আমার প্রিয় উৎসব দুর্গাপূজা রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

আমার প্রিয় উৎসব দুর্গাপূজা রচনা

দুর্গোৎসব রচনা

সূচনা ঃ বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ধর্মের দিক থেকে এটি দেবী দুর্গার বার্ষিক শারদীয়া পূজা। এ পূজা মূলত ধর্মীয় হলেও এখন তা পরিণত হয়েছে বাঙালি হিন্দুর বার্ষিক সামাজিক আনন্দ-উৎসবে। দুর্গাপূজা পরিণত হয়েছে দুর্গোৎসবের সামাজিক মহোৎসবে । প্রতিবছর দুর্গোৎসব হয় শরৎকালে ।

পটভূমি ও তাৎপর্য ঃ বাঙালি হিন্দুর কাছে দুর্গার একটি রূপ কন্যা। হিন্দু ধর্মে আছে, দেবী দুর্গাপূজার সময় কৈলাস থেকে বাপের বাড়ি যান। দুর্গাপূজার ছুটিতে বাঙালি হিন্দুঘরের বিবাহিত কন্যারাও বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এভাবে ধর্মের কাহিনির সঙ্গে জীবন- বাস্তবতার মেলবন্ধন রচিত হয়। দুর্গোৎসবের মূল বাণী মঙ্গল প্রতিষ্ঠার, অমঙ্গল নাশের। যে দুর্গার পূজা হয় তিনি অসুরবিনাশিনী, শক্তিদায়িণী, ভাগ্য-কৃষ্টি প্রদায়িণী। মানুষের মনের কালিমা ঘুচিয়ে তিনি আসেন আলোর নিশানা দেখাতে

আরো পড়ুন ঃ 

দুর্গাপূজার ইতিহাস ঃ অবিভক্ত বাংলায় দুর্গাপূজার প্রচলন করেন মোগল সম্রাট আকবরের চোপদার কংশ নারায়ণ। তিনি সম্রাটের দেয়ান হওয়ার পর প্রায় ৮-৯ লক্ষ টাকা খরচ করে মহাসমারোহে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। এরপর প্রায় তিন শ বছরের মধ্যে বাংলায় দুর্গাপূজা হিন্দুদের সর্বজনীন ও সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন বাংলার জমিদাররা।

উৎসবের বৈচিত্র্য ঃ এ উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় আশ্বিন মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে - দেবীর বোধনের মাধ্যমে। তারপর পূজা চলে নবমী পর্যন্ত। আশ্বিনে দুর্গোৎসব শুরু হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয় অন্তত মাসখানেক আগ থেকে। পাড়ায় পাড়ায় সর্বজনীন দুর্গাপূজার উদ্যোগ- আয়োজন চলতে থাকে। সেইসঙ্গে ঘরবাড়ি মেরামত করে সুন্দর করা, নতুন জামাকাপড় আসবাবপত্র কেনাকাটার কাজ শুরু হয় পূজর আগেই। দোকানে দোকানে সাজানো হয় নতুন নতুন ফ্যাশনের জামাকাপড় ও নানারকম পণ্য। মহালয়ার সকালে চণ্ডীপাঠ শুরু হলেই বোঝা যায় এসে গেছে পূজা।

দশমীর দিন পর্যন্ত পূজামণ্ডপগুলো সেজে থাকে আলোকমালায়। কোথাও কোথাও মেলা বসে। হরেক রকম দোকান বসে পসরা সাজিয়ে, বসে নানারকম খাবারের দোকান। শরতের নীল আকাশ, সাদা মেঘের বেলা, আর ঢাকের বাজনায় উৎসবের পরিবেশ হয়ে ওঠে অনুপম। দলে দলে মানুষ নতুন সাজপোশাকে ঘুরে বেড়ায় আলোময় সুসজ্জিত পূজামণ্ডপে। শত্রু-মিত্র সবাই উজ্জীবিত হয় সম্প্রীতি ও সম্মিলিত চেতনা। ঘরে ঘরে তারই আমেজ পাওয়া যায় মিষ্টান্ন বিতরণে, বিনিময়ে।

যাত্রা, নাচ, গান, মেলা উৎসবের পরিবেশকে করে তোলে আনন্দ-বিনোদনমুখী করে তোলে মনোরম। সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেয় এ উৎসবে। এ উৎসব উপলক্ষে গান, বেতার ও টিভিতে প্রচারিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ।

আরো পড়ুন ঃ

বিজয়া দশমীতে বাজে বিদায়ের করুণ সুর। বিষণ্ণতার মূর্ছনা জাগে সবার অন্তরে। সেদিন দেবীর বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয়া পূজার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পালা শেষ হয়। প্রিয় বিসর্জনের বেদনায় অনেকের চোখে জল নামে। বেদনার্ত মন দিয়ে ঘরে ঘরে চলে গুরুজন প্রণাম, কোলাকুলি ও প্রতিসম্ভাষণ বিনিময়। বিসর্জনের পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে চলে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় এবং সেই সঙ্গে প্রীতি মিলন, ভোজ ও আপ্যায়ন।

উপসংহার ঃ দুর্গাপূজায় হিসা-দ্বেষ ভুলে কোলাকুলি আর মিষ্টিমুখ করে গড়ে তোলে সম্প্রীতির বন্ধন। এ পূজা কেবল পূজা নয়, বাঙালি সম্প্রদায়ের সামাজিক মহামিলনের মহোৎসব।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Contact Us