চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা
সূচনা ঃ বিশ্বসভ্যতা বিজ্ঞানের প্রভাবে অনেক দূর এগিয়েছে। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ভূমিকা ব্যাপক। বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতির ধারায় চিকিৎসাক্ষেত্রে এসেছে অকল্পনীয় পরিবর্তন। স্বাস্থ্যই সকল মুখের মূল- একথা খুবই পরিচিতি। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্রমোত্তর সফলতায় মানুষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণে বিজ্ঞান অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষের জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধি প্রশমিত হচ্ছে।
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ঃ প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সূচিত হয়। আর এ আধুনিক চিকিৎসার ধ্যান-ধারণা, কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানের ধারাবাহিক অবদানের ফলে কবিরাজি চিকিৎসার স্থানে হোমিওপ্যাথিক ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভব চিকিৎসার স্থানে হোমিওপ্যাথিক ও এলোপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভব ঘটে ও প্রসার লাভ করে।
▶▶ আরো পড়ুন ঃ সংবাদপত্র রচনা pdf | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
ফলে মানুষ প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন লতাপাতা, পানি-পড়া, দোয়া-তাবিজ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় এবং আধুনিক তথা বিজ্ঞান-উদ্ভূত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বিজ্ঞান বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য নানা ওষুধ আবিষ্কার করেছে। এগুলোর মধ্যে পেনিসিলিন, অ্যাসিপিরিন, ক্লোরোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
রোগ নির্ণয় ঃ রোগ নির্ণয় করাই রোগ নিরাময়ের পূর্ব ও প্রাথমিক শর্ত। সঠিক রোগ নির্ণয় করা না গেলে কোনো রোগের চিকিৎসা যথাযথরূপে করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়করণে বিজ্ঞান অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এক্স-রে (রঞ্জনরশ্মি), আলট্রাসনোগ্রাফি প্রভৃতি রোগ নির্ণয়কারী যন্ত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশসমূহকে দৃশ্যমান করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা বিজ্ঞানের একটি অসামান্য অবদান।
রোগ প্রতিরোধ ঃ রোগ নিরাময়ের চেয়ে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোগ প্রতিরোধ। রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে রোগের দুর্বিষহ ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানের আবির্ভাবের ফলে রোগ প্রতিরোধের বহুমুখী ব্যবস্থা আবিস্কৃত হয়েছে। যক্ষ্মা, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হাম, বসন্ত প্রভৃতি রোগের প্রতিরোধের জন্য টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। এগুলো আধুনিক বিজ্ঞানেরই অবদান। বর্তমানে ভয়াবহ এইডস রোগ-এর টিকা উদ্ভাবনে জোর প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।
রোগ নিরাময় ঃ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেরই আশীর্বাদ। প্রাচীন গাছ-গাছালির পরিবর্তে পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভৃতি মহৌষধের আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে কেবল বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতির ফলে। তা ছাড়া, নিত্যনৈমিত্তিক সাধারণ ছোটখাটো রোগ, যেমন— জ্বর, সর্দি কাশি, মাথা ধরা বা ব্যথা, জণ্ডিস গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদির জন্য আবিষ্কার করা হয়েছে নানা রকম ওষুধ। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী হেনরি ডেভিড বলেন, “ বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতায় অনেক বিস্ময়কর উপহার দিয়েছে।” আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা হলো এ বিস্ময়ের অন্যতম ।
▶▶ আরো পড়ুন ঃ ইন্টারনেট রচনা pdf | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
জটিল রোগ ঃ চিকিৎসাক্ষেত্রে অকল্পনীয় উন্নতি সাধনের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যোগসাজসের ফলে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মানুষ মুক্তি পাচ্ছে। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী রোগী আরোগ্য লাভ করে নতুন আশার আলো খুঁজে পাচ্ছে। অধ্যাপক কুরী ও মাদাম কুরী কর্তৃক আবিস্কৃত রেডিয়াম ব্যবহার করে ভয়ংকর দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার-এর চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরোগ্যলাভ করছে। এক কালের মহামারী রোগ বসন্ত। বর্তমানে এ রোগের হাত থেকে মুক্তির জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে ‘ভ্যাক্সিন' নামক টিকা। তা ছাড়া, বিজ্ঞানের আশীর্বাদের মানবদেহের হৃদপিণ্ড, কিডনি প্রভৃতি প্রত্যঙ্গ অন্য দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে মানুষের চেহারা বা আকৃতি পরিবর্তনের মতো দুঃসাধ্য কাজও এখন বিজ্ঞানের আশীর্বাদে সাধন করা যাচ্ছে।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বড় আশীর্বাদ ঃ বিশ্বসভ্যতার ক্রমবিকাশে বিজ্ঞান জন্ম দিয়েছে অসংখ্য বিস্ময়। অনেক দুঃসাধ্য ও অসাধ্য সাধনের রূপকার বিজ্ঞান। চিকিৎসাক্ষেত্রের বিজ্ঞান শুধু আশীর্বাদই বয়ে এনেছে। এ প্রসঙ্গে কিপলিং বলেন “ বিজ্ঞানের আশীর্বাদে বিশ্বমানবতা কখনো উল্লসিত হয় চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে শুধু আশীর্বাদ আর আশীর্বাদ।” প্রোটিন
সর্বশেষ অগ্রগতি ঃ জেনেটিক টেকনোলজির সদ্য উদ্ঘাটনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি শনাক্ত ও চিকিৎসা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে উপনীতি হয়েছেন। ক্লোনিং পদ্ধতিতেও চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা আমূল পরিবর্তনের আশা করছেন। কৃত্রিম রক্ত, প্রভৃতি আবিষ্কারেও বিজ্ঞানীরা প্রয়াস গ্রহণ করেছেন। টেস্টটিউব শিশুর জন্মদান বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে।
▶▶ আরো পড়ুন ঃ মোবাইল ব্যাংকিং রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
ব্যর্থতা ঃ বর্তমান মানব সভ্যতার হুমকি ‘এইড্স' রোগের চিকিৎসা আবিষ্কারে ব্যর্থতার সাথে সাথে সার্স ভাইরাস ও ইবোলা ভাইরাস বিজ্ঞানকে ফাঁকি দিয়ে মানুষকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এসব রোগের প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
উপসংহার ঃ যুগ ও কালের বিবর্তনের বিশ্বসভ্যতা দ্রুতলয়ে বিকশিত হচ্ছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ চিকিৎসাক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের এ অগ্রযাত্রায় মানুষ মৃত্যুকে জয় করতে না পারলেও হাতেগোনা কয়েকটি রোগ ব্যতীত অধিকসংখক রোগকে নিঃসন্দেহে জয় করতে পেরেছে। তবে ঐসব রোগের প্রতিষেধক-এর জন্য গবেষণা চলছে।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
সবগুলো ভাবসম্প্রসারণ একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url