বাদলা দিনে রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
বাদলা দিনে
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ছয় ঋতু হাজির হয় বিভিন্ন রূপের সৌন্দর্য নিয়ে। তারপরও যে ঋতুটি প্রকৃতিকে করে তোলে সজীব, সতেজ ও সবুজ তার নাম বর্ষা। বর্ষাকালে প্রকৃতির নতুন সাজে সাজবার আয়োজন আলোড়ন তোলে মানুষের মনে। একটানা বৃষ্টিতে মন হয়ে ওঠে উদাস, শ্রমবিমুখ । বাদল দিন বাঙালির জীবনে আনে ভিন্নতর আমেজ, আনে বৈচিত্র্য ।
বাদল দিন মানেই সারাদিন বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ। আর বৃষ্টি মানেই যেন হঠাৎ পাওয়া ছুটির স্বাদ দুপুর বেলার ইলিশ-খিচুড়ি, জমে যাওয়া বৃষ্টির পানিতে নৌকা ভাসানো আর সবাই মিলে বৃষ্টির জলে ভেজা । বাদল দিন তাই আর দশটা দিনের চেয়ে একেবারে আলাদা । শহুরে ছেলেমেয়েরা সকালবেলায় বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙতেই খুব খুশি। কারণ, স্কুলে যেতে হবে না, আজ ছুটি। বাসায় বসে টিভি দেখা, পরিবারের সাথে গল্প করা, বই পড়া, নিজের মতো করে একটু সময় কাটানো— বর্ষার আনন্দই আলাদা। কোথাও পাড়ার ছেলেমেয়ে মিলে বৃষ্টির পানি জমা মাঠে বা রাস্তায় নৌকা ভাসানো, কোথাও বৃষ্টির জলে লুটোপুটি খাওয়া ।
আরো পড়ুন ঃ বাংলা রচনা চা
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যারা স্কুলে গেছে, তাদের জন্যও দিনটা অন্যরকম। আজ অঝোর বৃষ্টি শিক্ষকদের মনেও দোলা দিয়ে গেছে । উপস্থিতি কম। পাঠদানে আর মন বসে না। তাই ক্লাসের বেশির ভাগ সময় কেটে যায় গান গেয়ে, গল্প বলে, আড্ডা দিয়ে। আজ টিফিনের ফাঁকে আর ছুটির পর সবাই মিলে বৃষ্টিতে দৌড়াদৌড়ি করার দিন ।
শহরের মধ্যবিত্ত আর দরিদ্র পরিবারগুলোর কিন্তু আজ বিড়ম্বনার শেষ নেই। ধনী পরিবারের সদস্যরাও বিপদে পড়েন যখন রাস্তায় জমে যায় হাঁটু বা কোমর পানি, তাতে গাড়ি চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষদের ভোগান্তি তো প্রতিপদেই। অফিসের যাওয়ার রিকশা বা অটোরিকশা পাওয়া যায় না। বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটুপানি ভেঙে বিরক্তিকর যাত্রা দিয়ে শুরু হয় তাদের বাদল দিন। শহরের খেটে খাওয়া মানুষদের আজ ভোগান্তির শেষ নেই। তাদের ঘরের চালের ফুটো দিয়ে সারাদিন পানি পড়ে। বৃষ্টির দিন বলে আজ মজুরেরও কাজ নেই।
তাদের কাছে বাদল দিন মানেই উপোসের দিন। যারা রাস্তার ধারে কিংবা স্টেশনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায় তাদের জন্য বাদল দিন অসহনীয় কষ্টের। তবে শহরের সুখী ও সুবিধাভোগী মানুষের কাছে বাদল দিন পরিবারের সাথে নিজের মতো করে কাটানোর একটা দিন, বাসায় বসে একসাথে ইলিশ-খিচুড়ি খাওয়ার দিন। আজ সারাদিনই আকাশ মেঘে ঢাকা। আজ বাদল দিন। আজ গান শোনার দিন
আরো পড়ুন ঃ জাতীয় ফুল শাপলা রচনা
‘মন মোর মেঘের সঙ্গী
গ্রামীণ জীবনে বাদল দিন মাঠে মাঠ থইথই পানি। কারো আজ কোনো কাজ নেই। গ্রামের পুরুষরা সবাই আজ একত্র হয়েছে মোড়লের দহলিজে। বসেছে পালাগানের আসর। গ্রামের বধূদেরও আজ প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজ থেকে মুক্তি মিলেছে। কেউ হয়তো নকশিকাঁথা তৈরি করছে, কেউ হয়তো শিকা বুনছে । গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আজ আনন্দের শেষ নেই। আজ পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি করার দিন । বাদল দিন মানে প্যাচপেচে কাদায় বৃষ্টিতে ফুটবল খেলার দিন, বাদল দিন মানেই কাদায় আছড় খেয়েও হেসে ওঠার দিন। আজ সীমাহীন মুক্তির দিন ।
কবির জন্য বাদল দিনই কবিতা লেখার দিন। তরুণ-তরুণীদের জন্য আজ রবীন্দ্রসংগীত শোনার দিন, কবিতা পড়ার দিন। বাদলা দিন মানেই সন্ধ্যায় সবাই মিলে ঝালমুড়ি খাওয়ার দিন।
বাদল দিন মানেই কদম ফুল ফোটার দিন। বাদল দিন মানেই সারাদিন মেঘের গুড়গুড় ধ্বনি, বৃষ্টির একটা নিক্বণের দিন। বাদল দিনে তাই সময় থমকে দাঁড়ায়, প্রতিদিনের ক্লান্তিকর যান্ত্রিক জীবনে বাদল দিন তাই নিয়ে আসে এক ঝলক স্বস্তির পরশ।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url