইরে খেলতে যেতে দেননি।
কিন্তু যে জিনিসটা আমি কিছুতেই বুঝলাম না, তা হলো, কেনইবা একদল হরতাল ডাকছে আর কেনই বা পুলিশ ও সরকারি দল তাদের ওপর হামলা করছে ? এতে তার লাভ হচ্ছে ? হরতাল সমর্থকদের না হরতাল বিরোধীদের? রাতে বিছানায় শুয়ে এই বিষয়টি নিয়ে আমি অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম। বার বার চোখে ভেসে উঠল টেলিভিশনে দেখা দুপক্ষের মারামারি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার দৃশ্য। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, জানি না ।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url