বুদ্ধপূর্ণিমা উৎসব রচনা | বাংলা ২য় পত্র প্রবন্ধ রচনা
বুদ্ধপূর্ণিমা উৎসব রচনা
সূচনা ঃ বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা। এটি উদ্যাপিত হয় বৈশাখ মাসের পূর্ণিমার দিনটিতে কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সর্বত্র বৌদ্ধ সম্প্রদায় নানা উৎসব-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করে থাকে ।
বুদ্ধপূর্ণিমার ইতিহাস ঃ 'বুদ্ধপূর্ণিমা' নামকরণের পেছনে রয়েছে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ৬২৩ খ্রিস্টপূ র্বাব্দের বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে গৌতম বুদ্ধ নেপালের লুম্বিনী কাননে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল লুম্বিনী কাননের শাল বৃক্ষ ছায়ায় । বৌদ্ধধর্মের এই মহান প্রবক্তার কাছে জাতি, শ্রেণি ও গোত্রের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। মানুষ ও প্রাণীসহ সকল প্রাণসত্তার সুখ কামনাই ছিল তাঁর জীবব্রত। বুদ্ধ জীবনের পরম সত্য জানার জন্য ২৯ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন, বুদ্ধগয়ায় ছয় বছর নিরন্তর সাধনা করেন।
আরো পড়ুন ঃ
শেষে ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে তিনি বোধিবৃক্ষের তলায় ধ্যান করে বুদ্ধত্ব বা জ্ঞান লাভ করেন। এই বুদ্ধত্ব লাভের প্রেক্ষাপটেই জগতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন হয়। গৌতম বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পর সব ধরনের ক্লেশ থেকে জীবের মুক্তির পথ নির্দেশ করেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজা-প্রজা, ধনী-নির্ধন, কুলীন-অন্ত্যজ নির্বিশেষে সর্বস্তরের
মানুষের কাছে তার ধর্মতত্ত্ব ও নতুন ধর্মাদর্শ উপস্থাপন করেন। শেষে ৮০ বছর বয়সে ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন বা মৃত্যুবরণ করেন। জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও পরিনির্মাণ লাভ - - এই তিনটি প্রধান ঘটনা একই বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে ঘটেছিল বলে দিনটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত লাভ করেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এ দিনটির তাৎপর্য অনেক। এজন্য পূর্ণিমার রাত তাঁদের কাছে পবিত্র ও করুণাময় দিন হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে।
ধর্মীয় গুরুত্ব ঃ বুদ্ধের জীবনের প্রধান তিনটি ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় এ দিনের ধর্মীয় গুরুত্ব বেশি। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অঙ্গ বুদ্ধের উপাসনা। শহর ও গ্রামের বৌদ্ধ উপাসনালয়গুলোতে এদিনের প্রধান অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে বুদ্ধ পূজাসহ পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাট, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা ও নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পবিত্র মনে বুদ্ধানুস্মৃতি ও সংঘানুস্মৃতিতে মনোনিবেশ করাও এদিনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অঙ্গ।
বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধের মহাজীবনের তাৎপর্য ও অবদান নিয়ে আলোচনাসহ ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়। এদিন বৌদ্ধ মঠ ও বিহারগুলো মহামতি বুদ্ধের পূজার জন্য পূজার্থীদের মহাসমাবেশ ঘটে থাকে। সেই সঙ্গে ভিড় করে শিশু-কিশোররা। তারা নানা উৎসব আয়োজনে মাতে। এ উৎসবের মূল সুর হলো 'বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি'। তা দর্শনার্থসহ শিশু-কিশোরদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন ঃ
উৎসব ঃ পূজা ও আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বুদ্ধ-পূর্ণিমা উপলক্ষে সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে অনেক বৌদ্ধ বিহারে তিন দিন ধরে নানাধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন বৌদ্ধ পল্লিতে ও বিহারে এ উপলক্ষে মেলাও অনুষ্ঠিত হয়। এসব মেলার মধ্যে চট্টগ্রামের বৈদ্যপাড়া গ্রামের বোধিদ্রুম মেলা ঐতিহ্যবাহী মেলা হিসেবে পরিচিত। এ উৎসবের দিন সাধারণ সরকারি ছুটি থাকে। এ দিনে বেতার ও টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। সংবাদপত্রে এ উৎসবের দিনটি সম্পর্কে বিশেষ ক্রোড়পত্র, প্রবন্ধ বা ফিচার প্রকাশ করা হয় ।
উপসংহার ঃ বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। প্রতি সম্মিলনী, কুশল বিনিময়, শুভেচ্ছা জ্ঞাপন, মঙ্গল কামনা এ অনুষ্ঠানের বিশেষ অঙ্গ। এ অনুষ্ঠান সবার মধ্যে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন রচনা করে ।
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url