বাংলাদেশের মাছ রচনা | বাংলা ২য় পত্র রচনা ২০২৪
বাংলাদেশের মাছ
ভূমিকা ঃ বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। সবুজ শ্যামল এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী। এখানে নদী ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য হাওরড়-বাঁওড়, পুকুর, দিঘি, খাল-বিল ইত্যাদি। এসব জলাশয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য মাছ। মাছ বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি প্রিয় খাদ্য। কথিত আছে, মাছে ভাতে বাঙালি ।
মাছের প্রকারভেদ ঃ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রজাতিগত বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ অনন্য। এদেশের অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে রয়েছে ২৬০ প্রজাতির মাছ এবং ২৪ প্রজাতির চিংড়ি । মোহনা ও সমুদ্রে আছে ৪৭৫ প্রজাতির এবং ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি।
এদের কোনোটা খুব ছোট, কোনোটা মাঝারি, কোনোটা বড় এবং কোনোটা খুব বড়। কোনোটা দেখতে সুন্দর, দ্বার কোনোটাকে ভালো দেখায় না। বাংলাদেশে যেসব মাছ সবসময় পাওয়া যায়, এদের মধ্যে কৈ, টাকি, শিং, মাগুর, চিতল, বোয়াল, মৃগেল, কাতলা, টেংরা, ইলিশ, রুই, পাবদা, টাটকিনি, খলিশা প্রধান ।
আরো পড়ুন ঃ গ্রীষ্মের একটি দুপুর রচনা
মাছের আবাসস্থল ঃ মাছ জলজ প্রাণী । পানি ছাড়া মাছ বাঁচতে পারে না। সামুদ্রিক মাছ গভীর পানিতে বাস করে। যেসব জলাশয়ে স্রোত প্রবাহিত হয় সেসব জলাশয়ে রুই, কাতলা, মৃগেল প্রভৃতি মাছ পোনা ছাড়ে। এরা পুকুর ও দিঘির বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে না । রুই, কাতলা বা অন্যান্য বড় মাছের পোনা দিঘি ও পুকুরে ছাড়তে হয়। ইলিশ মাছ গভীর পানির মাছ। ইলিশ মাছ সমুদ্রের লোনা পানিতে থাকে। ডিম পাড়ার সময়ে এরা নদীতে চলে আসে। ডিম ছেড়ে তারা আবার গভীর সমুদ্রে ফিরে যায়। পুকুরে ইলিশ মাছ বাঁচে না ।
মাছের আকৃতি ঃ অধিকাংশ মাছের শরীরে আঁইশ থাকে। রুই, কাতলা, মৃগেল, ইলিশ, পুঁটি ইত্যাদি আঁইশযুক্ত মাছ। তবে কোনো কোনো মাছের আঁইশ নেই। যেমন : মাগুর, শিং, বাইম, আইড়, পাবদা, বোয়াল ইত্যাদি।
মাছের প্রকৃতি ঃ চঞ্চল প্রাণী মাছ এক জায়গায় স্থির থাকে না। এদিক-ওদিক সাঁতার কাটতে থাকে। পরিষ্কার পানি পেলে মাছের খুব আনন্দ হয়। তখন এরা কখনও ভাসে কখনও ডোবে। মাছের এরূপ খেলা দেখতে খুব ভালো লাগে ।
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য রচনা
মাছের খাবার ঃ প্রধানত শেওলা, পানা ও অন্যান্য গুল খেয়ে মাছ বেঁচে থাকে। পানির ছোট ছোট পোকামাকড়ও এরা খেয়ে থাকে। এ ছাড়া ভাত, কুঁড়া, ভুসি, খৈল, ঘাস ইত্যাদি মাছের প্রিয় খাদ্য। কিছু কিছু বড় মাছ ছোট ছোট মাছ খেয়ে থাকে ।
মাছের চাষ ঃ বর্তমানে বাংলাদেশের পুকুর ও দিঘিতে ব্যাপকহারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছের চাষ করা হচ্ছে। চাষকৃত মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, কার্প প্রভৃতি। এসব মাছের সফলভাবে চাষ বাংলাদেশের প্রাত্যহিক আমিষের প্রয়োজন পূরণ করছে এবং মাছ চাষিদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করছে।
বাংলাদেশের মাছের ঘাটতি ঃ আমাদের মৎস্য সম্পদ বহুবিধ কারণে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। কৃষিক্ষেত্রে যথেচ্ছ কীটনাশক ব্যবহার ও নদ-নদীতে কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপ মাছের উৎপাদন হ্রাসের প্রধান কারণ।
বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার উপায়সমূহ ঃ জাতীয় স্বার্থে দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষা অতীব জরুরি। এর অংশ হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তর বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ :
আরো পড়ুন ঃ বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা
- ক. বাণিজ্যিকভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছের একক ও মিশ্র চাষের সম্প্রসারণ।
- খ. কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে দেশীয় মাছের পোনা উৎপাদন ।
- গ. দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মুক্ত জলাশয়ে অভয়াশ্রম স্থাপন ।
- ঘ. মৎস্য সংরক্ষণ আইন যথাযথ প্রয়োগ ।
উপকারিতা ঃ পুষ্টির উৎস হিসেবে দেশীয় প্রজাতির মাছ, বিশেষ করে ছোট প্রজাতির মাছের ভূমিকা অত্যন্ত বেশি। এতে আছে দেহ গঠনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। প্রতি ১০০ গ্রাম আছে ১৪ থেকে ১৮ গ্রাম আমিষ থাকে, যা অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় বেশি। মাছের চর্বি অন্যান্য খাদ্যের চর্বির ন্যায় রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে না। মাছে পর্যাপ্ত ফসফরাস আছে যা নতুন কোষ সৃষ্টি ও দেহ বৃদ্ধিতে প্রয়োজন।
মাছের কাঁটায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি তাই ছোট মাছ কাঁটাসহ চিবিয়ে খেলে দাঁত ও হাড়ের গঠন ভালো হয়। সব মিলিয়ে দেহ গঠন এবং দেহকে সুস্থ-সবল রাখার জন্য মাছের পুষ্টির মূল্য অপরিসীম। মাছকে রূপালি ফসল বলা হয়। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই মাছের চাহিদা রয়েছে। তাই বাংলাদেশ সরকার লঞ্চ ও স্টিমারের সাহায্যে মাছ ধরে বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ব্যবস্থা করছে।
আরো পড়ুন ঃ আমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল রচনা
উপসংহার ঃ বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে মাছ। তাছাড়া আমাদের প্রাত্যহিক আহার্যের তালিকায় মাছের অবস্থান প্রথম স্থানে। শুধু বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর সব দেশেই মাছের কদর রয়েছে। বাংলাদেশে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছের চাষ করলে প্রচুর মাছ উৎপাদন সম্ভব হবে এবং এতে দেশের বৈদেশিক আয় বাড়বে।
[বিঃদ্রঃ-এটি নন্দন গাইড বই থেকে সংগৃহীত]
সবগুলো রচনা একসাথে দেখতে এখানে চাপ দিন
ফিউচার ড্রীম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url