আমার শৈশব স্মৃতি রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
আমার শৈশব স্মৃতি বা তোমার শৈশব স্মৃতিবা ফেলে আসা দিনগুলিবা তোমার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলি
সূচনা ঃ মানুষের জীবনের যে কয়টি পর্ব আছে 'শৈশব' তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘শৈশব' মানুষের জীবনে আমৃত্যু এমন একটি প্রভাব বিস্তার করে রাখে যে তা সুযোগ পেলেই মানুষকে স্মৃতিতাড়িত করে। শৈশবের স্মৃতিচারণে মানুষ খুঁজে পায় তার জীবনের প্রথম দিককার সরল অনুভূতিগুলো। নির্মল ভালোলাগাগুলো মধুর স্মৃতি হয়ে মানুষকে সুখকর অনুভূতি প্রদান করে। শৈশব স্মৃতি তাই সবারই জীবনের একটি অমূল্য সম্পদ ।
শৈশব স্মৃতি ঃ শৈশবের কত স্মৃতি আমার মনজুড়ে আছে তা বলতে গেলে অনেক বলতে হবে। সব স্মৃতি যে মনে আছে তাও নয়। তবে আমার শৈশব ছিল সুমধুর। প্রথমে মনে পড়ে আমার পাঠশালার কথা। মনে পড়ে আমার সহপাঠীদের কথা। শিক্ষকদের কথা। সহপাঠীদের মধ্যে অরুণ ছিল দারুণ দুষ্ট। ওর দুষ্টুমীতে ক্লাসের সবাই খুব বিরক্ত ছিল। অন্যদিকে, স্যারদের মধ্যে খুব কড়া ছিলেন মমতাজ স্যার। মমতাজ স্যারের গলার স্বরটাই ছিল অদ্ভুত ধরনের। তিনি যখন কথা বলতেন তখন মনে হতো যেন বজ্র পড়ছে ক্লাসে। আমরা দারুণ ভয়ে ভয়ে থাকতাম তার ক্লাসে। অন্য স্যারদের পড়া না শিখলেও মমতাজ স্যারের পড়া রাত জেগে হলেও শিখে নিতাম।
আরো পড়ুন ঃ আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনা রচনা
না হলে দু হাতে দু কান ধরে বেঞ্চির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি' অরুণ তার প্রমাণ দিয়েছিল অনেকবার। একবারের ঘটনা এখনো খুব মনে পড়ে। মমতাজ স্যারের ক্লাস করছি আমরা। একসময় অরুণ বলে বসল যে তার প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে, তাই সে বাইরে যেতে চায়। স্যার অরুণের দুষ্টুমী সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার জন্যই হয়তো অরুণ এ ফন্দি এঁটেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই দেখা গেল যে, অরুণ দু হাতে চোখ ঢেকে উচ্চস্বরে কাঁদছে। স্যার তখন অরুণের কথা বিশ্বাস করলেন এবং তাকে বাইরে যেতে দিলেন। আমাদের সবাইকে বললেন, জেনেছ তো দুষ্টুমি করলে কী হয়, জরুরি বিষয়টিকে দুষ্টুমি মনে হয়। তাই অপ্রয়োজনে তোমরা কখনোই দুষ্টুমী করবে না।
স্যারের এই কথা এখনো আমার মনে গেঁথে আছে। হয়তো যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন স্মরণ থাকবে। অরুণটা যে এখন কোথায় আছে কে জানে। স্কুলের আরেকজন প্রিয় শিক্ষকের কথা প্রায়ই মনে পড়ে। তিনি বিজ্ঞান পড়াতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন যে, তোমরা কখনো জীবন্ত গাছে আগুন ছোঁয়াবে না। এদেরও প্রাণ আছে। এরা খুব কষ্ট পায়। স্যারের এই ধরনের কথাবার্তার কারণে তাকে ‘পাগলা স্যার' বলতাম আমরা। কিন্তু আজকে বুঝতে পারছি। স্যারের মনটা কত বিশাল ছিল ।
আরো কত যে স্মৃতি আছে শৈশবজুড়ে কয়টা বলব। খালাতো ভাই শরীফের কথা ভুলতে পারি না। শরীফদের বাড়ি গফরগাঁওয়ে, আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসল শীতে। আমাদের অনেক খেজুর গাছ ছিল। খেজুরের রস খাওয়ার জন্য খুব ভোরে ওঠে পড়তাম আমরা। আমরা সমবয়সীরা সবাই মিলে যেখানে যেখানে খেজুর গাছ আছে সেখানে যেতাম। কেউ যেন টের না পায় এরকমভাবে খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামিয়ে রস খেতাম। অন্যের গাছের রস খেতাম না, খেতাম আমাদের গাছেরই। কিন্তু আমার চাচা খেজুরের গুড় করবেন বলে রস খেতে দিতেন না।
একথা শুনে খালাতো ভাই শরীফ ঠিক করল যেকোনো উপায়ে হোক সে চাচার গাছের রস খাবে। যেই কথা সেই কাজ । ফজরের আজান পড়ার সাথে সাথে সে বিছানা ছেড়ে উঠল। গায়ে চাদর জড়িয়ে, মাফলার দিয়ে মুখ ঢেকে চাচার খেজুর বাগানের দিকে রওনা দিল। সঙ্গে আমাকে নিল। আমাকে বলল, বাগানের এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে। রস নিয়ে নেমে
সোজা সে আমার এখানে চলে আসবে তার পর দু জনে মজা করে খাওয়া যাবে। আমার ভয় হচ্ছিল কিন্তু শরীফ সাহস দিল। যা হোক, পরিকল্পনা মতো কাজ শুরু হলো। চতুর্দিকে নীরব নিস্তব্ধ প্রকৃতি। শরীফ আস্তে আস্তে গাছে চড়ল। যেই সে রসের হাঁড়ি নিয়ে নামতে থাকল অমনি চাচার কণ্ঠ শুনতে পেলাম। তিনি জোরে চিৎকার দিয়ে জানতে চাচ্ছেন গাছে কে? আমি ভীষণ ভড়কে গেলাম। ভয়ে আমার পা দুটো কাঁপছিল। চাচাকে ভীষণ ভয় পেতাম। সহজে তার ধারে কাছে যেতাম না। চাচার চেঁচামেচিতে বাড়ির লোকজন জেগে উঠল। শরীফ কিন্তু কোনো কথাই বলল না।
আরো পড়ুন ঃ চিড়িয়াখানায় একদিন রচনা
চুপচাপ গাছেতেই বসে রইল। হাতে তার রসের হাঁড়িটি ধরা ছিল। লম্বা বাশের আগা দিয়ে চাচা শরীফের পিঠে জোরে গুঁতো মারছিল। চাদর আর মাফলার দিয়ে শরীর ঢাকা বলে চাচা শরীফকে চিনতে পারছিল না। আমি দৌড়ে গিয়ে মাকে সব খুলে বললাম। মা ছুটে এসে চাচাকে সব খুলে বললেন। তবু চাচার রাগ কমছিল না। শরীফ আস্তে আস্তে গাছ থেকে নামলে মা তার কান দুটো ভালো করে মলে দিলেন। বেড়াতে এসে শরীফের এ নাজেহাল হওয়ার ঘটনা সেদিন আমার মনে দারুণ রেখাপাত করেছিল। তাই এখনো সে ঘটনা ভুলতে পারিনি। শৈশবের এমনি হাজারো স্মৃতির মধ্যে মনে পড়ে বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়ানোর ধুম, দুপুর রোদ্রে ঘুড়ি উড়ানো, বর্ষার ভরা নদীতে কলার ভেলা ভাসানো, স্কুলের ছেলেরা মিলে চড়ুইভাতি খেলার মতো কত ঘটনা ।
উপসংহার ঃ ‘শৈশব' মানুষের জীবনের সঙ্গে যেভাবে জড়িয়ে আছে তার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই শৈশবের স্মৃতি সত্যিই মধুর স্মৃতি। জীবনে বেঁচে থাকার প্রক্রিয়ায় এ মধুর স্মৃতি প্রাণ রসায়নের মতো।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url