কর্তব্যনিষ্ঠা রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
কর্তব্যনিষ্ঠা
ভূমিকা ঃ মানবজীবনে সাফল্য অর্জনের পেছনে যেসব গুণ অপরিহার্য, সেগুলোর একটি হলো কর্তব্যনিষ্ঠা। প্রত্যেক মানুষকেই নিজ নিজ ভূ মিকা রাখতে হয় । সম্পাদন করতে হয় আপন আপন করণীয়। এক্ষেত্রে দরকার আন্তরিক নিষ্ঠা। তা না হলে সেসব কাজ সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক হয় না এবং তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ থেকে এটা স্পষ্ট যে, সমাজের অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে কর্তব্যনিষ্ঠার গুরুত্ব যথেষ্ট
কর্তব্যনিষ্ঠার মর্মবস্তু ঃ করণীয় বা পালনীয় দায়িত্ব সম্পাদনের আগ্রহ ও সচেষ্ট প্রয়াসই হচ্ছে কর্তব্যনিষ্ঠা। কোনো কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে হলে প্রথমে দরকার কাজে আগ্রহ। তার পরেই আসে নিজের যথাসাধ্য শ্রম দিয়ে দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা সম্পাদনের আন্তরিক প্রচেষ্টা। কর্তব্যনিষ্ঠা ছাড়া জীবনে ও কর্মে সফলতা আশা করা যায় না। অন্যদিকে, জাতীয় অগ্রগতি সামাজিক প্রগতি অর্জনের জন্যও সমাজে চাই কর্তব্য নিষ্ঠা মানুষ ।
আরো পড়ুন ঃ মা বাবার প্রতি কর্তব্য রচনা
কর্তব্যনিষ্ঠা মানুষের মহৎ মানবিক গুণগুলোর একটি। কর্তব্যনিষ্ঠা ছাড়া জীবনে সাফল্যের কথা ভাবা যায় না। কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে কাজের
প্রতি অদম্য আগ্রহের রয়েছে গভীর যোগ। সেদিক থেকে বলা যায়, কর্মব্রত কর্তব্যনিষ্ঠার সহায় আর কর্মবিমুখতা কর্তব্যনিষ্ঠার অন্তরায়।
কর্তব্যের প্রকৃতি ঃ মানুষের কর্মময় জীবন বহুমুখী দায়িত্বের সমাহার। পারিবারিক দায়িত্ব, পেশাগত দায়িত্ব, সামাজিক দায়িত্ব ইত্যাদি পালন করতে হয় তাকে। মানুষ তার কর্মক্ষমতা বা দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী এসব দায়িত্ব পালন করে। পারিবারিক জীবনে পরিবার পরিচালনায় সহায়তা করা মৌলিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আবার, সমাজের সদস্য হিসেবে সমাজ হিতৈষণামূলক নানা কাজও তাকে সম্পাদন করতে হয়। কর্তব্যনিষ্ঠা ছাড়া এসব দায়িত্ব সুচারুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না।
কর্তব্যনিষ্ঠার গুরুত্ব ঃ দায়িত্ব পালনের সঙ্গে কর্তব্যনিষ্ঠার রয়েছে সুগভীর যোগ। দায়িত্ব পালনের শিথিলতা থেকে গেলে, করণীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত না হলে সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী যদি দায়িত্বে অবহেলা কিংবা শৈথিল্য দেখান, তবে গোটা সমাজের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে। এর ফলে সমাজে শান্তি- ত-শৃঙ্খলা ব্যাহত হতে পারে, অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে ।
দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত পরিবেশ ঃ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনের জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ। সে পরিবেশ হওয়া চাই উন্নত, উপযোগী এবং স্বাধীন। এতে করে মানুষের স্বাভাবিক যোগ্যতার প্রকাশ ঘটে, কাজের মান বৃদ্ধি পায়। কারো অধীনে দায়িত্ব পালনের সময় নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলা উচিত নয়। যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ রাতারাতি সম্পন্ন করা যায় না, সেগুলার জন্য চাই দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা। চাই একাগ্রতা ও সাধনা। প্রকৃতপক্ষে এমন নিষ্ঠাই সফলতার চাবিকাঠি ।
আরো পড়ুন ঃ
কর্তব্যনিষ্ঠার পুরস্কার ঃ সাফল্য অজর্নই কর্তব্যনিষ্ঠার প্রথম ও প্রধান পুরস্কার। এই সাফল্যই পরবর্তী কাজে উদ্দীপনা যোগায়। সত্যিকারের কর্তব্যনিষ্ঠা কর্মীর কাজ সম্পন্ন হয় দ্রুত। ত্রুটিও কম থাকে। এভাবে হওয়া যায় অন্যের আস্থাভাজন, পাওয়া যায় নতুন যায় নতুন দায়িত্ব। সততার সাথে কাজ করলে কাজের দক্ষতা বাড়ে, যোগ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়। যারা পৃথিবীতে অনেক বড় কাছের সূচনা করেছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠ। বর্তমানে সমৃদ্ধিময় বিশ্ব এঁদেরই সফল অবদান ।
উপসংহার ঃ বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মীর উপযুক্ত মূল্যায়ন হয়ে থাকে। যিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেন, তার কাজের উপযুক্ত মূল্যায়ন হলে তিনি উৎসাহিত হন। উৎসাহ কাজের গতি বাড়ায়, তাতে উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়, সমৃদ্ধিও নিশ্চিত হয়। ব্যক্তির কর্তব্যনিষ্ঠার সার্বিক প্রভাব পড়ে সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে। গড়ে ওঠে শান্তি ও সমৃদ্ধিময় সমাজ। সমাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয় ৷ একুশ শতকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বায়নের যুগে আমাদের অগ্রগতিও বহুলাংশে কর্তব্যনিষ্ঠার ওপর নির্ভরশীল।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url