ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
বা ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য
বা সমাজ উন্নয়নে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

সূচনা ঃ ছাত্রজীবন ভবিষ্যতের পল্লবিত সৌন্দর্যের পটভূমি। ছাত্রজীবনই হলো মানুষের প্রস্তুতিপর্ব। এর ওপর নির্ভর করে তার পরবর্তী জীবনের সফলতা-ব্যর্থতা। তাই ছাত্রজীবনই শৃঙ্খলা অনুশীলনের প্রকৃষ্ট সময়। প্রভাতে পূর্বদিগন্তে সূর্যোদয় এবং দিবাশেষে পশ্চিম- দিগন্তে সূর্যাস্ত সবই এক দুর্লঙ্ঘ নিয়মের অধীন। মানুষের জীবনেও প্রয়োজন সেই নিয়মের শাসন। মানুষের জীবনকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্ত করে তুলতে হলে প্রয়োজন উপযুক্ত শৃঙ্খলাবোধ। কেবল ব্যক্তিজীবনেই নয়, সামাজিক শান্তি ও কল্যাণের জন্য সর্বত্র চাই সামাজিক নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতিষ্ঠা ।

প্রধান কর্তব্য ঃ অধ্যয়ন বা লেখাপড়া করাই হচ্ছে ছাত্রজীবনে প্রধান কর্তব্য। সমস্ত রকমের ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে একাগ্রতার সাথে নানা বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে কর্মজীবনের জন্য উপযুক্ত হওয়াই এ সময়ের অন্যতম কাজ।

আরো পড়ুন ঃ দুর্নীতি দমনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা রচনা

চরিত্র গঠন ঃ মানবজীবনের প্রধান সম্পদ হলো চরিত্র। আর এ চরিত্র গঠন করতে হয় ছাত্রজীবনেই। শিক্ষিত হলে কী হবে, সৎ চরিত্রের অধিকারী না হলে জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তাই ছাত্রজীবনেই সৎ চরিত্র তথা সাধুতা, সত্যবাদিতা, আত্মসংযম, দেশপ্রেম, ধৈর্য প্রভৃতি গুণগুলো আয়ত্ত করে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য দেশের সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হতে হবে। সর্বদা সত্য কথা বলা, সৎ সঙ্গে চলা ও ভালো বই পড়ার মাধ্যমে এটা সম্ভব হতে পারে।

ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ ঃ সৌজন্য ও শিষ্টাচারের ছোঁয়াতেই ছাত্র হয় বিনীত, ভদ্র। নতুন প্রাণ-সম্পদে হয় গৌরবান্বিত। ছাত্রজীবনে গুরুজনদের যে শ্রদ্ধা করতে শিখল না, যার উদ্ধত অবিনীত ব্যবহারে শিক্ষক বিরক্ত, যার রূঢ় অমার্জিত আচরণে বন্ধুরা ক্ষুব্ধ- বেদনাহত, পরবর্তী জীবনেও তার একই আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তখন সে হয় অশুভ শক্তি, অকল্যাণের মূর্তপ্রতীক। হতাশা, ব্যর্থতার তিল তিল দংশন জ্বালায় সে নিজেকে নিঃশেষ করে। আর সমাজের বুকে ছড়িয়ে দিয়ে যায় অমৃতের বদলে বিষাদ। ছাত্রজীবনই মানুষের সুপ্ত সুকুমার বৃত্তি লালনের শুভক্ষণ। শিষ্টাচার, সৌজন্য তো তার মনুষ্যত্ব অর্জনেরই সোপান।

এরই মধ্যে আছে নিজেকে সুন্দর ও সার্থকতায় পরিপূর্ণ করে তোলার মহাশক্তি । শিষ্টাচার ও সৌজন্য প্রকাশের জন্য ছাত্রদের কিছু হারাতে হয় না, কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয় না, বরং এক মহৎ অঙ্গীকারে তার সমৃদ্ধ জীবন বিকাশের পথ প্রশস্ত হয়। বিনয়ী, ভদ্র ছাত্র শুধু শিক্ষকের স্নেহ-ই কেড়ে নেয় না, সে পায় শিক্ষকের আশীর্বাদ, পায় তার সাহায্য। সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অভাব ছাত্রকে অবিনীত, স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর করে। এই অভাবই তাকে ঠেলে দেয় অন্যায় আর অসত্যের চোরা-অন্ধকারে। সেই অন্ধকার শুধু ব্যক্তিকেই আচ্ছন্ন করে না। গ্রাস করে গোটা সমাজকে। 

ছাত্রজীবনে সামাজিক নেতৃত্ব ঃ সমাজের যেকোনো কাজে ছাত্রসমাজ নেতৃত্ব দিতে পারে। মহামারি প্রতিরোধ, বন্যার সময় জনসেবায় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্র-ছাত্রীরা শুধু অংশগ্রহণ করেই নয়, নেতৃত্ব দিয়েও এসব কাজ-কর্ম করতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশে সমাজসেবায় ছাত্রদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বন্যার্তদের সেবার জন্য ছাত্ররা কায়িক পরিশ্রমই করে না, তারা চাঁদা সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করে এবং কখনো কখনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে । এককথায় ছাত্রজীবনে সমাজসেবার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনস্বীকার্য ।

আরো পড়ুন ঃ অধ্যবসায় রচনা

বর্তমানে ছাত্রসমাজের উচ্ছৃঙ্খলতার কারণ ঃ সাম্প্রতিককালে ছাত্রসমাজের উচ্ছৃঙ্খলতায় সকলেই বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। বলাবাহুল্য, সেই উদ্বেগ অমূলক নয়। তাদের উচ্ছৃঙ্খলতার কলঙ্কিত স্বাক্ষর পড়ে পরীক্ষা হলে, বাসে, পথে-প্রান্তরে সমাজজীবনের অলিতে-গলিতে। ছাত্রসমাজ অগ্রযাত্রীর দল। তারা স্বভাবতই অগ্রসর হতে চায়, চায় কর্মব্যস্ততা। কিন্তু আজ তাদের সামনে অগ্রসর হওয়ার সকল পথ রুদ্ধ। কর্মহীনতার বিশাল অবকাশ তাদের মানসক্ষেত্রকে শয়তানের কারখানায় পরিণত করেছে। দেশব্যাপী আশাহীনতা তাদের নিক্ষেপ করেছে এক গভীর নৈরাশ্যের অন্ধকারে।

উপসংহার ঃ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বাংলাদেশ বর্তমানে সমাজ ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও শৃঙ্খলা অধিক দাবি করে। ছাত্রসমাজের এখন মনে রাখতে হবে যে, ছাত্রজীবনই হলো দায়িত্ববোধের বিকাশের কাল, সামাজিক কর্তব্যবোধে দীক্ষিত হওয়ার সময়। নৈরাশ্যের অন্ধকার কিংবা রুচিবিকৃতির কুয়াশা অপসারিত হয়ে শীঘ্রই নতুন আশা ও আদর্শের সূর্যোদয় হবে। এরপর আসবে নতুন দিন, নতুন জীবন। আমাদের ছাত্রসমাজ তাকে বরণ করার জন্য যেন প্রস্তুত থাকে।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url