বাংলাদেশের পাখি রচনা ক্লাস ৩-১০ | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪

বাংলাদেশের পাখি রচনা

বাংলাদেশের পাখি

সূচনা ঃ এদেশের প্রকৃতিকে যা কিছু শোভাময় ও সৌন্দর্যময় করে তুলেছে তার মধ্যে পাখিদের স্থান অন্যতম। এদেশের প্রকৃতি মায়াময় ও আনন্দপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিচিত্র ও নানা বর্ণের, ভিন্ন আকৃতির গানের পাখির কলকাকলিতে। এদেশের মানুষ পাখির ডাক শুনে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। এদেশের সবুজ প্রকৃতি ও মানবজীবনের সঙ্গে পাখিদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।

বাংলাদেশের পাখি ঃ এদেশে প্রায় ৫৫০ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে ৪০০ প্রজাতির পাখি এদেশেই বসবাস করে এবং বাকিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে বেড়াতে আসে। দেশি পাখিগুলো এদেশের বনে-বাঁদাড়েই নীড় বাঁধে আর অতিথি পাখিরা শীতকালে সুদূর হিমালয় ও সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে, বসন্ত শেষ হলে আবার যথাস্থানে ফিরে যায়।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের মাছ রচনা

নানারকম পাখি ঃ আকৃতি-প্রকৃতি, অবস্থান ও আচরণভেদে বাংলাদেশের পাখিগুলোকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন :

  • ক. পোষমানা পাখি : পোষমানা পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ময়না, টিয়া, কাকাতুয়া, শ্যামা প্রভৃতি ।
  • খ. গায়ক পাখি : বাংলাদেশের অন্যতম গায়ক পাখি কোকিল সুন্দর ও মিষ্টি সুরে গান গায় ।
  • গ. শিকারি পাখি : শিকারি পাখিদের মধ্যে চিল, বাজ, ঈগল, মাছরাঙা, পেঁচা প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য ।
  • ঘ. জলচর পাখি : জলচর পাখিদের মধ্যে হাঁস, পানকৌড়ি, বক, বালিহাঁস, কাদাখোঁচা, গাঙচিল, চখাচখি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
  • ঙ. ঘরের পাখি : কবুতর, চড়ুই, ময়না, টিয়া ইত্যাদি ।

বাংলাদেশের অতি পরিচিত কয়েকটি পাখির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো :

কাক ঃ পাখিদের মধ্যে কাক অত্যন্ত চালাক ও দুষ্ট কিন্তু বুদ্ধিমান। এদের মধ্যে একতা খুব বেশি। পাখি হিসেবে কাক কিছুটা বেহায়া ও কদাকার । এর কণ্ঠও কর্কশ। এরা রান্নাঘরের কাছে অবস্থান নেয় এবং সারাদিন গৃহস্থদের জ্বালাতন করে। এদের জ্বালাতনে শস্য, মসলা কিংবা খাদ্যদ্রব্য রৌদ্রে দিয়ে লাঠি হাতে পাহারা বসাতে হয়। তবুও কাক আমাদের বন্ধু পাখি। কারণ এরা পচা ইঁদুর, ব্যাঙ ইত্যাদি যেখানে যা গলিত বস্তু থাকে তা সমস্ত খেয়ে প্রকৃতিকে পরিচ্ছন্ন রাখে ।

কোকিল ঃ কোকিল দেখতে কাকের মতো কালো তবে আকারে ছোট। কোকিলের সুকণ্ঠ মানুষকে মোহিত করে। ঋতুরাজ বসন্তকালেই কোকিল গান গায় ৷ তাই কোকিলকে ‘বসন্তের দূত' বলা হয়। কোকিল সুদর্শন পাখি নয়, এর গানই একে বিখ্যাত করেছে। মধুর স্বর ও শান্ত-নিরীহ স্বভাব কোকিলের বৈশিষ্ট্য। ডিম পাড়ার সময় কাকের বাসায় ডিম পাড়ে।

দোয়েল ঃ আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল মিষ্টি গানের পাখি। এরা সারা বছরই মিষ্টি সুরে ডাকে। তবে বসন্তকালে এদের মিষ্টিমধুর গানে প্রকৃতি মুখরিত হয়ে ওঠে। দোয়েল সাধারণত বাগানবাড়ি বা ঘরের আশপাশে উন্মুক্ত জায়গায় ঘাসের উপর বিচরণ করে। দোয়েল সারা বছরই দেখা যায়। এটি আমাদের সবচেয়ে পরিচিত পাখি ।

কবুতর ঃ কবুতর বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পোষমানা পাখি। পোষা কবুতর নানা বর্ণের হয়ে থাকে। তবে মুক্ত কবুতর একই বর্ণের। এদেরকে জালালি কবুতর বলা হয়। বাড়িতে ছোট খাঁচায় অনেকেই কবুতর পোষে ।

আরো পড়ুন ঃ গ্রীষ্মের একটি দুপুর রচনা

ময়না ঃ ময়না পাখি দেখতে খুব চমৎকার। কোকিলের মতো কালো তবে ঠোঁট হলদে বর্ণের। এরা বেশিরভাগ পাহাড়ি এলাকায় থাকে । ময়না পাখি অতি সহজে পোষ মানে এবং মানুষের মতো স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে পারে ।

টিয়া ঃ দেখতে খুব সুন্দর পাখি । টিয়া খুব দ্রুত উড়তে পারে। এদের শরীরের রং সবুজ, ঠোঁট দুটি টুকটুকে লাল। কিচিরমিচির শব্দে আকাশে দল বেঁধে যখন চলে তখন বেশ চমৎকার দেখায়। প্রশিক্ষণ দিলে অনেক টিয়া পাখি মানুষের মতো কথা বলতে পারে।

বুলবুল ঃ বুলবুলও গানের পাখি । বরই গাছ কিংবা আতা গাছের ডালে বসে এরা একটানা গান করে। এদের শরীরের রং কালো ও খয়েরিতে মেশানো ।

বাবুই ও চড়ুই ঃ বাবুইকে শিল্পী পাখি বলা হয়। তাল, খেজুর, বাবলা ও হিজল গাছে এরা ঝুলন্ত বাসা বেঁধে দক্ষ কারিগরের পরিচয় দেয়। এরা দলগতভাবে বাস করে। চড়ুই ঘরের চালে, ছাদের কার্নিশে বাসা বাঁধে।

শালিক ঃ শালিক আমাদের খুব কাছের পাখি। এরা ছোট আকৃতির পাখি। এরা ভীষণ চেঁচামেচি করে । চুপ করে বসে থাকা এদের স্বভাববিরুদ্ধ। ঘুঘু : ঘুঘু পাখি গ্রাম বাংলার সর্বত্রই চোখে পড়ে। এ পাখি সহজে পোষ মানে । এরা দেখতে যেমন সুন্দর, কণ্ঠও তেমনই আকর্ষণীয় । এরা আকারে মাঝারি ধরনের । ঘন বাগানে এদের বাস। ঘুঘু দলবেঁধে চলতে ভালোবাসে ।

চিল, বাজ ও শকুন ঃ সাহসী, হিংস্র ও প্রতিহিংসাপরায়ণ তিনটি পাখি হলো চিল, বাজ ও শকুন। চিল ও বাজ মাংসভোজী পাখি। এরা সাধারণত মাছ শিকার করে খায়। শকুনও মাছ খায়; তবে এরা মরা গরু, মরা ছাগল ও খায় ।

আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য রচনা

উপসংহার ঃ সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠা এসব পাখি আমাদের জীবনের সঙ্গে অতি নিবিড়ভাবে মিশে আছে। পাখি আছে বলেই সবুজ প্রকৃতি, নীল আকাশ, সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা আমাদের এত ভালো লাগে ৷

[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]

সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url