একটি বইয়ের আত্মকাহিনি রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা

একটি বইয়ের আত্মকাহিনি রচনা

একটি বইয়ের আত্মকাহিনি

আমি একটি বই। নতুন মলাটে মোড়া ঝকঝকে পৃষ্ঠার আনকোরা বই আমি নই। সেলফের এক কোণায় আমি পড়ে আছি। অযত্নে, অবহেলায়। আমার পুরোনো পৃষ্ঠাগুলোতে বাসা বেঁধেছে ঘুণ পোকা। আমার সমস্ত শরীর ফুটো করে তারা যেন আমাকে ঠেলে দিতে চাইছে অকাল মৃত্যুর দিকে।

মাঝে মাঝে আমার ভাবতে ইচ্ছে হয়, আহা আমি যদি পৃথিবীর প্রথম বই হতে পারতাম। আমার পৃষ্ঠাগুলো হতো গাছের পাতার। আদিম মানুষ তার অনুভূতিগুলোকে নক্শার আদলের প্রাচীন অক্ষরে আমার গায়ে ফুটিয়ে তুলত। আমি হতাম ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল। আমার স্থান হতো খ্যাতনামা জাদুঘরে কিংবা মহাফেজখানায়। লোকে অরাক নয়নে আমাকে দেখত। দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন হিসেবে কত যত্ন হতো আমার। পণ্ডিতেরা আমাকে নিয়ে গবেষণা করতেন। গবেষকরা গবেষণা করে আমাকে গ্রহণ করতেন প্রাচীন সভ্যতার আদি গ্রন্থ নিদর্শন বলে।

আরো পড়ুন ঃ একটি বটগাছের আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা

কিংবা আমি যদি চর্যাপদ হতাম, তবুও পেতাম বিশেষ মর্যাদা। বাংলা ভাষার আদিমতম বর্ণমালা ধারণ করে আমার বুক গর্বে ফুলে উঠত। বছরের পর বছর ধরে আমাকে নিয়ে চলত অধ্যয়ন ও গবেষণা। গবেষকরা আবিষ্কার করতে চেষ্টা করতেন আমার জন্মকাল, লিপিকাল, ভাষাগত বৈশিষ্ট্য। তুলে ধরতেন সেকালের সামাজিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশের ছবি। আমার মধ্যে খুঁজে পেতেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিবর্তনের এক মাইল ফলককে।

তাই বলে তোমরা ভেব না, আমি নিতান্তই সাধারণ কোনো বই। একটা সময় গেছে যখন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, কিশোর-কিশোরীরা আমাকে খুব ভালোবাসত। আমার বুকে আমি ধারণ করে আছি বিশ্বের অসাধারণ কিছু রূপকথাকে। শিশুদের আমি নিয়ে যাই কল্পনার রাজ্যে যেখানে রাজকুমার আর রাজকন্যা থাকে। সেখানে দুষ্টু ডাইনি বুড়ি রাজকুমারীকে জাদুকরী ফল খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। সেখানে জাদুর বলে আকাশ থেকে নেমে আসে ডানাওয়ালা ঘোড়া।

সেখানে এক চোখা দৈত্যরা পাহারা দেয় গুপ্তধনের রাজ্য। আমার বুকে রয়েছে সাত চম্পা, সুয়োরানি-দুয়োরানি আর সুখ-দুখুর গল্প। এসব গল্প পড়ে ছোটরা ডানা মেলতে পারে কল্পনার রাজ্যে, ভালোবাসতে শেখে ভালো মানুষদের, উপকারী জীবজন্তুদের। আর ঘৃণা করতে শেখে খারাপ লোকদের, দুষ্টু জীবজন্তুদের। পড়তে পড়তে তারা আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। তাদের বুকের আশ্রয় পেয়ে আমার জীবন ধন্য হয়ে যেত।

আর সেই আমি এখন পড়ে আছি লাইব্রেরিও এক কোণায়। অনেকদিন আমাকে কেউ ছুঁয়েও দেখেনি। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে আমার প্রয়োজন হয়তো ফুরিয়ে গেছে। শুনেছি এখন শিশু-কিশোরেরা আর রূপকথা পড়তে চায় না, তাদের সময় কাটে টেলিভিশনে কার্টুন দেখে আর কম্পিউটারে ভিডিও গেম খেলে। যে লাইব্রেরির কোণায় আমি আছি সেখানে দিনকে দিন পাঠকের সংখ্যা কমে আসছে। যারা আসে তারা ভালোবাসে ঝকঝকে মলাটের থ্রিলার কিংবা সায়েন্স ফিকশন পড়তে।

আরো পড়ুন ঃ একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা

রূপকথার আশ্চর্য জগৎ তাদের মনকে আর টানে না। তারপরও আমি আশায় বুক বেঁধে পড়ে আছি, মানুষ আবার বুঝতে পারবে শিশুদের কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা ও ভালো-মন্দের ধারণা তৈরিতে রূপকথার অবদান। একদিন আবার হয়তো আমাকে বুকে তুলে নেবে নতুন কালের শিশু-কিশোররা। তাদের আবার আমি নিয়ে যাব রূপকথার জাদুময় কল্পলোকে। সেই সুদিনের আশায় আমি এখনো দিন গুনছি।

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url