বড়দিনের উৎসব রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

বড়দিনের উৎসব রচনা

বড়দিনের উৎসব রচনা

সূচনা ঃ সারা পৃথিবীর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে তাঁদের সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে বড়দিন। এ উৎসব খ্রিস্টমাস উৎসব নামে পরিচিত। বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিস্টান বসবাস করেন। অন্যান্য দেশের খ্রিস্টানদের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায় আমাদের দেশে নানা আনন্দ উৎসবের মধ্যে এ দিনটি পালন করে থাকেন। এ দিনটি আমাদের দেশে সরকারি ছুটির দিন।

ইতিহাস ঃ বড়দিন মহামানব যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। খ্রিস্টীয় ২০০ সাল থেকে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এই দিনে মহামানব যিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন জেরুজালেমের বেথলেহেমে। তার আবির্ভাব হয়েছিল পাপ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে, মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে। মানবত্রাতা মহান যীশু তাঁর কর্মব্রতে ভূমিকা নিয়েছিলেন মানুষের পরিত্রাতার। মানুষের হৃদয়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন অহিংসা, শান্তি ও প্রেমের বাণী ।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ বিশ্বায়ন/গ্লোবালাইজেশন রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

তাঁর মহান বাণী ছিলঃ পাপকে ঘৃণা করবে, পাপীকে নয়।' তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন, সত্য ও ন্যায়ের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করতে। সেকালের শাসকরা যীশুকে পছন্দ করেনি। তারা তাঁকে ক্রুশ কাঠে ঝুলিয়ে মেরেছে। কিন্তু যীশু তাঁর পরম শত্রুদের অভিশাপ না দিয়ে বরং মঙ্গল কামনা করেছিলেন। এই মহিমান্বিত পুরুষের জন্মদিন উপলক্ষে পালিত হয় বড়দিন।

উৎসবের বৈচিত্র্য ঃ একসময় বড়দিনের ছিল কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আনুষ্ঠানিকতা সীমিত ছিল গির্জার অনুষ্ঠানে। কেবল গুরুগম্ভীর প্রার্থনা ছিল তার অঙ্গ। কিন্তু কালে কালে তাতে যোগ হয়েছে নানা আনন্দের উপকরণ । তবে প্রার্থনা বাদ যায়নি। প্রার্থনা শুরু হয় ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বা খ্রিস্টমাস ঈভ থেকে। ২৫ ডিসেম্বর প্রার্থনা শুরু হয় সকালে গির্জায় গম্ভীর ঘণ্টাধ্বনি ও বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ

খ্রিস্টানরা গির্জায় সমবেত হয়ে সবরকমের পাপ থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা করেন। তারপর উৎসব চলে সারা দিন। এ উপলক্ষে গির্জাঘর সাজানো হয় নানাভাবে ফুল, লতাপাতা, রঙিন কাগজ ও আলোকমালায়। খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের ঘুরে ঘুরে দেখা যায় উৎসবের আনন্দ। সে আনন্দে যুক্ত হন অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও । বড়দিনের উৎসবের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য অনুষ্ঠান হচ্ছে শীতপ্রধান দেশের ঋতু-উৎসব। এই উৎসবে ‘সান্তা ক্লজ' বা শীত বুড়োর আগমন কল্পনা করা হয়।

▶▶ আরো পড়ুন ঃ চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

তৈরি হয় শীত বুড়োর মূর্তি। কেউবা শীত বুড়ো সেজে হাজির হন। বাড়ি বাড়ি ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য নানা উপহার নিয়ে আসেন তিনি। এই উপলক্ষে সাধারণত মোচাকৃতি পাইন বা ফার বৃক্ষ দিয়ে সাজানো হয় ক্রিসমাস বৃক্ষ। তাই ছোট ছোট বৈদ্যুতিক বাল্ব নানা উপহার দিয়ে সাজানো হয়। গাছের ওপরে দেবদূত ও তারার প্রতিকৃতি থাকে ।

বড়দিন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এদেশেও পালিত হয় জাঁকজমক ও মর্যাদার সঙ্গে। ঘর সাজানো হয় সুন্দরভাবে। কোথাও কোথাও রাতে করা হয় আলোকসজ্জা। সেদিন সবাই পরেন সুন্দর নতুন পোশাক। ঘরে ঘরে হয় ভোজের আয়োজন। খাবারের মধ্যে থাকে মাংস, পুডিং, ক্রিসমাস কেক, পিঠা, পায়েশ, পোলাও, বিরিয়ানি। ঘর সাজানো হয় আলোকতরু দিয়ে। চলে উপহার আর শুভেচ্ছা কার্ড বিতরণ । সেদিন শিশুদের কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সান্তা ক্লজের মাধ্যমে মোজায় কিংবা দেখতে মোজার মতো থালায় ভরা উপহার লাভ।

উপসংহার ঃ বড়দিনের উৎসব এদেশের জাতীয় উৎসবের অঙ্গ হয়েছে। এদিন কেবল সচ্ছল জীবনের আনন্দে সীমাবদ্ধ থাকে না; থাকে না কেবল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ দিনের উৎসবে যোগ দেন অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও। এ দিনে আনন্দ সম্মিলনের পাশাপাশি চলে সেবাব্রতী কাজ। এদিন দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয় ভালো খাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ।

রোগীদের দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। এভাবে আনন্দ-উৎসবের সঙ্গে সেবা, প্রীতি ও মমতার যোগ হয়। দিনটি লাভ করে পুরোপুরি উৎসবের মর্যাদা। সবার আনন্দ যোগে বড়দিন সার্থক ও মহিমান্বিত ।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

সবগুলো অনুচ্ছেদ একসাথে দেখেতে এখানে চাপ দান

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url