একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
একটি নদীর আত্মকাহিনি
আমি বাংলাদেশের নদী ঃ আমি জাহ্নবী-ভাগীরথী নই, হিমালয়ের তুষার-স্রোতেও আমার জন্ম নয়। আমি গঙ্গা নই, যমুনা নই, সরস্বতীও নই। কোনো পুণ্যতোয়া নদী আমি নই। আমি বাংলাদেশের একটি সামান্য নদী। আমি বাংলাদেশের ঘরের মেয়ে আমি তোমাদের ইছামতী । মধ্যবঙ্গের বর্ষার শত ক্ষীণধারাকে সংহত করে আমি নিম্নবঙ্গের দিকে চলেছি।
সুন্দরবনের কোলে গিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেছি আমি তাঁদের কন্যাস্থানীয়া ইছামতী। তাই হিমালয় আমাকে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে। আমি সমুদ্র-সোহাগিনী গঙ্গা নই, ব্রহ্মপুত্র নই - চিনতেও পারবে না ।আমাকে চেনে আকাশ, আমাকে চেনে মাটি, আমাকে চেনে শ্যামল বাংলার লতাপাতা বন-উপবন, আমার দুই তীরের পশুপাখি, ছোট ছোট সংসারের সাধারণ মানুষ। আমি তাদের পুজো কুড়োতে আসিনি আমি দেবী নই - আমি তাদের সুখে-দুঃখে সঙ্গিনী, তাদের আনন্দ-বেদনার সহধর্মিণী। তাই হয়তো তাদের মুখে আমার নাম ফুটেছে – ইছামতী।
▶▶ আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ রচনা
আমার সাধারণ রূপ ঃ দুই পারের বাঁধন এক-আধবার ভেঙে চুরে আমার প্রতিবেশীদের এক-আধটুকু যে আমি চমকে তুলি না, এমন নয় । শান্ত হলেও অন্ত লক্ষ্মী মেয়ে তো নই! বিশেষ করে এমনভাবে এখন আমার চারপাশে বাধা জমে উঠেছে যে ঠিকমতো নিজের খাতে বয়ে চলার সাধ্য সব সময় থাকে না। মজা খাতের খোলস ছেড়ে এক-আধবার তাই খাত বদলে নতুন খাতে পথ করে নিই। কিন্তু তাতেও আকস্মিক কোনো সর্বনাশ ঘটে না।
এ যেন খেলাঘরের এক-আধটুকু ছলনা। তারপরে আবার সেই চিরদিনের ইছামতী। শান্ত স্রোত, কাকচক্ষু নির্মল ধারা, ঢেউয়ের নাম নেই। যেন পাটি বিছানো কোনো নির্মল জলশয্যা যেখানে মেঘ ও রোদ জালি কাটে, চন্দ্র-সূর্য ঝিকিমিকি আলো ছড়ায়, আর দক্ষিণা বাতাস সারা দেহে শিহরণ তুলে ছুটে পালায় ।
আমার দুই তীরের দৃশ্য ঃ দুই পাড়ে কোথাও কোথায় ছোট ছোট ঝোপঝাড়, কোথাও ঘাসে ভরা মাঠ। গরু চরছে। রাখাল ছেলে ঘাসের ওপর বুক দিয়ে শুয়ে দাঁতে ঘাস কুটিকুটি করছে। দু চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কখনো সে গান গাইছে, বাঁশি বাজাচ্ছে। কোথাও চলেছি গ্রামের মাঝখান দিয়ে। জল নিতে গ্রামের বধূরা আসছে। ঘাটে দাঁড়িয়ে গল্প করছে কেউ কেউ। গল্প করছে নিজেদের সুখ- দুঃখের কথা। কারো ঘরে অভাব। কারো তার মধ্যেই উৎসব।
হয়তো মেয়ে-জামাই এসেছে, কিংবা বংশে আসছে নতুন অতিথি। কেউ স্নান করছে। কেউ কাপড় কাচছে। অদূরের ঘাটে দুপুরের শেষে গরু-মোষ সুদ্ধ পানিতে নেমে পড়েছে। সে ভাবছে নুন-ভাতের কথা। কতকাল ধরে আমি এই কৃষকদের দেখে আসছি। কত লোক এলো, কত লোক গেল; কৃষকের ভাগ্য ঠিক তেমনটিই রয়ে গেল । দু পাড়ে ভদ্রলোকের গ্রামও দেখি। কেউ শহরে ছুটছে; সপ্তাহ শেষে ফিরবে। কেউ গ্রামে আছে অলস ও অকর্মণ্য হয়ে। কেউ হাঁক-ডাক করে গ্রামকে তিক্ত-বিষাক্ত করে গর্বিত।
▶▶ আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের কৃষক রচনা
ছোট নৌকা চলছে – কোনোটা ব্যবসায়ী নৌকা, কোনোটা গোলাদারি মালের নৌকা, কোনোটা পালের নৌকা, কোনোটা জেলেদের ছিপ। এক গঞ্জ থেকে অন্য গঞ্জে মাল নিয়ে, এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে যাত্রী নিয়ে নৌকা চলেছে আমার বুকে। মাঝি দাঁড় টানে। চাষি চাষ করে। কুমোরের চাকে কাদামাটির হাঁড়িও পাত্র হয়ে ওঠে। কামার লোহা পিটিয়ে লাঙলের ফাল বানায়। কাঁসারির হাতে গড়ে ওঠে থালাবাটি – এই যে চিরন্তন জীবনধারার আয়োজন, এর মতো সত্য আর কী? রাজার রাজ্য ভেঙে যায়। কিন্তু আমি দেখেছি মানুষের সভ্যতার বাহকদের
'ওরা কাজ করে।' এই শ্রমজীবী মানুষরাই সৃষ্টি করে চলেছে ইতিহাস। তারাই ইতিহাসের বাহক। আমি দেখতে দেখতে চলি ভবিষ্যতের সাগর-সীমানায়। মানব মহাসমুদ্রের পথে এই জীবনতরঙ্গই সত্য ।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
সবগুলো অনুচ্ছেদ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url