বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু বা কাবাডি

ভূমিকা ঃ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার মধ্যে সবচেয়ে সমাদৃত খেলা হচ্ছে হাডুডু বা কাবাডি। ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও লোকায়ত ঐতিহ্য এই খেলাকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলার মর্যাদা দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে ক্রিকেট ও ফুটবলের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার মধ্যে হাডুডু এখনো নিজের মর্যাদা ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে ।

প্রচলন ও উপলক্ষ ঃ হাডুডুর উৎপত্তিস্থল ফরিদপুর জেলায়। তবে কেউ কেউ এর উৎপত্তিস্থল বরিশাল বলে মনে করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই খেলা বিভিন্ন আঞ্চলিক নামে অভিহিত হয়ে থাকে। যেমন- হা-ডু-ডু, কাপাডি, ছি খেলা ইত্যাদি। গ্রামবাংলার সর্বত্র লৌকিক খেলা হিসেবে হাডুডু খেলার প্রচলন দেখা যায়। বছরের যেকোনো সময়ে যেকোনো জায়গায় এ খেলা অনুষ্ঠিত হতে পারে। সাধারণত বিভিন্ন দিবস পালন এবং মেলা ও উৎসবের অনুষ্ঠানে আমোদ-প্রমোদের অংশ হিসেবে হাডুডু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন ঃ

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাডুডু ঃ হাডুডু ক্রমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭৪ সালে বাংলদেশে জাতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। তখন থেকেই জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর “শহিদ স্মৃতি কাবাডি প্রতিযোগিতা' নামে পৃথক একটি প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, মায়ানমার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে হাডুডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া জাপান, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানে এই খেলা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হাডুডুর বৈশিষ্ট্য ঃ হাডুডুর প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি জনপ্রিয় খেলা। দুটো দলের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক খেলার মধ্য দিয়ে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ খেলার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। কোর্ট তৈরির জন্য মাত্র ১২.৫ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার চওড়া জায়গার দরকার হয়। মাঝখান বরাবর মধ্যরেখা টেনে কোর্টকে সমান দু ভাগে ভাগ করা হয়। এই খেলার জন্য বাড়তি কোনো উপকরণও প্রয়োজন হয় না। উভয় দলে ৭ জন করে মূল খেলোয়াড় এবং ৫ জন করে রিজার্ভ খেলোয়াড় থাকে। এই খেলার নিয়ম-কানুন বেশ সহজ। আয়োজন সহজ বলে এ খেলায় তেমনা খরচ হয় না। অথচ দর্শক ও খেলোয়াড়রা এ খেলা থেকে নির্মল আনন্দ লাভ করে ।

হাডুডু খেলার নিয়ম ঃ খেলা শুরু হওয়ার আগে দুই পক্ষ নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কোর্টের দুই ভাগে মুখোমুখি দাঁড়ায়। খেলা শুরু হওয়া সঙ্গে সঙ্গে এক পক্ষে কোনো একজন খেলোয়াড় মাঝরেখা থেকে দম বন্ধ করে শ্রুতিগ্রাহ্য ছড়া বা বোল আওড়াতে আওড়াতে প্রতিপক্ষে কোর্টে ঢুকে পড়ে। সে দম থাকতে যে কজন খেলোয়াড়কে ছুঁয়ে নিরাপদে নিজের কোর্টে ফিরে আসতে পারবে, বিপক্ষে সে কজন খেলোয়াড় ‘মরা’ বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু সে যদি প্রতিপক্ষের হাতে আটকা পড়ে এবং তার দম ফুরিয়ে যায়, তবে সে নিজেই ‘মরা’ বিবেচিত হয়।

আরো পড়ুন ঃ

‘মরা’ বিবেচিত খেলোয়াড়কে কোর্টের বাইরে চলে যেতে হয়। এভাবে একের পর এক খেলোয়াড় পালাক্রমে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ‘মরা' করার চেষ্টায় থাকে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে মরা করে আবার নিজের দলের খেলোয়াড়কে জেতানো যায়। এ প্রক্রিয়ায় কোনো সম্পূর্ণ জয়-পরাজয় নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলতে থাকে। আজকাল আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কাবাডি খেলায় ৮০ কেজির বেশি ওজনের খেলোয়াড়দের খেলতে দেওয়া হয় না। খেলার সময়ও নির্ধারিত ৪০ মিনিট। ৫ মিনিট বিরতিসহ দুই ভাগে ২০ মিনিট করে খেলা চলে ।

মোট ৭ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি খেলা পরিচালনা ও বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে রেফারি এক জন, আম্পায়ার দুজন, একজন স্কোরার ও দু জন সহকারী স্কোরার। খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় পয়েন্টের ভিত্তিতে।

হাডুডু বা কাবাডির উপযোগিতা ঃ হাডুডুর একটি ব্যয়হীন আনন্দজনক খেলা। যেকোনো সময়, যেকোনো ঋতুতে এবং যেকোনো জায়গায় এ খেলার আয়োজন করা চলে। নানারকম ব্যঙ্গাত্মক বোল আওড়ানোর কারণে দর্শকদের কাছে এ খেলা আরো উপভোগ্য হয়ে ওঠে। শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যরক্ষায় এই খেলার উপযোগিতা রয়েছে। এ খেলা ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ খেলার খেলোয়াড়রা ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা ও বিপক্ষ দলের যৌথ আক্রমণ মোকাবেলার ক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষমতা ও উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ ও প্রদর্শনের সুযোগ পায়। তবে আকস্মিক দুর্ঘটনায় কখনো খেলোয়াড়রা আহত হতে পারেন ।

উপসংহার ঃ হাডুডু ক্ষিপ্রতা, শক্তি, সাহস, দম ও কৌশলের খেলা। এ খেলা এককালে বাংলাদেশের লোকসমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ফুটবল-ক্রিকেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই খেলা যে প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তা আমাদের জন্য গৌরবের ও আনন্দের। নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খেলা বলে এই খেলার চর্চা যেমন বাড়ানো দরকার তেমনই এই খেলায় দক্ষতা অর্জনের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত এই খেলার আয়োজন করা হলে এই খেলার অঙ্গনে তুখোড় ক্রীড়াবিদের জন্ম হবে।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url