একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা রচনা

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা

সূচনা ঃ নীল আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। সারাদিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টি। বিকেলের এক ঝলক রোদের পরে আবারো জমাট বাঁধতে শুরু করেছে মেঘ। বিষণ্ণ সন্ধ্যায় মেঘাবৃত আকাশ। মেঘের গুরু গর্জনে ও আকাশের বিদ্যুৎ-চমকানির মধ্য দিয়ে সমাসন্ন সন্ধ্যা তার আগমনবার্তা জানাচ্ছে; বর্ষণমুখর সন্ধ্যার এ এক দুর্লভ রূপ ।

প্রকৃতির বিষণ্নতা ঃ দুর্যোগপূর্ণ শ্রাবণ-সন্ধ্যা, গ্রামান্তের পথ নির্জন; প্রকৃতির কোল জুড়ে বিষণ্ণতা। কোথাও যেন প্রিয় হারানোর আর্তনাদ। বেদনায় অন্তলীন বাদল বাতাসের দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে তার চোখের জল ঝরে পড়ছে। প্রকৃতির এমন বেদনাবিধুর ক্ষণে কিছুতেই ঘর থেকে বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না। তাই পৃথিবীর এ বিষণ্ণবেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে ।'

বৃষ্টি পতনধ্বনির ভাষা ঃ ভাষাহীন অন্ধকারে বৃষ্টিপাতের অবিরাম শব্দ যেন বোবা প্রকৃতির বহুদিনের সংগীত মুখর অব্যক্ত ভাষা। যেন হঠাৎ নির্ঝরের স্বপ্ন ভাঙার পর অবিরাম নূপুরের ছন্দ তুলে বয়ে চলা। জানালার পাশে বসে বৃষ্টি পতনের এ ধ্বনি কার না হৃদয়ে সংগীতের সুর মূর্ছনা জাগায় । বিষণ্ণ প্রকৃতির বুকে এ রকম সংগীতের সুরলহরি সত্যিই রোমাঞ্চকর ।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য রচনা

মেঘদূতের ভাষা ঃ শ্রাবণ-সন্ধ্যার ভাষা যেন মেঘদূতেরই ভাষা। শ্রাবণ-সন্ধ্যা আমাকে জনশূন্য শৈলশৃঙ্গের শিলাতলে সঙ্গীহীন করে ছেড়ে দেয়। সেই পৃথিবীতে মন বনে বনে, গ্রামে গ্রামে, শৃঙ্গে শৃঙ্গে, নদীর কূলে কূলে ফিরতে ফিরতে অপরিচিত সুন্দরের পরিচয় নিতে উৎসুক হয়ে ওঠে। বৃষ্টি জন বিষণ্ন নির্জন পথে দু-একটি যানবাহনের তীব্র আর্ত হাহাকার, পথের পাশে ডোবার ধারে ব্যাঙের ডাক যেন এই শ্রাবণ-সন্ধ্যার হৃদয়ের ব্যথিত সংগীত ।

বর্ষণমুখর অন্ধকারের সৌন্দর্য উপভোগ ঃ এই শ্রাবণ-সন্ধ্যায় প্রকৃতির কবি রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা' নিয়ে বর্ষার কবিতাগুলো পড়তে ইচ্ছা হলো। এ সময় গৃহত্যাগী মন আমার মুক্তগতি মেঘপৃষ্ঠে নিয়েছে আসন। আমার ছিন্নবাঁধা পলাতক এ মন লঘুপক্ষ হংস বলাকার মতো মেঘের সঙ্গী হয়ে দিক হতে দিগন্তে ঘুরে বেড়ায়। কোথাও বা বৃষ্টিস্নাত শ্যামলী ধবলী গোহালে প্রত্যাগমনরত, কোথাও বা নিঃসঙ্গ পথিক ওপারে যাবে বলে বর্ষণ স্ফীত নদী তীরে মাঝিকে ঘন ঘন ডাকছে। বর্ষণ সন্ধ্যার এই ক্ষণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন -----

'এমন দিনে তারে বলা যায়

এমন ঘন ঘোর বরিষায়।'

আমি ঠিক বলতে পারি না, ঠিক ঝড়ো সন্ধ্যায় কবি শেলী 'Ode to the west wind' কিংবা বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ‘বর্ষা’ কবিতা লিখেছেন কি না। এ কথা সত্য যে, বর্ষার এ সন্ধ্যায় কবিতা লিখার জন্য মনে ভাব জাগে। কিন্তু স্যাঁতসেঁতে মন নিয়ে আমি যখন মেঘের কোলে ঘুরে বেড়াই সেই বিশেষ মুহূর্তে কেমন করে কবিতা লেখা যায় বুঝি না। আমার মন এ সময়ে শূন্য হয়ে যায়। অবশ্য এমনও হতে পারে যে, এই কাজল কালো মেঘের রূপ দেখে কুঁচবরণ কন্যার মেঘবরণ কেশ মনে পড়তে পারে। বাদলের ঝরঝর ধারা কারো অশ্রু ধারার মতো মনে হতে পারে এবং বিশেষ মনোভাবের বাহ্যিক প্রকাশ হতে পারে কবিতায়।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের নদ-নদী রচনা

কিন্তু আমার মনে কবিতা রচনার কোনো অনুপ্রেরণা দেখি না, কারণ আমি দেখছি সন্ধ্যার আকাশ মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে। নীল আকাশ বিলীন হয়ে গেছে। তারার মালা গেছে ছিঁড়ে। তার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। তবে কবিরা বর্ষার প্রেমিক। বর্ষার বর্ষণ ধারার মধ্যেও দৃষ্টি তাদের প্রসারিত। অনুভবের দশ-দিগন্ত হতে এ বর্ষণ সন্ধ্যায় কবির দু-একটি কবিতা মুক্তি পেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে বর্ষণমুখর অন্ধকারে সুন্দরের জোনাক জ্বলে এ কথা অস্বীকার করতে পারি না। বর্ষণমুখর সন্ধ্যার এ সৌন্দর্যমণ্ডিত রূপটি উপভোগ্য, ভুলে যাওয়ার নয়।

উপসংহার ঃ পরীক্ষার আর বেশি দেরি নেই। আলো জ্বালিয়ে পড়তে বসি। বাইরে অবিশ্রান্ত পত্র-মর্মরে বাদল-বাতাসের হা হুতাশ। পড়ায় আর মন বসে না। বৈষ্ণব কবির সুললিত কবিতাটির কথা আমার

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Anonymous
    Anonymous September 2, 2024 at 9:06 AM

    আর একটু শুদ্ধ হইলে ভালে হয়। ....

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url